কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

Posted on July 6, 2024

আনোয়ার হোসেন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী, নুনখাওয়া ও হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা এবং গ্রামের পর গ্রাম। প্লাবিত হয়েছে নদ-নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ৪১টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭২ সেন্টিমিটার ও হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের পানি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। বানভাসি পরিবারগুলো বসতবাড়িতে বাঁশের মাচা, নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অধিকাংশ পরিবারে পাঁচ দিন ধরে চুলা জ্বলছে না। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তাদের গৃহপালিত পশুপাখি। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। বানভাসিদের অনেকেই গবাদি পশুসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় বানভাসিদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

বন্যা দুর্গতরা জানান, দিনদিন পানি হু হু করে বাড়ছে। আমাদের ঘরবাড়ি সব তলিয়ে গেছে। চিন্তাভাবনা করছি উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়ার। কিন্তু উঁচু জায়গাও সব পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই নৌকা ও বেলায় করে খেয়ে না খেয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছি।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, বন্যায় আমার ইউনিয়নের অনেক চর ও দ্বীপ চর তলিয়ে গেছে। অনেক কষ্টে বসবাস করছে চরের মানুষজন। এছাড়া কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর পাকা সড়কের দুটি স্থানে পানি ওঠায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি আরও ৪৮ ঘণ্টা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্রের পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা বিতরণ জোরদার করা হয়েছে। জেলায় মোট ৪০৪টি আশ্রয় কেন্দ্র এবং দুর্গতদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবং ইতোমধ্যে উপজেলা গুলোতে ৯০ মেট্রিক টন চাল ও তিন হাজার ২৬৭ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আরও ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে পর্যায়ক্রমে তা বিতরণ করা হবে।