মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি: মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা। যশোরের শার্শা উপজেলার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষকরা গল্পগুজব করে সময় পার করছেন। শিক্ষকদের কাছে কী করছেন জানতে চাইলে-একবাক্যে উত্তর ‘গল্প করছি’। এরপর একজন শিক্ষক একটানা বলতে থাকেন-‘সকাল নয়টা থেকে এসে তিনটে পর্যন্ত খামাখা বসে থাকা। দীর্ঘ এই সময় পার হচ্ছে না। গল্প করতে করতে যখন আর কেনো কথা থাকছে না। তখন চুপচাপ বসে থাকছি। এভাবে সময় পার হয় না। কাজ ছাড়া স্কুলে এনে বসিয়ে রেখে একপ্রকার শাস্তি দেয়া হচ্ছে।’ তার সাথে সুর মেলান অন্যান্য শিক্ষকরা। তারাও কাজবিহীন বসে থাকার কষ্টের কথা বলেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে হঠাৎ করে গত রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে রাখার নির্দেশনা আসে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিকভাবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক কর্মকর্তারা স্ব স্ব ক্লাস্টার অফিসারদের স্কুল খুলে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তারাই নির্দেশ বাস্তবায়ন করছেন।
কিন্তু কাজ ছাড়া স্কুলে এসে বিরক্ত হচ্ছেন যশোরের শার্শা উপজেলার একশত পঁচিশ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আটশত ষাটের বেশি শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক, সহকারি, দপ্তরী, নৈশ প্রহারী, কেবল শিক্ষকরা বিরক্ত হচ্ছেন না; মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিশেষ করে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিক্ষকরা খামাখা কেন স্কুলে এসে বসে থাকবেন সেই প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারছেন না কর্মকর্তারা।
এ উপজেলাই ১১ টি ইউনিয়ান ও ১টি পৌরসভা, উপজেলার কমপক্ষে ৮ জন প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললো না। অথচ অফিস খোলা রাখার নামে শিক্ষকদের মানসিকভাবে কষ্ট দেয়া হচ্ছে। যদি স্কুলে সুনির্দিষ্ট কাজ দেয়া হতো তাহলে শিক্ষকরা সেটি করে সময় পার করতে পারতেন। কিন্তু কোনো কাজের কথা বলা হচ্ছে না। এভাবে থাকা অনেকটা কষ্টের।’ তবে, এসব প্রধান শিক্ষকের কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি।
অধিকাংশ সহকারী শিক্ষকের বক্তব্যও একই ধরনের। তারা বলছেন, ‘শ্রেণি কার্যক্রম চলছে না, তারপরও স্কুলে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অলস সময় পার করতে হচ্ছে। এটি কষ্টদায়ক। প্রধান শিক্ষকরা না হয় অফিসিয়াল কিছু কাজকর্ম করতে পারেন। সহকারী শিক্ষকরা কী করবেন?’
এদিকে, বিভ্রান্তিতে পড়েছেন অভিভাবকরা। স্কুল খোলা থাকায় বহু অভিভাবক তাদের সন্তানদের জোর করে ক্লাসে পাঠাচ্ছেন। স্কুলে গিয়ে ক্লাস না হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ফিরে যাচ্ছে। এই আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া আসা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। তাদের সাথে একমত মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারাও।
কথা হয় সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সোহারাব হোসাইনের সাথে, তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ওয়ালীয়ার রহমান বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে এসে সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত অবস্থান করতে বলা হয়েছে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্কুল খুলে শিক্ষকদের সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত অবস্থান করতে বলা হয়েছে। সারাদেশে সব স্কুল এভাবেই চলছে।’
উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃইজ্জত আলী বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে এসে সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত অবস্থান করতে বলা হয়েছে।’আমরা শিক্ষকরা তা পালন করছি।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
অলস সময় পার করতে হচ্ছে প্রাথমিকের শিক্ষকদের, বিভ্রান্ত অভিভাবক https://corporatesangbad.com/476612/ |