সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ঘোনা কুচিয়ামারা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল খালেকের পদত্যাগের দাবীতে এলাকার বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কলেজে তালা লাগিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
রোববার (১৮ আগস্ট) সকাল ৯টায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কলেজের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর কুচিয়ারার বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি সমগ্র বাজার পদক্ষিণ শেষে কলেজ ক্যাম্পাসে এসে সমাবেশ করে।
অত্র কলেজের ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শিহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ছাত্র অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ছাত্র অভিভাবক আব্দুল জলিল, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীর আলম, সবুজ তালুকদার, শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সহকারী অধ্যাপক শামীম হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন রাকিব উদ্দিন ও পলি খাতুন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার পর থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে আওয়ামীলীগের পদ-পদবী ব্যবহার করে তিনি কলেজটিকে কুক্ষিগত করার জন্য আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের ছত্রছায়ায় ও আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা কলেজ পরিচালনার জন্য পকেট কমিটি গঠন করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কলেজটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।
অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হওয়ায় তিনি কলেজের প্রতিবাদী শিক্ষক-কর্মচারীদের তটস্থ করে রাখতেন। এতে তার ভয়ে প্রতিবাদী শিক্ষক-কর্মচারীরা সে সময় মুখ খুলতে সাহস পায়নি। তারা ছিলেন অসহায় ও নির্যাতিত। এমনকি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে অবৈধ শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর ১৫ আগস্টের সরকারি যে ছুটি বাতিল করেছেন তা মানেননি অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক। পক্ষান্তরে তিনি কলেজে না এসে সরকারের বাতিলকৃত ছুটি উপেক্ষা করে কলেজ বন্ধ রেখেছেন এবং অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের একটি কার্যদিবস বঞ্চিত করেছেন। কাজেই রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী এমন কলেজ অধ্যক্ষকে এলাকার ছাত্র-জনতা আর কলেজে দেখতে চায় না। অনতিবিলম্বে তাকে অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। নচেৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলবে। সেইসাথে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগনেতা আনোয়ারুল ইসলাম মাসুমসহ সকল সদস্যেরও পদত্যাগের দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে অধ্যক্ষ আব্দুল খালের বিরুদ্ধে যে সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা হলো-
১. বিগত ৮ বছরে নিয়োগ বাণিজ্য। ২. ২ জন প্রভাষকের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির কাগজপত্র স্বাক্ষরের জন্য যথাক্রমে ২৫,০০০/-(পঁচিশহাজার) ও ৩০,০০০/-(ত্রিশ হাজার) টাকা উৎকোচ গ্রহণ।
৩. জনবল কাঠামোর বাহিরে কলেজের দাতা সদস্য মরহুম গহির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মির্জার নিকট থেকে ৭,০০,০০০/-(সাত লক্ষ) টাকার নিয়োগ বাণিজ্য।
৪. কলেজ ডিগ্রী পর্যায়ে উত্তীর্ণ হওয়ায় লাইব্রেরিয়ান পদে তৎকালীন সভাপতিকে না জানিয়ে ১১,০০,০০০/- (এগারো লক্ষ) টাকার নিয়োগ বাণিজ্য। সেখানে সভাপতির চোখ এড়িয়ে রেজুলেশনে স্বাক্ষর।
৫. কলেজ ০২ জন ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ করে প্রায় ২৫,০০,০০০/-(পঁচিশ লক্ষ) টাকার নিয়োগ বাণিজ্য।
৬. বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে। তার অবর্তমানে জুনিয়র শিক্ষক(স্ত্রী আজমীরা খাতুন) দ্বারা কলেজ পরিচালনা ও সাধারণ শিক্ষকদের উপর খরবদারী করা।
৭. অধ্যক্ষের (স্ত্রী আজমীরা খাতুন)শিক্ষক কর্তৃক হিসাব রক্ষক ও প্রধান সহকারীর দৈনন্দিন কার্যক্রমে বাঁধা সৃষ্টি করে অধ্যক্ষের দপ্তর স্ত্রী আজমীরা খাতুনের দখলে নেয়া।
