সান্তাহারে নিজ সীমানা থেকে লাশ সরিয়ে দায় সারলেন রেলওয়ে পুলিশ

Posted on June 25, 2024

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার সান্তাহারে রেলওয়ে থানা সীমানায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ পড়েছিল। দীর্ঘসময় সেখানে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি রেলওয়ে থানা পুলিশ। কিন্তু গোপনে লোকজন দিয়ে মরদেহটি সরিয়ে রেলওয়ে সীমানার বাহিরে আদমদীঘি থানার সীমানায় রাখার অভিযোগ উঠেছে সান্তাহারে রেলওয়ে থানার বিরুদ্ধে। তাদের এমন দায়িত্বহীন কাজে জনমনে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে রেস্ট হাউজের মূল ফটকে।

নিহত ভূপেন চন্দ্র বর্মণ (৫৬) নওগাঁ জেলার পত্নীতলার হাজরাপুকুর গ্রামের ধনেশ্বর বর্মণের ছেলে বলে সনাক্ত করা হয়।

জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তি কোথায় থেকে এসে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশন এলাকায় ঘুরাফেরা করছিল। আশ্রয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন স্টেশনে যাত্রীদের প্রবেশ করার মূল ফটকের পাশে। পরিহিত ছিলো ময়লাআর্বজনা লাগানো কাপড়। হঠাৎ দুইদিন ধরে তিনি সান্তাহার রেলওয়ের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনে রাস্তার উপর গড়াগড়ি আর চিল্লাচিল্লি করছিলেন। তাকে কেউ খাবার বা কাপড় দিতে গেলে নেয়না তিনি। এরপর রবিবার বিকেলে তিনি হাটতে হাটতে সান্তাহার রেলওয়ের রেস্ট হাউজের পাশে রাণীনগর সড়কে গড়াগড়ি করতে দেখা যায়। পরেরদিন সোমবার সকালে ওই রেস্ট হাউজের সামনে তার মৃতদেহ দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। পরে ৮ ঘন্টা ধরে মরদেহ সেখানে পড়ে থাকতে দেখেও ওই মরদেহটি উদ্ধারের ভূমিকা রাখেনি রেলওয়ে থানা পুলিশ। পরে আদমদীঘি থানা মৃতদেহ উদ্ধার করে পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা করেন। ইতিপূর্বেও চলতি বছরের ৯ফেব্রুয়ারী সান্তাহার স্টেশন প্লাটফর্ম থেকে একটি বৃদ্ধের লাশ সরিয়ে বহনকারী কুদ্দুসের সহায়তায় সীমানার বাহিরে আবাসিক হোটেলের পাশে রেখে দেন রেলওয়ে থানা পুলিশ।

মহসিন আলী নামে এক পথচারী জানান, দুই দিন আগে বিকেলে রেলওয়ের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনে সড়কে শুয়ে গড়াগড়ি করছিলেন তিনি। তাকে দেখে খাবার দিতে গেলে সে হাতে খাবার নেয়। পরে দেখি রাস্তার পাশে খাবারটি পড়ে আছে৷ এতে বুঝতে পারলাম সে অসুস্থ যে কারনে খেতে পারছেনা। এক মাদ্রাসার হুজুর তাকে কাপড় দিতে গেলে সে নেয়না। এভাবে পড়ে থাকলে কোন যানবাহনের দ্বারা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, এদিন ওই লোক সন্ধ্যা থেকে রেস্ট হাউজের সামনে রাস্তায় গড়াগড়ি করছিল। রাতে রেস্ট হাউজের প্রধান ফটকে টাইলসের উপর ঘুমিয়ে পড়েন। হয়তো ঘুমের মধ্যে সে মারা যায়। সকালে দেখলাম কয়েকজন শ্রমিক তাকে তুলে নিয়ে রেস্ট হাউজের পাশে রেলওয়ের সীমানার বাহিরে ঘাসের উপর রেখে দেয়। মনে করছিলাম মরদেহটি কোথাও নিয়ে যাচ্ছে পরে দেখলাম সেখানে ফেলে রেখে তারা চলে যান। তাদের এমন কাজগুলো আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে। পরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মরদেহ সেখানেই পড়ে ছিলো। দীর্ঘসময় পড়ে থাকতে দেখেও সেখানে উদ্ধারের জন্য আসেনি পুলিশ।

সচেতন নাগরিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, রেলওয়ে রেস্ট হাউজে তাদের উর্ধতন কর্মকর্তারা আসলে সেখানে বিশ্রাম নেয়। সেখানকার নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকে রেলওয়ে থানা ও আরএনবি যা দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখে আসছি। কোন আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে সমস্যা হলে এক্ষেত্রে তার দায়ভার পড়বে রেলওয়ে থানায়। অথচ আজ দেখলাম একটি মৃতদেহ ওখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পড়ে ছিলো। তাদের এমন কাজের প্রতি অবহেলা দেখে আমরা হতবাক।

আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্জ রাজেশ কুমার চক্রবর্তী জানান, সান্তাহার রেলওয়ে রেস্ট হাউজের ওখানে দীর্ঘসময় মরদেহ পড়ে ছিলো। স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থলে থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় সনাক্তের মাধ্যমে জানা যায়, নিহত ভূপেন চন্দ্র বর্মণ নওগাঁ জেলার পত্নীতলার হাজরাপুকুর গ্রামের ধনেশ্বর বর্মণের ছেলে। নিহতের পরিবারে খবর পাঠানো হলে আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ নিয়ে যান।

সান্তাহার রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোক্তার হোসেনের সঙ্গে থানায় দেখা করতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোন রিসিভ করেনি।