সিলেটে পর্যটকদের ঢল, মাজারেও রাত্রিযাপন

Posted on September 30, 2023

তিমির বনিক, ষ্টাফ রিপোর্টার: যেকোনো মৌসুমে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় থাকে সিলেট। প্রকৃতিকন্যা জাফলং, লালাখাল, সাদাপাথর, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, কুলুমছড়া, পাংথুমাইকে ঘিরে পর্যটকদের আগ্রহ থাকে সারাবছর। তাই তো ছুটি পেলেই দলবল ও পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে বেড়িয়ে পড়েন সিলেটে। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিলেটের সবকটি পর্যটনকেন্দ্র তীব্র গরমেও পর্যটকের আনাগোনায় সরগরম।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে টানা তিন দিন সরকারি ছুটি থাকায় বেশির ভাগ কর্মজীবী লোকজন ঘুরতে এসেছেন। হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলো আগে থেকেই অগ্রিম ভাড়া নিয়েছেন পর্যটকেরা। ফলে বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে তিন দিন ছুটির মধ্যে রুম ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়। ফলে অনেকে হোটেল-মোটেলে জায়গা না পেয়ে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার প্রাঙ্গণে রাত্রিযাপন করতে দেখা গেছে।

পাহাড় টিলা, স্বচ্ছ জলরাশি, গহিন বনের সঙ্গে মিতালী করে ঘুরে বেড়ানোর অভিপ্রায় নিয়ে আসা মুগ্ধতায় ফিরেছেন পর্যটকরা। গতকাল সকাল থেকে সিলেটের আকাশে প্রখর রোদ ছিলো। আর এই রোদ উপেক্ষা করেই পর্যটকেরা চা-বাগান, টিলা, পানি-পাথরসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখছেন। বিপুল সংখ্যক ভ্রমণপিপাসু এবারও তিনদিনের ছুটিতে জাফলং ঘুরতে এসেছেন। জাফলং জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে তাদের কেউ কেউ ওপারে ভারতের মেঘালয়ের ঝুলন্ত ব্রিজ, সারিবদ্ধ দিগন্ত জোড়া পাহাড়টিলার পানে দু’চোখ মেলে ধরে প্রকৃতির প্রেম উপভোগ করছেন। কেউ কেউ আবার পিয়াইনের বুক চিরে আসা স্বচ্ছ ঠাণ্ডা জলরাশির মাঝে সাঁতার কাটছেন। জাফলং ভ্রমণ, সেলফি আর ক্যামেরায় নিজেকে আবদ্ধ করে তা স্মৃতিবন্দী করে রাখছেন অনেকেই। একটু পশ্চিম পাশেই অবস্থিত জাফলংয়ের ভ্রমণপিয়াসীদের আরেক আকর্ষণ ফাটাছড়া মায়াবী ঝর্ণা। সেখানেও পর্যটক দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। মেঘালয় পাহাড় গড়িয়ে আসা ঝর্ণার স্বচ্ছ শীতল জলে গাঁ ভিজিয়ে উল্লাসে মেতে থাকছেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।

প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ের মতো দর্শক সমাগম বেড়েছে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরেও। সেখানেও যেন ঢল নেমেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। ঢাকা থেকে আসা একদল তরুণ সাদা পাথরের সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, আসলে এখানে কেউ না আসলে এখানকার সৌন্দর্যকে বুঝবে না। নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।

রাতারগুল পর্যটনকেন্দ্রের মাঝের ঘাট এলাকার বাসিন্দা ফজলু মিয়া বলেন, সকাল ৮টা থেকে পর্যটকেরা এখানে আসতে শুরু করেছেন। সাধারণ দিনে যেখানে ৩০ থেকে ৪০টি নৌকায় যাত্রীরা রাতারগুলে ঘুরে বেড়ান, সেখানে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বেলা পৌনে ৩টা পর্যন্ত প্রায় ২০০ নৌকায় করে যাত্রীরা মাঝের ঘাট থেকে রাতারগুলে ঢুকেছেন। বিকেল ৫টার মধ্যে নৌকার সংখ্যা ৩০০ অতিক্রম করবে। রাতারগুল প্রবেশে আরও দুটি ঘাট রয়েছে। সেসব ঘাটেও পর্যটকদের সরব উপস্থিতিতে সকলের চোখে মুখে প্রকৃতিকে সঙ্গী করে নেয়া।

জানা যায়, সপ্তাহখানেক আগে থেকেই নগরীসহ পর্যটন স্পটের হোটেল-মোটেলগুলোর বেশির ভাগই আগাম বুকিং দেওয়া ছিল। কিছু দিন ধরে হোটেল ব্যবসা মন্দা গেলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার সিলেট বিভাগে লক্ষাধিক পর্যটক ভিড় করেছেন। আজ শনিবার এই সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, সিলেটের পাশাপাশি সুনামগঞ্জেও পর্যটকদের আগমন লক্ষ্যনীয়। হাজার হাজার পর্যটক এসেছেন টাঙ্গুয়ার হাওর, নীলাদ্রি লেক, যাদুকাটা ও লাউড়ের গড় এলাকার সৌন্দর্য দেখতে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

টানা তিন দিনের ছুটিতে হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হাওরবেষ্টিত ভাটির জনপদ ও পর্যটন এলাকাখ্যাত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা। হিজল-করচ, নলখাগড়া বেষ্টিত নীল জলরাশির টাঙ্গুয়ার হাওর, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর বিক্রম শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রী লেক), রূপের নদী যাদুকাটা ও শিমুল বাগানে হাজারো পর্যটকের ঢল নেমেছে।

সিলেটের হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল বলেন, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে সিলেটে এবারই বেশি পর্যটক উপস্থিতি হয়েছে বলে আশা প্রকাশ করছেন। এরই মধ্যে সিলেটের সব কটি হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, করোনাকাল কাটিয়ে এবারই প্রথম এত পর্যটক সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় ঘুরতে এসেছেন। এতে পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠবেন বলে আশা করছেন।

জাফলং পর্যটনকেন্দ্রে সকাল থেকে পর্যটকেরা আসছেন বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং সাবজোনের পরিদর্শক মো: রতন শেখ। তিনি বলেন, সকাল থেকে বেলা পৌণে ৩টা পর্যন্ত জাফলংয়ের পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় লাখখানেক পর্যটক প্রবেশ করেছেন। যারা জাফলংয়ে বেড়াতে গিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই সিলেটের বাইরের দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। আজ শনিবার দিনের ছুটিতে আরো বিপুল পরিমাণ পর্যটকে নতুন সম্ভাবনাময় দ্বার উন্মোচন হবে বলে মনে হচ্ছে।

রতন শেখ আরো বলেন, সকাল থেকে প্রখর রোদ। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা কষ্ট করছেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছাসেবী ও আইনমৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, তিন দিনের ছুটিতে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে শনিবার পর্যন্ত কয়েক লাখ পর্যটকের পদচারনা সরগরমের ধারণা করা হচ্ছে। পর্যটকেরা যাতে হয়রানি কিংবা কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির শিকার না হন, এজন্য স্বেচ্ছাসেবীরা মাঠে কাজ করছেন। পাশাপাশি সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে সার্বক্ষণিক মাইকিং করে চলেছে। পর্যটন এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পর্যটকদের সহায়তা এবং নিরাপত্তা নজরদারি করা হচ্ছে।