৮. বিগত বছরগুলোতে এইচএসসি ও ডিগ্রী ফরম ফিল-আপ কমিটি না করে ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ এবং নামমাত্র কলেজে জমা দেয়া।
৯. অধ্যাক্ষ বিগত বছরগুলোতে এইচএসসি ও ডিগ্রী ভর্তি কমিটি গঠন না করে এলাকার দরিদ্র ও সাধারণ ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে শিক্ষক স্ত্রীর সাথে যোগসাজসে ভর্তি বাণিজ্য।
১০. ক্রয়-বিক্রয় কমিটি না করে অধ্যক্ষ একক সিদ্ধান্তে ক্রয়-বিক্রয় করে ভূয়া ভাউচার বাণিজ্য।
১১. বার্ষিক আর্থিক পরিকল্পনা নেই এবং আয়-ব্যয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি নেই।
১২. কলেজের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের রক্ষণাবেক্ষন না করায় তাহা প্রায় পরিত্যক্ত।
১৩. ছাত্রীদের কমন রুমের দুরাবস্থা ও অব্যবস্থাপনায় তাহা ব্যবহার উপযোগী নয়।
১৪.অধ্যক্ষ কলেজে আয়কৃত নগদ অর্থ ব্যাংকে জমা না রেখে নিজের ব্যক্তিগত তহবিলে রাখেন।
১৫.কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়নে বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা গ্রহণ না করা।
১৬.বিধি অনুযায়ী স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতির লক্ষ্যে ভাউচার রেজিস্টিার নেই।
১৭.প্রায়ই অধ্যক্ষের স্ত্রী কর্তৃক সিনিয়র ও সাধারণ শিক্ষকগণ দূর্ব্যবহারের শিকার হন।
১৮. ভর্তির সময় ছাত্র/ছাত্রীদের ভর্তির বিষয়ে ৪র্থ বিষয় হিসেবে মনোবিজ্ঞান সাবজেক্টটি নিতে বাধ্য করা যাহা বোর্ডের কোন নিয়মে নেই।
১৯. কলেজের কাজে প্রধান সহকারীকে বিভিন্ন দপ্তরে ও বোর্ডে প্রেরণ না করে শিক্ষক -সম্পাদন করেন এবং ভুয়া ভাউচার বিল প্রদান করেন।
২০. বিগত বছরগুলোতে এইচএসসি ও ডিগ্রী পরীক্ষার প্রশংসাপত্র ও অর্জিত সার্টিফিকেট প্রদানে বিধি বহির্ভুতভাবে ও ভাউচার ছাড়া অধ্যক্ষের স্ত্রী আজমীরা খাতুনের দ্বারা সম্পাদন করেন। এক্ষেত্রে প্রতি জন ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট থেকে (৩০০+৫০০=৬০০) টাকা জোড়পূর্বক আদায় করেন। প্রায় ৬,০০,০০০/- (হয় লক্ষ) টাকার আর্থিক অনিয়ম সম্পাদন করেন।
২১. এইচ.এস.সি ও ডিগ্রীর প্রবেশ পত্র বিতারনে বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দেশনা না থাকলেও এলাকার দরিদ্র ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট থেকে তার স্ত্রী আজমীরা খাতুন অর্থ আদায় করেন। ছাত্র/ ছাত্রীরা টাকা দিতে না চাইলে পরীক্ষার হলের বাইরে এক ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখা এবং ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর কম দেয়ার হুমকী দেন আজমীরা খাতুন।
২২. বিভিন্ন সময়ে গঠিত গভর্নিং বোড়ি নিজের সুবিধামতো সদস্য বারা এবং কোন প্রকার নিয়মনীতি অনুসরন না করা।
২৩. কলেজের দাতা সদস্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অভিভাবক সদস্য সংশ্লিষ্ট পক্ষ সমূহের সাথে আলোচনা না করেই গঠন করেন।
২৪. কলেজের শরীর চর্চা শিক্ষককে নিজের আয়ত্ত্বে রেখে তার সাথে পরামর্শ করে বছর উল্লেখিত অনিয়মগুলো করেন। এক্ষেত্রে শরীরচর্চা শিক্ষক গত ৮ বছরে বা তারও অধিক সময় ধরে একটি বারের জন্যও শিক্ষার্থীদের শরীর চর্চা করায় নাই।
২৫. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক পর পর কেউ দুই বার শিক্ষক প্রতিনিধি হতে পারবেন না মর্মে সরকারি আদেশ থাকলেও কলেজের ২য় শ্রেণির শরীরচর্চা শিক্ষক আবু সাইন ও মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক আজমীরা খাতুনকে প্রায় ৭-৮ বছর শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে বহাল রাখেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আজমীরা খাতুন বর্তমানেও শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে বহাল আছেন।
২৬. অধ্যক্ষ সকল শিক্ষকদের মতামত না নিয়ে একক সিদ্ধান্তে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন না কর এবং মনগড়াভাবে তার সুবিধা মতো কমিটি গঠন করেন।
২৭. কলেজের সকল প্রকার কার্যক্রম মনোবিজ্ঞান শিক্ষকের মাধ্যমে পরিচালনা করেন।
২৮. শিক্ষক কর্মচারীদের প্রাপ্য যে সরকারী পাওনা একক ভাবে অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন।'
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
ঘোনা কুচিয়ামারা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবীতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ https://corporatesangbad.com/479073/ |