খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে আবার জেলে যেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

Posted on September 30, 2023

অনলাইন ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে হলে আবার জেলে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন দেশ সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে? পৃথিবীর কোনো দেশ দেবে? তাদেরকে যদি চাইতে হয় তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আদালতের কাজে আমাদের হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমি যে তাকে বাসায় থাকার পারমিশন দিয়েছি সেটা আমাকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তাকে আবার জেলে যেতে হবে এবং কোর্টে যেতে হবে। কোর্টের কাছে আবেদন করতে হবে। কোর্ট যদি রায় দেয় তখন সে যেতে পারবে। এটা হলো বাস্তবতা।

শেখ হাসিনা বলেন, আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। সরকার হিসেবে আমার যতটুকু ক্ষমতা আছে, তাতে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি; চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি হাসপাতালে সে এখন নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছে।

সাক্ষাৎকারে ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে প্রশ্ন করেন।

প্রধানমন্ত্রী জবাবে বলেন, কেন তাদের এই স্যাংশন জানি না। যুক্তরাষ্ট্র আরও স্যাংশন দিতে পারে। এটাই তাদের ইচ্ছা। তবে তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয়, তার জন্য যতরকম সংস্কার দরকার, সেটা আওয়ামী লীগ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা…। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দিব’— এই স্লোগানও আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। কারণ আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময় স্বৈরশাসকরা দেশ শাসন করেছে। তাদের সময় সাধারণ মানুষের ভোট দিতে হয়নি। তারা ভোটের বাক্স ভরে নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করে দিয়েছেন। এরই প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন, সংগ্রাম করে আজ আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি। সেক্ষেত্রে হঠাৎ এমন স্যাংশন দেওয়ার যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সময় কোনো কাজ ‘অতিরিক্ত’ করতে পারে স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো সংস্থা, সেটা র‌্যাব হোক, পুলিশ হোক বা অন্য যে কোনো সংস্থা হোক; তারা অন্যায় করলে আমাদের দেশে সেটার বিচার হয়। কেউ যদি কোনো অন্যায় করে, আমাদের দেশে তার বিচার হয়। এই বিচারে কেউ রেহাই পায় না। অনেক সময় তারা কোনো কাজ অতিরিক্ত করে, করতে পারে। কিন্তু করলে সেটা আমাদের দেশের আইনেই সেটার বিচার হচ্ছে। যেখানে এমন বিচার হচ্ছে, এমন ব্যবস্থা আছে; সেখানে এই স্যাংশনে কী কারণে?’

বাংলাদেশে ‘গুমের ঘটনা’ নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। তবে মার্কিন গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যখন মানুষ খেয়েপরে একটু ভালো থাকবে, তখন এ ধরনের (মানবাধিকার) প্রশ্ন উঠবে। তো এখানে কাদের মানবাধিকার? যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, তাদের মানবাধিকার নিয়ে তারা (জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন) চিন্তিত!

প্রধানমন্ত্রীকে সংবাদিক বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে একটি উদ্বেগের কারণ হচ্ছে গুমের ঘটনা। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এটা নিয়ে বহুবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ বছরের জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৮৮টি গুমের অভিযোগের প্রকৃত অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তার জবাবে ৫ জন আটক এবং ১০ জন মুক্ত অবস্থায় আছেন বলে বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে জানিয়েছে। আর বাকি ৭০টি ঘটনার কোনো নিষ্পত্তি হয়নি বলে বলছে জাতিসংঘ। এই ৭০টি ঘটনার বিষয়ে আপনারা জাতিসংঘকে কিছু জানাচ্ছেন না কেন বা কবে নাগাদ জানাবেন?

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এমন অনেক অভিযোগই অনেকে দেয়। কিন্তু কেউ সেটার প্রমাণ, নাম বা কোনো কিছুই তারা দিতে পারে না। যেখানে এতগুলো নাম দেয়া হলো, তার মধ্য থেকে কয়েকটা ঘটনা সত্য হিসেবে পাওয়া গেছে। সেগুলোর সম্পর্কে ঠিকই প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে। প্রতিবেদন দেয়া হলো কিনা, সেটা তারা নিজেরাই তদন্ত করে দেখুক। তারা সেটা তদন্ত করে না কেন? সেটাই আমার প্রশ্ন।

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় বলা হচ্ছে যে কেউ নেই। পরে আবার দেখা যায় যে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে; সে ঠিকই জীবিত আছে। কেউ আবার অনেক সময় নিজেরাই পালায়। ঋণ করে নিজেদেরকে আড়াল করে রাখেন। সেরকম অনেক ঘটনাই আছে। সেই ঘটনাগুলো কিন্তু খোঁজ করে বের করা হচ্ছে।’

‘তবে হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, অগ্নিসন্ত্রাসীদের ব্যাপারে তো কোনো কথা বলে না তারা! যখন বাংলাদেশে জীবিত মানুষকে পুড়িয়ে মারা হতো, তখন তো মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার হয়নি।’- উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৭-২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগদানের পর নিউইয়র্ক থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি পৌঁছান শেখ হাসিনা।

১৩ দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে বাংলাদেশ সময় শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে লন্ডনের পথে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করবেন তিনি। এরপর ৪ অক্টোবর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

আরও পড়ুন:

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে আবারও আবেদন

আ.লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশ অন্ধকারে ফিরে যাবে: প্রধানমন্ত্রী

কন্যাশিশুদের সুদক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়তে সরকার বদ্ধপরিকর: প্রধানমন্ত্রী