রূপগঞ্জে বেনজীরের আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি জব্দ

Posted on July 6, 2024

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি আদালতের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে।

শনিবার (৬ জুলাই) সাড়ে ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বয়ে গঠিত টিম রূপগঞ্জের আনন্দ হাউজিং সোসাইটি এলাকার এই বাড়িটি জব্দ করে।

এ সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ছাড়াও দুদকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গোপালগঞ্জে বিশাল এলাকাজুড়ে রিসোর্ট, রাজধানীর গুলশানে ১০ হাজার বর্গফুটের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট (চারটি ফ্ল্যাট একসঙ্গে), বান্দরবানে ২৫ একর বাগানবাড়িতে রিসিভার নিয়োগ দিয়ে তত্ত্বাবধানে নেয় প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে রূপগঞ্জের কাঞ্চনগামী সড়কের পাশে নির্জন এলাকায় ‘আনন্দ হাউজিং সোসাইটি’ নামে একটি আবাসন প্রকল্পে বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন বাড়িটি রয়েছে।

উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়ন এলাকায় অবস্থিত আনন্দ হাউজিং নামে আবাসন প্রকল্পটিতে এখন পর্যন্ত হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি বাড়ি নির্মিত হয়েছে। আনন্দ হাউজিং সোসাইটি নামে নির্মাণাধীন আবাসন প্রকল্পটি মূলত পুলিশ পরিবার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আর সেখানে বেনজীরের মালিকানাধীন একটি দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িও রয়েছে। বাড়িটির মালিকের পরিচয় এতদিন অজানা থাকলেও এরইমধ্যে বাড়িটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

হাউজিংয়ের স্টাফরা জানান, প্লট আকারে প্রতি কাঠা জমি ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানেই ২৪ কাঠা জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

জানা গেছে, রূপগঞ্জের ২০২২ সালের দিকে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বেনজীর আহমেদ দেশে থাকাকালীন মাঝেমধ্যেই এ বাড়িতে আসতেন, রাত্রিযাপনও করতেন বলেও জানা যায়। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় বাংলোবাড়িটিতে কেয়ারটেকারের পাশাপাশি দুটি কুকুরও রাখা হয়েছে।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ জুন আদালত তৃতীয় দফায় বেনজীরের আরও বিপুল সম্পদ জব্দ করেছেন। সে তালিকায় এ বাংলোটিও রয়েছে। এরপর বাড়িটি দেখভালের জন্য জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগ দেন আদালত। বাংলোটির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।

এর আগে গোপালগঞ্জে বিশাল এলাকাজুড়ে রিসোর্ট, রাজধানীর গুলশানে ১০ হাজার বর্গফুটের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট (চারটি ফ্ল্যাট একসঙ্গে), বান্দরবানে ২৫ একর বাগানবাড়িতে রিসিভার নিয়োগ দিয়ে তত্ত্বাবধানে নেয় প্রশাসন।

উল্লেখ্য যে, গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এ অনুসন্ধান শুরু হলে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশত্যাগ করেন বেনজীর।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে ২০৫টি দলিলে ৭০২ বিঘা জমি (৩৩ শতকে এক বিঘা হিসাবে), ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে বলে সন্ধান পায় দুদক। এরপর গত ২৩ ও ২৬ মে এবং ১২ জুন আদালতের নির্দেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসব সম্পত্তি গড়েন বেনজীর।

দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম এ অনুসন্ধান করছে।

বেনজীর আহমেদ ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পান বেনজীর। এরপর ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী অবসরে যান তিনি।