পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত হরিরামপুরের নারী শ্রমিকরা

Posted on August 3, 2024

সাইফুল ইসলাম তানভীর, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশ গ্রহণ বাড়লেও কমেনি মজুরি বৈষম্য। পুরুষ নির্ভরশীলতা কমিয়ে নারীরা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। এ উপজেলার নারী সম্প্রদায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং খামারের বাইরে নানা রকম কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে তারা।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, গ্রামের খোলা নীল আকাশের নিচে রাস্তার পাশে বসে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা। সোনালি আঁশের রুপালি কাঠি সংগ্রহে ব্যস্ত তারা। উপজেলার চালা ইউনিয়নের আগ্রাইল এলাকায় এমনি এক দৃশ্য চোখে পড়ে। সেখানে কথা হয় রাহেলা বেগমের সাথে। তিনি জানান, আঁশ ছাড়ানোর বিনিমিয়ে পাটখড়ি নেন তিনি।

রাহেলা বেগম ছাড়াও অনেক নারীই নিজেদের জমির পাটের আঁশ ছাড়ানোর পাশাপাশি অন্যের পাটের আঁশ ছাড়িয়ে পাটখড়ি নিচ্ছেন। কয়েক দিনের বৃষ্টি ও বর্ষায় নিকটস্থ নদী ও খাল-বিলে পানি আসায় সময়মতো পাট কেটে জাগ দিতে পারছেন উপজেলার কৃষকরা। শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় অনেক কৃষকই নারীদের দিয়ে পাটের আঁশ ছাড়িয়ে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে অনেক নারীরা নগদ মূল্য না নিয়ে পারিশ্রমিক হিসেবে পাটখড়ি নিয়ে থাকেন। কিছু কিছু নারী নগদ টাকাও নিচ্ছেন।

উপজেলার গালা ইউনিয়নের সাখিনি গ্রামের জোসনা বেগম বলেন, বর্ষার পানি আসায় কোন কাজ নাই, রোজগার নাই। প্রতিদিন পাট ছিলে দিয়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মূল্যের সমান পাটখড়ি পাওয়া যায়। তাই এখন এই কাজ করছি।

উপজেলার গালা ইউনিয়নের বিজয়নগর গ্রামের পাট চাষি নান্নু জানান, পুরুষ শ্রমিক নিলে এক হাজার টাকা রোজ দিতে হয়। তাই পাটখড়ির বিনিময়ে নারী শ্রমিক দিয়ে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করাচ্ছি। পাটের আঁশ ছাড়ানোর বিনিময়ে মজুরি হিসেবে তাঁরা পাটখড়ি পান। সে খড়ি বিক্রি করেন তাঁরা।

এ ব্যাপারে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, আদিকাল থেকেই কৃষিতে নারীদের ভূমিকা ছিল। তারা ঘরের কাজের পাশাপাশি কৃষি কাজেও সহযোগিতা করে আসছে। আগে গ্রামীণ পটভূমিতে একমাত্র পুরুষরাই মাঠে কৃষি কাজ করতো। বর্তমানে নারীরা প্রত্যক্ষভাবে কৃষিকাজে এগিয়ে এসেছে। তারা পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে রবিশস্য উৎপাদন, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন, সবজি ও মৎস্য চাষসহ বিভিন্ন পেশায় নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি সমান অবদান রাখছে।

তিনি আরও বলেন, এ উপজেলায় ইজিপিপি প্রকল্প এর আওতায় ৩৬৩জন মহিলা শ্রমিক কাজ করছে, পাশাপাশি আরএমপি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৩০ জন মহিলা শ্রমিক কাজ করছে। এছাড়াও সরকারের সকল উন্নয়ন মূলক কাজে মহিলা শ্রমিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে।