শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরছেন না, বিবিসিকে জয়

Posted on August 6, 2024

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনার। এরপর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসিকে বলেছেন, তার মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) এতোটাই হতাশ যে তার কঠোর পরিশ্রমের পরও কিছু লোক তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছেন।’

সেমবার (৫ আগস্ট) বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মি. ওয়াজেদ এসব কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় এখানেই শেষ। আমার পরিবার এবং আমি – আমাদের যথেষ্ট হয়েছে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে সোমবার কারফিউর মধ্যেও ঢাকায় লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামে। এক পর্যায়ে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দিল্লি চলে যান। এরপরই গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সাধারণ মানুষের দখলে চলে যায়।

শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে নির্বাচিত হয়েছিলেন, আবারও এটা করবেন কি না এমন প্রশ্ন করা হয় ওয়াজেদকে।

তিনি বলেন, “না, আমার সন্দেহ আছে এ বিষয়ে। সত্তরের ঘরে বয়স তার। তিনি এতোটাই অসন্তুষ্ট যে দেশের উন্নয়নের জন্য এতো কঠোর পরিশ্রম করেছেন যেটাকে সবাই মিরাকল বলে। এরপরও একটা ছোট্ট অংশ তার বিরুদ্ধে গিয়েছে, এমন বিক্ষোভ করলো…। আমি মনে করি তিনি আর এসবে নেই। আমার পরিবার ও আমিও নেই, যথেষ্ট হয়েছে।”

রোববার থেকেই শেখ হাসিনা পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছিলেন জানিয়ে ওয়াজেদ বলেন, “পরিবারের অনুরোধে নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি দেশত্যাগ করেছেন।”

“তিনি খুব অসন্তুষ্ট, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গত ১৫ বছরে তিনি বাংলাদেশের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন।” এটা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হতো। দরিদ্র দেশ ছিল, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হতো। এখন এ দেশকে এশিয়ার উদীয়মান টাইগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি খুবই অসন্তুষ্ট,” ওয়াজেদ।

বিরোধীদল ও বিক্ষোভকারীদের কঠোরভাবে দমন করা অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে ওয়াজেদ বলেন, “শুধুমাত্র গতকালকেই ১৩ জন পুলিশকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে মারা হচ্ছে। যখন উচ্ছৃঙ্খল জনতা মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলে? পুলিশ এমন পরিস্থিতিতে কী করতে পারে বলে আপনি আশা করেন?”

ঢাকায় কারফিউ থাকলেও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে আন্দোলনকারীদের সাথে বিক্ষোভে যোগ দিতে বিবিসির এমন প্রশ্নে জয় বলেন, “বাংলাদেশ আঠার কোটি মানুষের দেশ। রাস্তায় নামা মানুষের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে বড় কোনো সংখ্যা নয়।”

“এটা ছোট্ট একটা গ্রুপের কণ্ঠ। পরবর্তী কয়েক দিন, কয়েক বছরে আপনি এর ফলাফল দেখবেন। সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থমকে গেছে। বাংলাদেশ আরেকটা পাকিস্তান হিসেবে গড়ে উঠবে।”

রাজনৈতিক কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা কখনো ছিল না জানিয়ে ওয়াজেদ বলেন, “আমাদের কখনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না, আমাদের কখনো ক্ষমতার লোভ ছিল না। আমরা দেশের জন্য কাজ করেছি। তাই দেশের জনগণ যদি মনে করে তারা ভালো করতে পারবে তাহলে ‘গুডলাক’।”

আশির দশকে গণতন্ত্রের জন্য শেখ হাসিনা রাস্তায় ছিলেন অথচ এখন তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হরণের অভিযোগ উঠেছে গত কয়েক বছরে। কেন তিনি এতো অজনপ্রিয় হলেন? এমন প্রশ্ন করা হয় সজীব ওয়াজেদ জয়কে।

তিনি বলেন, “পশ্চিমে এটা নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। বাংলাদেশের গত নির্বাচন খুব শান্তিপূর্ণ ছিল। অথচ এর আগের নির্বাচনগুলোতে বিরোধীদল ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছিল।”

“গণপরিবহনে আগুন দিয়েছিল, শত শত মানুষ নিহত হয়েছিল। নির্বাচনের সময় আবারো সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল যাতে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হতে না পারা একটা ছোট্ট গ্রুপ রাস্তায় নেমেছে।”

সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতা দখল করা নিষিদ্ধ জানিয়ে ওয়াজেদ বলেন, “ক্ষমতা দখল করা এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও আন্দোলনকারীরা এটা মানবে কি না কে জানে? পরে কি হবে এটা এখনো কেউ জানে না।”

সর্বশেষ নির্বাচন স্বচ্ছ হয়নি এ অভিযোগ নাকচ করে দেন ওয়াজেদ। “শেষ নির্বাচনে সরকার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করেছে। আমি আইটি অ্যাডভাইজার ছিলাম এটার জন্য বলেছিলাম। কারণ এটা নির্বাচনকে ফুলপ্রুফ করবে। আমাদের বিরোধী দল এটার বিরোধিতা করেছিল।”

গত কয়েক বছরে মানুষের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তাতে তারা এখনো ভুগছে এমন প্রশ্নে মি. ওয়াজেদ বলেন মানুষ আগের ঘটনা ভুলে গেছে বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “কারণ আমাদের বিরোধী দলগুলো ওই টার্মে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছিল। আমার মায়ের উপর ‘ম্যাসিভ এসাসিনেশন অ্যাটেম্পট’ হয়েছিল। ২৩ জন মানুষ নিহত হয়েছিল, ২০০ এর বেশি মানুষ আহত হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের অ্যাম্বাসেডরের উপর হামলা হয়েছিল, আমার ধারণা গত ১৭ বছরে মানুষ তা ভুলে গেছে।”

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে আলোচনা করেছেন বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সূত্র-বিবিসি।