জনরোষ এড়াতে ঝিনাইদহের ৭১২ জনপ্রতিনিধি পালিয়েছেন

Posted on August 6, 2024

আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি পালিয়ে গেছেন। জনতার গন আন্দোলনে তীব্র জনরোষে এ সব জনপ্রতিনিধি পালিয়ে গেছেন বলে জেলা প্রসাশনের স্থানীয় সরকার বিভাগ সুত্রে জানা গেছে। ফলে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা মানুষ সেবা পাচ্ছেন না।

এরমধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হিরণ জনরোষে আক্রান্ত হয়ে নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত তার লাশ প্রকাশ্যে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জেলার বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি গা ঢাকা দিয়েছেন। অনেকের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী জনগনের ধাওয়া খেয়ে অনেকটা দিগম্বর হয়ে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা পান। সারা জেলা থেকে এমন আতংকজনক খবর আসার কারণে জেলার ৬ উপজেলা চেয়ারম্যান, ৬ পৌর মেয়র মেয়র, ভাইস চেয়ারম্যান, ৬৬টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বেশির ভাগ ইউপি মেম্বার গা ঢাকা দিয়েছেন।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তরের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলা ও পৌর মেয়রসহ জেলায় সর্বমোট ৯৩৭ জন জনপ্রতিনিধি আছেন। এরমধ্যে ৬ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ১২ জন ভাইস চেয়ারম্যান, ৬ জন পৌর মেয়র, ৩৬ জন কাউন্সিলর, ৬৭ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ৮০৪ জন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিঞা খুরশিদ আলম ছাড়া ৬৬ জন চেয়ারম্যানই মঙ্গলবার অফিস করেননি। ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদি হিজল মঙ্গলবার অফিস করেনি। সোমবার রাতে তার বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুদ্ধ জনতা। এ করণে তিনি গা ঢাকা দিতে পারেন বলে অনেকেই মনে করছেন। হরিণাকুন্ডু পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়র ফারুক হোসেনের চেয়ার ফাঁকা। ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক। শৈলকুপা পৌরসভার মেয়র কাজী আশরাফুল আজমকে অফিসে দেখা যায়নি। কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম অনেক আগেই পালিয়ে গেছেন।

জেলার বিপুল সংখ্যক জনপ্রতিনিধিদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ সাইদুল আলম জানান, চরম দলীয়করণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, পেশি শক্তি প্রদর্শন ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে এসব জনপ্রতিনিধি জনরোষের শিকার হয়েছেন। এছাড়া জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারাও এই জনরোষের কারণ বলে তিনি মনে করেন।

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রসাশকের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রথিন্দ্রনাথ রায় জানান, তিনিও এমন কথা শুনেছেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদের অনেক সদস্য আছেন যারা প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আপাতত তারাও দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে সরকার গঠন হলে দ্রতই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন।