দুইদিনেও পৌঁছেনি চেয়ারম্যানের মরদেহ

Posted on August 12, 2024

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার স্থানীয় একটি বাজারে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ওরফে ছানা (৫০) নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।

গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মধুর বাজারে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। টানা চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

সিরাজুল ইসলাম পাঁচগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মধুর বাজারে মহেশ দাস নামের একজনের দোকান লুট করা হয়। এ নিয়ে বাজারে উত্তেজনা ছিল। শুক্রবার সকালে মধুর বাজারে লুটের অভিযোগে রক্তা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাই কেওলা গ্রামের ছুনু মিয়ার কথা–কাটাকাটি হয়। কথা–কাটাকাটির বিষয়টি জানাজানি হলে কেওলা ও সারমপুর এবং রক্তা গ্রামের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এ সময় রক্তা গ্রামের বিএনপি নেতা পিন্টু সুলতানের নেতৃত্বে এক পক্ষ এবং কেওলা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান মিয়া ও চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে অপর পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র ছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি বিনিময় হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হন।

গুরুতর আহত অবস্থায় পাঁচগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামকে প্রথমে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ও পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঐদিন বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে তার মৃত্যু হয়। আহত ব্যক্তিদের রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে মৌলভীবাজার ও রাজনগরের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। চেয়ারম্যান নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ হতে পারে বলে স্থানীয় লোকমুখে আশঙ্কা করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা আহমেদ ফয়সল জামান বলেন, হাসপাতালে ৫২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৭ জন ভর্তি আছেন। চেয়ারম্যান (সিরাজুল ইসলাম) গুলিবিদ্ধ ছিলেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা গেছেন।

নিহত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের চাচাতো ভাই দেওয়ান মিয়া জানিয়েছেন, প্রতিপক্ষ তার ভাইকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের সব দোকান লুটপাট করে নিয়ে গেছে।

অপর দিকে পিন্টু সুলতান দাবি করেছেন, তিনি তার আইসক্রিম কারখানাতে কাজ করার সময় সারমপুর ও কেওলার লোকজন মধুর বাজারে এসে হামলা চালিয়েছে। তাঁরা হামলাকারীদের প্রতিহত করেন।

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা বলেন, পূর্বের দ্বন্দ্বের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। গুলাগুলিও হয়েছে। চেয়ারম্যান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী আছে। দুই দিন গত হলেও নিহত চেয়ারম্যানের মরদেহ সোমবার আজও এসে পৌঁছায়নি, স্বজনরা মরদেহের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে।