গারো পাহাড়ে অবৈধভাবে বিদ্যুতের সংযোগ, হুমকিতে বন্যপ্রাণী

Posted on August 17, 2024

মোঃ শরিফ উদ্দিন, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি: নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শেরপুরের গারো পাহাড়ে দেদারসে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে এসব সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়েছে বন্যপ্রাণী। একসময় যেখানে বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণ ছিল, সেখানে দখলবাজরা ঘর-বাড়ি নির্মাণের পর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। এখন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য করার দাবি পরিবেশবাদীদের। আর বন বিভাগ চাইলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়ে গারো পাহাড়। বন বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ১৯ হাজার ২৭৫ একর বনভূমির মধ্যে দুই হাজার ৩৭ একর বনভূমি বেদখল হয়ে আছে।

জানা গেছে, একসময় পাহাড়জুড়ে দেখা যেত বহু টিলা। সে সময় বনের ভেতরে বিভিন্ন বন্য প্রাণী ছিল। তবে ধীরে ধীরে মানুষ টিলা কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করে, বন ধ্বংস করে চাষাবাদ শুরু করে। এর ফলে কমতে থাকে বনের ভূমি। এভাবেই কেউ ৩০ বছর কেউবা ৪০ বছর ধরে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। দখলকারীরা প্রথমে পাহাড়ি টিলা কেটে ও জঙ্গল পরিষ্কার করে ছোট পরিসরে ঘর তোলেন। পরে ধীরে ধীরে অবৈধ বসতির সম্প্রসারণ করতে থাকেন। তারা কোনো নিয়ম না মেনে অর্থের বিনিময়ে বনের ভেতরে অবৈধ ঘরবাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে বসবাস করছেন। বনের ভেতরের অংশ আলোকিত থাকায় বন্য প্রাণীরা বিভিন্ন দিকে চলে যাচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে তাদের জীবন। একদিকে বন উজাড়, অন্য দিকে বিদ্যুতের আলো, বন্য প্রাণীরা দিশেহারা হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। তাদের তাণ্ডবে প্রায়ই মানুষ মারা যাচ্ছে। বনের মধ্যে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে এরই মধ্যে বন্য হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ে দখলদারদের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাশাপাশি মুসলিম দখলদার রয়েছেন।

ঝিনাইগাতীর পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা মিস্টি মারাক বলেন, ‘কারেন্ট (বিদ্যুৎ) নিতে আমগর (আমাদের) তেমন কোনো কাগজপাতি লাগে নাই। খালি আইডি (ন্যাশনাল আইডি) কার্ড ও ছবি লাগছে। চার হাজার টাকা ও এসব কাগজপাতি দেওনের (দেওয়ার) এক সপ্তাহ পর খুঁটি, তারসহ সব গাড়ি দিয়ে এসে পড়েছে।’

অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য করার দাবি জানিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, বনের জমিতে বাড়ি-ঘর করা অবৈধ। সেখানে জমির কাগজপত্র না দেখে কীভাবে বন দখলকারীদের প্রত্যেকের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে এসব সংযোগ দেওয়ার ফলে; পাহাড়ে এখন আগের রূপ নেই। বন্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল, মারাত্মক হুমকিতে আছে জীববৈচিত্র্য। এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা আশা করছি।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, গারো পাহাড়ের বালিজুড়িতে যেখানে বন্যহাতি মারা হয়েছিল; সেখানে সরেজমিনে আমি গিয়েছিলাম। ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েই বেশির ভাগ হাতি মারা হয়। হাতি হত্যার দায়ে কারাভোগও করেছে অভিযুক্তরা। বনে বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে এখানে অনেক প্রাণী মারা যাচ্ছে। যার কারণে হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।

সম্প্রতি এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি শেরপুরের জেনারেল ম্যানেজার মো. আলী হোসেন বলেন, বন বিভাগ চাইলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।