যুক্তরাষ্ট্রের নীতিবিরোধী প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর চলছে নজরদারি

Posted on September 29, 2023

ইমা এলিস, নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নীতিবিরোধী কর্মকান্ড ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে বাঁধাদানে জড়িত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নজরদারিতে রয়েছেন। সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশিদের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের তালিকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। এজন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ঘোষণা করেছে নতুন ভিসানীতি। যারা বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অতীতে বাঁধাগ্রস্থ করেছেন এবং ভবিষ্যতে করবেন তারাই পড়বেন ভিসা নীতির আওতায়।

গত ২৪ মে ভিসানীতি ঘোষণায় চারমাস পর ‘২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিলো ভিসানীতি প্রয়োগের। ভিসানীতির বিধিনিষেধ আরোপিত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না।
দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। দেশ ও প্রবাসের সাধারণ বাংলাদেশীরা ভিসানীতি সহ যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত সকল গণতান্ত্রিক নীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। শুধু স্টেট ডিপার্টমেন্টই নয় ইউএস কংগ্রেসের জনপ্রতিনিধিরাও বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চলেছেন। সম্প্রতি প্রথমে ৬ জন ও পরবর্তীতে ১২ জন সহ মোট ১৮ জন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়ে। দেশের বিচার ব্যবস্থা ও ডঃ মোহাম্মদ ইউনুসকে হেনস্থা করায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন ১৬০জন বিশ্ব নেতা। এদের মাঝে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব সহ ১০৪ জন নোবেল লরিয়েট। এছাড়া জাতিসংঘ ও পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশে একদলীয় শাসন, মানবাধিকার লংঘন, ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির নির্বাচনের সমালোচনা করে আসছে।

কার্যত গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্ব এখন বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাংখা বাস্তবায়নে দাঁড়িয়েছে তাদের পাশে। সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্নভাবে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এবং দেশটির সবধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগী একশ্রেনীর প্রবাসী বাংলাদেশী যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত নীতির প্রকাশ্য বিরোধিতা করে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। বিশিষ্ট বাংলাদেশী আমেরিকান নাগরিকের ব্যানারে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার একদল প্রবাসী প্রথম দফায় ৬জন এবং দ্বিতীয় দফায় ১২ জন কংগ্রেসম্যানের বিবৃতির বিরোধিতা করে দিয়েছেন পাল্টা বিবৃতি। শুধু তাই নয় প্রভাবশালী এসব কংগ্রেসম্যানের বিবৃতিকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলতেও কসুর করেননি। তারা ১৬০ জন বিশ্ব নেতার বিবৃতিদাতাদেরকে তুলোধুনো করেছেন। বিশ্ব-নেতৃবৃন্দের নিকট থেকে অর্থের বিনিময়ে এসব বিবৃতি যোগাড় করা হয়েছে এমন মন্তব্য করেছেন তারা। কংগ্রেসম্যানদের বক্তব্য খন্ডন করতে অতি সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে কয়েকজন কংগ্রেসম্যানের দ্বারস্থ হন এসব প্রবাসী বিবৃতিদাতা। এজন্য বিভিন্নভাবে অর্থ কড়ি খরচ করছেন এমন সংবাদ চাউর আছে স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে। তাদের এসব বিবৃতি এবং সাক্ষাতের ছবি প্রবাসে এবং বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচার করে দেশের বর্তমান সরকারের সুনজর থাকার চেষ্টা করছেন।

র‌্যাবের উপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং নতুন ঘোষিত ভিসানীতি বাতিলের জন্য যারা কাজ করবেন বলে দাবি করেছিলেন তারা বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে পৌছেছিলেন। কিন্তু ভিসানীতির কার্যকারিতা রুখতে এবং আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন এসব ব্যক্তিবর্গ। বাংলাদেশের অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষাবলম্বণকারী এসব ব্যক্তিবর্গের অনেকেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা বলে দাবি করেন নিজেদেরকে। স্থানীয় ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে একটি ছবি তুলতে গিয়ে তারা পড়েন হুমড়ি খেয়ে। এদের অনেকেই ব্যক্তিগত এবং পারিবারিকভাবে লাভবান হয়েছেন মূলধারার পাইওনিয়ার পরিচয়ে। কয়েকজন সাংবাদিকও আছেন এদের তালিকায়।

আমেরিকান নাগরিক যারা এদেশের সংবিধান, আইন ও সরকারের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তাদের এখন খবর হচ্ছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে দেশটির নাগরিক হিসেবে সরকারের নীতির সমালোচনা করাতে কোন বাঁধা নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের বাইরে গিয়ে অন্য দেশের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া কিংবা সেই দেশের গোষ্ঠি ও দলীয় স্বার্থে আমেরিকার নীতি ও সরকারের বিরোধিতা করা নাগরিক আনুগত্যের লংঘন বলে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বাংলাদেশী আমেরিকান আইনজ্ঞ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভের সময় শপথ গ্রহণের মাধ্যমে এ বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। কোন নাগরিক যদি অন্য কোন দেশের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য তদ্বির করতে চায় তবে তাকে নিবন্ধিত লবিং এজেন্টের মাধ্যমে তা করতে হবে।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে বাঁধাদানকারী এসব প্রবাসী কথিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গেরর একটি তালিকা হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এ বিষয়ে কাজ করছে এমন খবর চাউর হওয়ায় এসব বিবৃতিদাতাদের অনেকে গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করছেন। আমেরিকার সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী অনুযায়ী আমেরিকার কোনো স্থায়ী বাসিন্দা বা গ্রিনকার্ডধারী এবং ন্যাচারালাইজড সিটিজেন যদি সংবিধানের বিধিবলে প্রণীত আইন লংঘন করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা বিদ্বেষমূলক ভূমিকা পালন করেন, তাহলে তাদের গ্রিনকার্ড, এমনকি ন্যাচারালাইজড নাগরিকত্ব বাতিল বা হরণ করা হতে পারে।

কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