সিংগাইরে পেঁপে চাষে স্বাবলম্বী হাজারো চাষী, ভালো দামে চাষীদের মুখে হাসি

Posted on August 10, 2024

সাইফুল ইসলাম তানভীর, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সিংগাইরে পেঁপের আবাদ বাড়ছে। পেঁপে চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন বিদেশ ফেরত এবং শিক্ষিত যুবকসহ হাজারো চাষি। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় নিয়মিত চাষিদের সঙ্গে চাকরিজীবী এবং অন্যান্য পেশায় যুক্ত অনেকেই সহায়ক উপার্জনের পথ হিসেবে পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্যমতে, সিংগাইরে এ বছর ৭৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের পেঁপে চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে উপজেলা থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকারও বেশি পেঁপে বিক্রির আশা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিংগাইর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা তুলনামূলক উঁচু হওয়ায় এখানকার কৃষকদের সবজি চাষে আগ্রহ বেশি। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁপে চাষে জমি প্রস্তত থেকে শুরু করে গাছ থেকে পেঁপে তোলা পর্যন্ত বিঘাপ্রতি প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। দাম ভালো থাকলে বিঘাপ্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার বেশি পেঁপে বিক্রি করা যায়। এ কারণে উপজেলার প্রায় সব কটি ইউনিয়নেই কমবেশি পেঁপের আবাদ হয়ে থাকে। এ ছাড়া, চাষিদের পেঁপে জমি থেকে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে জমি থেকেই পেঁপে কিনে নিয়ে যান। ঢাকাসহ দেশের সব জেলার সঙ্গে সিংগাইরের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই এলাকার পেঁপের চাহিদা রয়েছে। সিংগাইরে উৎপাদিত পেঁপে জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে।

উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের বাহাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং গোলাইডাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পেঁপেচাষি আমজাদ হোসেন (৩৭) বলেন, ‘আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি তিন-চার বছর ধরে পেঁপে চাষ করে আসছি। এতে আমি ভালোই লাভবান হয়েছি। এ বছরও চার বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। পেঁপে মাত্র বিক্রি শুরু করেছি। বর্তমানে পাইকারি বাজারে মণপ্রতি ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে পেঁপে বিক্রি করছি। বর্ষায় ক্ষতি না হলে এ বছরও প্রায় ছয়-সাত লাখ টাকার মতো পেঁপে বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’

উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের পেঁপেচাষি মো. মাসুম (৩৮) বলেন, ‘লেখাপড়া বেশিদূর করা হয়নি। ছোটখাটো ব্যবসা করতে গিয়ে সফল হতে পারিনি। এখন আমি পেঁপে চাষ করছি। এ থেকে উপার্জিত অর্থে চলে আমার সংসার। চলতি মৌসুমে আট বিঘা জমিতে পেঁপের আবাদ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। বিক্রি মাত্র শুরু হয়েছে। জমি থেকেই পাইকাররা পেঁপে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছি, বাজার ভালো থাকলে এবার প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারব।’

একই এলাকার পেঁপেচাষি হোসেন বেপারি (৫২) বলেন, ‘গাজরের পাশাপাশি আমাদের এই অঞ্চলে এখন পেঁপে চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতি বিঘায় সব মিলিয়ে আমাদের খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আর বিঘায় ৩০০ থেকে ৩৫০ গাছ লাগানো যায়। মৌসুমের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁপে পাইকারি বিক্রি হয় গড়ে ২০ থেকে ৪০ টাকায়। আর পাইকাররা ক্ষেত থেকে কিনে নিয়ে যান বলে আমাদের তেমন কষ্ট করতে হয় না।’

পেঁপে কিনতে আসা পাইকার সোহরাব হোসেন বলেন, ‘সিংগাইরে প্রচুর সবজির আবাদ হয়ে থাকে। একেক মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন সবজি আবাদের কারণে এ অঞ্চলের সবজির কদর দেশ জুড়ে। বর্তমানে আমি প্রতিদিন কিটিংচর কাঁচামালের আড়ত ও জয়মন্টপ বাজার থেকে পেঁপে কিনে তা ঢাকা ও গাজীপুরে বিক্রি করছি। সিংগাইরের পেঁপের স্বাদ ও আকার ভালো হওয়ায় এর চাহিদা বেশি; আড়তগুলোয় খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়।’

সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলায় চার হাজারের বেশি কৃষক পেঁপে চাষ করছেন। দিন দিন পেঁপেচাষির সংখ্যা বাড়ছে। এই মৌসুমে সিংগাইরে প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। পেঁপের ফলনও খুব ভালো হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পেলে উপজেলা থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার পেঁপে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’