ভারতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে নিহত বেড়ে ১২১

Posted on July 3, 2024

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের উত্তর প্রদেশে হাথরাসে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২১ জনে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) স্থানীয়ভাবে পরিচিত বাবা নারায়ণ হরিরামের আশ্রমে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে রাজ্যটি পুলিশ জানিয়েছে, বাবা নারায়ণ হরিকে খুব শিগগির গ্রেপ্তার করা হবে।

জানা গেছে, স্বঘোষিত ধর্মগুরু বাবা নারায়ণ হরির আসল নাম সুরজ পাল। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি ‘সাকর বিশ্ব হরি ভোলে বাবা’ নামেও সুপরিচিত। হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে ফুলরাই গ্রামের নিকট অবস্থিত ‘মৈনপুরি’ আশ্রমে তিনি সৎসঙ্গ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন।

ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের একটি ফরেনসিক দল ও ডগ স্কোয়াড ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য উত্তর প্রদেশের প্রভিন্সিয়াল আর্মড কনস্টাবুলারি (পিএসি), ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) ও স্টেট ডিজেস্টার রেসপন্স ফোর্স (এসডিআরএফ) ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে হুড়োহুড়ি শুরু করলে পদদলিত হয়ে ১০৬ জন নারী ও সাত শিশু মারা যায়। এত মানুষ সামলানোর জন্য হাথরাসের জায়গাটি ছোট ছিল। মানুষ ধর্মীয় সভা শেষ করে যখন বের হচ্ছিল তখনই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এতে করে মানুষের পায়ের নিচে পড়ে হতাহতের ঘটনাটি ঘটে।

এনডিটিভির তথ্যমতে, স্বঘোষিত গুরু নারায়ণ হরি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার আগে ভক্তদের বাহিরে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। এর ফলে একটি ছোট এলাকায় প্রচণ্ড ভিড় সৃষ্টি হয়। উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলা এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলো থেকেও ভক্তরা ‘সৎসঙ্গ’ পালন করতে আশ্রমে এসেছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, হাথরাসের সৎসঙ্গের আয়োজক ও বাবা নারায়ণ হরির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এফআইআরের তথ্য অনুসারে, আয়োজকদের সৎসঙ্গ পালন করার জন্য ৮০ হাজার মানুষের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, আড়াই লাখেরও বেশি ভক্ত সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। আয়োজকদের বিরুদ্ধে নতুন ফৌজদারী আইন অনুসারে বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘যা ঘটেছে তা হৃদয় বিদারক। ঘটনার তদন্তের জন্য দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের নেতৃত্বে থাকবেন আগ্রার অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ও আলিগড়ের কমিশনার।’

উত্তর প্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া ১১৬ জনের অধিকাংশকেই শনাক্ত করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে দুই লাখ রুপি এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

স্বঘোষিত গুরু নারায়ণ সাকর হরি উত্তর প্রদেশের বাহাদুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নানে লাল একজন কৃষক। তিনি গ্রামেই তার প্রথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। স্বঘোষিত গুরু নারায়ণ সাকর হরি প্রায়শই দাবি করতেন তিনি ভারতের ইন্টিলিজেন্স ব্যুরোর সঙ্গে কাজ করেছেন। ভক্তদের আরও বলেন, ইন্টিলিজেন্স ব্যুরোর সঙ্গে কাজ করার সময় তিনি আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং ১৯৯০ সালে চাকরি ছেড়ে তিনি আধ্যাত্মিকতার পথ বেছে নেন।

জানা গেছে, নারায়ণ হরি উত্তর প্রদেশের স্থানীয় পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের হেড কনস্টেবল ছিলেন। ১৯৯৯ সালে পুলিশের চাকরি ছেড়ে দেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে নারায়ণ সাকর হরি রাখেন।

ভারতে পদদলিত হয়ে মানুষের মৃত্যু হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। বিবিসির তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালে অমৃতসরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব দশহরা পালন করার সময় ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ভিড়ের মাঝে চলে এলে ৬০ জন মারা যান। এ ছাড়া মধ্যপ্রদেশে ২০১৩ সালে পদদলিত হয়ে ১১৫ জন মানুষ নিহত হয়। সূত্র-এনডিটিভি।