দেশের চালের বাজার কয়েক মাস ধরেই চড়া। শুল্ক কমিয়ে দেওয়া, আমদানির উদ্যোগ ও বেসরকারি খাতে আমদানির কারণে মোটা চালের দাম কিছুটা কমলেও মাঝারি ও সরু চালের বাজার আছে আগের মতোই। বিভিন্ন জেলায় বন্যা চালের বাজার নিয়ে নতুন করে ভীতি ছড়াচ্ছে। চাল আমদানি ও সরবরাহ নিয়ে কথা বলেছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটভিত্তিক চাল আমদানিকারক মো. শরিফুল ইসলাম ।
প্রশ্ন: পাইকারি বাজারে এবার মোটা চালের কেজি ৪৬ টাকায় উঠেছিল। আমদানি শুরু হওয়ার পর তা কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা কমেছিল। বাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি কী? গত এক সপ্তাহে কি কোনো হেরফের হয়েছে?
শরিফুল ইসলাম: বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। গত বুধবার কৃষি মার্কেটে দেশি গুটি চাল ৪১-৪২ টাকা ও একই মানের ভারতীয় স্বর্ণা চাল ৪০-৪১ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশি মোটা চাল আছে, যার কেজি ৩৮-৩৯ টাকা। সরকার আমদানিতে সর্বশেষ ৮ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করায় বৃহস্পতিবার বাজারে কেজিতে আরও ২ টাকা কমেছে।
প্রশ্ন: ঢাকার বাজারে বেশির ভাগ সরু চাল বিক্রি হয়, বিশেষ করে মিনিকেট। সরু চালের দাম না কমলে বড় অংশের মানুষ সুফলবঞ্চিত থাকবে। মিনিকেট চাল কি আমদানি হচ্ছে?
শরিফুল ইসলাম: ভারত থেকে মিনিকেট চাল আমদানি শুরু হয়েছে। পরিমাণে কম। ঢাকার পাইকারি বাজারে এখন মিনিকেট চালের কেজি সাড়ে ৫১ টাকা। ভারতীয় মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা দরে। এই চালটা দাম ৪৫ টাকায় না নামলে আমদানি বাড়বে না। সরকার শুল্ক কমিয়ে দেওয়ায় এবার মিনিকেট ও মাঝারি মানের চালও আমদানি হবে। আগামী সপ্তাহে কৃষি মার্কেটে ৪৫ টাকা কেজিতে ভারতীয় মিনিকেট পাওয়া যাবে। এতে দেশি মিনিকেটের দামও কমে ৪৮ টাকায় নামবে।
প্রশ্ন: ভারত থেকে চাল আমদানি করছেন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে কেন নয়?
শরিফুল ইসলাম: বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধ চাল খেতে অভ্যস্ত। আবার ভাত হতে হবে ঝরঝরে। এ ধরনের চাল শুধু ভারতের বর্ধমান ও বিহারে মেলে। আমরা সেখান থেকেই আমদানি করছি। ভিয়েতনামের চাল এ দেশের বাজারে বিক্রি হবে না। থাইল্যান্ডের চালের দাম বেশি এবং ভাত হয় আঠালো।
প্রশ্ন: ভারতের বাজারে চালের সরবরাহ কেমন? সেখান থেকে কি বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় চাল আমদানি করতে পারবে?
শরিফুল ইসলাম: ভারত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ চাল কেনে। আবার সেখানে বন্যাও হচ্ছে। এখন সবাই যদি পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার থেকে চাল কেনার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলে দাম বাড়বে। তবে আশার কথা হলো, তাদের যেসব অঞ্চলে ধান বেশি হয়, সেখানে বন্যা হয়নি। আবার দেশটির প্রচুর খাদ্য মজুত থাকে। ফলে দামে কিছুটা হেরফের হলেও চাল পাওয়া যাবে আশা করা যায়। কারণ, দেশটির চাষিদের কাছে প্রচুর ধান থাকে। বাজারে সংকট দেখা দিলে তারা সেই ধান বাজারে ছাড়ে। এবার দেখা যাচ্ছে চালের বাজার বেড়ে যাওয়ায় প্রচুর পরিমাণে ধান ছাড়ছে। এখন সেখানে প্রতি কেজি চাল ২২-২৩ রুপি পড়ছে। এটা বাংলাদেশে আনতে খরচ পড়ছে কেজিপ্রতি ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ আমদানি শুরু করার পর কি ভারতে দাম বেড়ে গেছে?
শরিফুল ইসলাম: ভারতে দাম বেড়েছিল। প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) ২ হাজার ১৫০ রুপি থেকে বেড়ে ২ হাজার ৪৫০ রুপি হয়েছিল। এরপর তা ২ হাজার ৩০০ রুপিতে নামে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কুইন্টালপ্রতি ২০ রুপির মতো বেড়েছে। তবে চাষিরা তাঁদের হাতে থাকা ধান ছেড়ে দিলে ভারতের বাজারে বাড়বে না বলে আশা করা যায়।
প্রশ্ন: ভারতে নতুন মৌসুম শুরু হবে কবে?
শরিফুল ইসলাম: ডিসেম্বরে। তখন বাংলাদেশের বাজারও অনেক কমবে বলে আশা করা যায়।
প্রশ্ন: ভারতের চালের মান কেমন? সেটা কি বাংলাদেশের চালের মতো?
শরিফুল ইসলাম: ভারতের মাটির কারণে চাল কিছুটা খসখসে। বাংলাদেশের চালের মতো মোলায়েম নয়। তবে বাংলাদেশের মতো চাল হয়, বিহারের এমন কিছু এলাকা আমরা পেয়ে গেছি। সেই চাল আমদানি করা যাবে।
প্রশ্ন: বেনাপোল বন্দর সপ্তাহে ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা করে খোলা রাখায় আপনাদের কোনো সুবিধা হয়েছে?
শরিফুল ইসলাম: অনেক সুবিধা হয়েছে। আগে ওপারে একটি ট্রাক ১২-১৫ দিন অপেক্ষার পর বেনাপোল বন্দরে ঢুকতে পারত। এখন সেটা তিন দিনেই সম্ভব হচ্ছে। এতে ভারতীয় ট্রাকের ভাড়া অনেক কমে গেছে। সেখানে প্রতি ১০০ টনে ট্রাকের ভাড়া ৭০ হাজার রুপি থেকে বেড়ে ২ লাখ রুপি হয়ে গিয়েছিল। গত দুই-তিন দিনে তা ১ লাখ রুপিতে নেমেছে। আশা করা যায়, আবার এ ভাড়া ৭০ হাজার রুপিতে নেমে আসবে।
সৌজন্যে: প্রথম আলো
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
চালের দাম ভারতের বাজারের ওপর নির্ভর করছে: মো. শরিফুল ইসলাম, চাল আমদানীকারক https://corporatesangbad.com/470514/ |