সিংগাইরে নিরাপত্তাহীনতায় আত্মগোপনে জনপ্রতিনিধিসহ আ.লীগ নেতাকর্মীরা

Posted on August 17, 2024

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও হামলার শিকার হয়ে আত্নগোপনে রয়েছে জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও হামলার শিকার হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা পাননি বলে জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ। এদিকে নাগরিক সেবা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিও দাবি করেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগন। এছাড়া নতুন বাংলাদেশ গড়তে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করা জরুরী প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

যদিও ইতিমধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা ও উপজেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা তাদের কর্মী সমর্থকদের প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছেন- "অন্যায়ভাবে কারো বাড়ি হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা যাবে না"। তার পরেও দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কতিপয় দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের অফিস কিংবা ঘরবাড়ি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করার অভিযোগ ওঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, গত ৫ আগষ্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সাথে সাথে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের অফিস ও বাড়িতে হামলা এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সায়েদুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রমিজ উদ্দিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসাঃ আনোয়ারা খাতুন, পৌর মেয়র আবু নাঈম মোঃ বাশার, কাউন্সিলর ও বেশির ভাগ ইউপি চেয়ারম্যানসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আত্মগোপনে চলে যান । এতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ওয়ার্ডের নাগরিকদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে । ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের মধ্যে সদর ইউনিয়ন ছাড়া বাকি সবগুলো ইউপি চেয়ারম্যানই আওয়ামীলীগ সমর্থিত। এর মধ্যে বলধারা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মাজেদ খান পদত্যাগ করে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেন । ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ হজরত আলী। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর থেকে গা ঢাকা দেয়া ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকায় রয়েছেন- মো. রমজান আলী, দেওয়ান জিন্নাহ লাঠু, মোঃ শওকত হোসেন বাদল, ইঞ্জি: শাহাদৎ হোসেন, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম ভূইয়া, মোঃ আবুল হোসেন মোল্লা ,গাজী কামরুজ্জামান, দেওয়ান মো. রিপন ও আব্দুল হালিম। এসব জনপ্রতিনিধিরা পরিষদে না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুসনদ, বাসাবাড়ির নকশা অনুমোদনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা কার্যক্রম। বেশীরভাগ ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সেবাগ্রহীতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিষদে চেয়ারম্যান না থাকায় নাগরিক সেবা নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন । এ জনদুর্ভোগ নিরসনে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দ্রুত কার্যালয়ে ফেরার দাবীও জানান তারা।

এদিকে, আত্নগোপনে থাকা একাধিক জনপ্রতিনিধির সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তারা জানান, নাগরিক সেবা দিতে এসে তাদের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে। ভুক্তভোগী একাধিক জনপ্রতিনিধি‘র ঘর-বাড়ি ভাংচুরসহ অফিসে লুটপাট চালানো হয়েছে। ফোন করেও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা পাননি বলে একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা জানান। অসিফিয়াল কার্যক্রম ও নাগরিক সেবা দিতে তারা সেনা সদস্য কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি রেখে নিরাপত্তা দাবী করেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগন।

এ প্রসঙ্গে চান্দহর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শওকত হোসেন বাদল বলেন, ক্ষমতা পরিবর্তনের সাথে সাথে আমার ইউনিয়নের ৪-৫ টি বাড়ি ভাংচুরসহ সিরাজপুর বাজারের ৮ টি দোকান লুটপাট করা হয়েছে। সেই সাথে আমার অফিসে ঢুকে দুর্বৃত্তরা কয়েকটি ক্রেষ্ট ও ছবি ভাংচুর করছে। সরকারিভাবে নিরাপত্তা না দিয়ে আমাকে অফিস করতে বলা হয়েছে। অফিসে কর্তব্যরত অবস্থার ছবি পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে ইউনিয়ন পরিষদে না বসলেও নাগরিক সনদপত্রসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজ স্বাক্ষর করছেন বলেও জানান তিনি। ধল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, গত ৬ আগষ্ট সন্ধ্যায় ধল্লা বাজার সংলগ্ন আমার ব্যবসায়িক অফিস ভাংচুরসহ লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। সেই সাথে ভগ্নিপতির দোকান লুটপাট করা হয়। তার আগের দিন গভীর রাতে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খানের মালিকাধীন ‘‘পল্লী উন্নয়ন সংস্থার’’ অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরকম কয়েকটি তান্ডবলীলার বিষয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়ে ফল পাননি বলেও ওই চেয়ারম্যান ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে এ রকম ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় আতংক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে সিংগাইর উপজেলা পরিয়দ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোঃ সায়েদুল ইসলা বলেন, উপজেলা পরিষদের জানালার গ্লস ভাংচুর করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নানের গাড়ি ও পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদের বাড়ি। নতুন বাংলাদেশ গড়তে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করা জরুরী প্রয়োজন বলে এ উপজেলা চেয়ারম্যান মনে করেন।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার বসু বলেন, জনপ্রতিনিধিরা অফিসে বসে নাগরিকদের সার্ভিস দিবেন এমনটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে । অনুপস্থিত থাকলে সেটা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। কোনো জনপ্রতিনিধি নিরাপত্তাহীনতায় থাকলে আর্মি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে পারেন।