সিটি ব্যাংকের কৌশলগত অংশীদার হবে আইএফসি: সোহেল আর কে হুসেইন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দি সিটি ব্যাংক লি:

Posted on July 22, 2017

বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক হলেও দি সিটি গ্রাহকদের নজরে আসে ২০০৮ সালে লোগো পরিবর্তনের মাধ্যমে। এ সেবায় নতুন প্রযুক্তি ও পণ্য চালুতে এগিয়ে ব্যাংকটি, কার্ড ব্যবসাতেও শীর্ষে। সম্প্রতি অংশীদারত্বে এসেছে আন্তর্জাতিক ফিন্যান্স করপোরেশন। এসব নিয়ে কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন। 

প্রশ্ন: কেমন চলছে দেশের অর্থনীতি, ব্যাংকগুলোর অবস্থা কী?

সোহেল আর কে হুসেইন: ভালো চলছে দেশের অর্থনীতি। যদিও স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি কিছুটা চাপে ফেলেছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারেও কিছুটা চাপ আছে। পাশাপাশি প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর সুশাসন নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তবে সব ব্যাংকই মূলধন বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে কেউ প্রচলিত পদ্ধতি বেছে নিচ্ছে আবার কেউ নতুন পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। সিটি ব্যাংক মূলধন বাড়াতে বৈচিত্র্যময় কৌশল নেবে। এভাবেই কিছু ব্যাংক নিজেদের আলাদা করে ফেলবে। দেশের মধ্যে সবাই ভিন্নভাবে দেখবে এসব ব্যাংককে। ব্যাংকভেদে ব্যবসার পরিস্থিতিও ভিন্ন। অনেক ব্যাংকের হাতে ভালো পরিমাণ অর্থ জমা আছে। সুদ হারের একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।

প্রশ্ন: বেসরকারি খাতের ঋণে একটা মন্দাবস্থা ছিল। এখন কেমন ঋণ চাহিদা লক্ষ করছেন?

সোহেল হুসেইন: পুরো দেশের চেয়ে ব্যাংকগুলোর ঋণের ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। গত বছরে পুরো ব্যাংক খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ শতাংশ, সেখানে সিটি ব্যাংকের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ শতাংশ। এ ছাড়া আমাদের বাণিজ্য লেনদেনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ, যা পুরো দেশের চেয়ে বেশি। আমরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে গ্রাহক ধরতে পেরেছি, ফলে ব্যবসাও পেয়েছি। কম খরচে ঋণপত্র খোলার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বখ্যাত ঋণমান সংস্থা মুডিস ব্যাংকের রেটিং করেছে। ব্যাংকের সুশাসনে আরও উন্নতি হয়েছে, এ জন্য আন্তর্জাতিক ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) মতো প্রতিষ্ঠান আমাদের পর্ষদে বসতে যাচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বাড়লেও সিটি ব্যাংকের কমছে। এর কারণ আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেই এগোচ্ছি, তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। যেসব ব্যাংক ২০১১-১৩ সালে খেলাপি হওয়া ঋণগুলো অবলোপন করে নতুন করে শুরু করতে পেরেছে, তারা স্বস্তিতে আছে।

প্রশ্ন: আইএফসির কথা বললেন। অনেক দিন ধরেই তো শোনা যাচ্ছে বিষয়টা। আসলে অগ্রগতি কতটুকু?

সোহেল হুসেইন: আমরা আনন্দের সঙ্গে বলতে চাই, পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয়ে এসেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনুমোদনের বিষয় ছিল, সংঘবিধিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন ছিল। আইএফসির পর্ষদে অনুমোদনের বিষয় ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয় ছিল। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে। শিগগির সিটি ব্যাংকের পর্ষদে বসবে আইএফসি। এতে করে দেশীয় এ ব্যাংকটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে রূপ লাভ করবে।

প্রশ্ন: আইএফসি পর্ষদে বসলে ব্যাংকের কী উপকার হবে?

সোহেল হুসেইন: আমরা শুধু মূলধন বাড়ানোর জন্য আইএফসিকে পর্ষদে আনছি না। আইএফসি হবে আমাদের কৌশলগত অংশীদার। তারা ১০০টিরও বেশি দেশে আছে। প্রযুক্তিতে বিস্তর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। আমরা নতুন করে তাদের সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং রিটেইল ঋণকে গুরুত্ব দিয়ে একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের ২০-২২ জন পরামর্শক আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। আগামী ১৮ মাস তাঁরা সহায়তা দেবেন। এসব ঋণে প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়াগত সহায়তা দিচ্ছে তারা। আইএফসি পর্ষদে আসার পর এমন বিদেশি সহায়তা আরও বেড়ে যাবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে আরও সহজে ঋণ পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন: বর্তমানে ব্যাংক খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী?

সোহেল হুসেইন: খেলাপি ঋণ কমানোটাই এখন ব্যাংক খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ জন্য নতুন নতুন কৌশলে কাজ করতে হবে। আয় অনুপাতে খরচ কমিয়ে আনাটাও এখন ব্যাংকগুলোর বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মীদের প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া এগিয়ে যেতে প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্মের কোনো বিকল্প নেই। এসব প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করতে হবে। স্বচ্ছতা আনতে ডিজিটালাইজেশনের দিকে ঝুঁকতে হবে। সিটি ব্যাংক সব সময় প্রযুক্তিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। হালনাগাদ প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা বাজারের এক নম্বর ব্যাংক। কার্ড ব্যবসাতেও আমরাই এগিয়ে। বিশ্বখ্যাত অ্যামেক্স আমাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সামনে আরও অনেক বড় বড় প্রকল্প আসছে, যা আমাদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

প্রশ্ন: চলতি বছরের প্রথম ছয় মাস কেমন গেল। ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সোহেল হুসেইন: ব্যাংকের সব সূচকই ইতিবাচক। আগের ছয় মাসে যে মুনাফা করেছি, এই ছয় মাসেও একই মুনাফা হয়েছে। আমরা ঋণ প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে চাই, যাতে কোনো সমস্যা না হয়। সুদের হার ও খেলাপি কমানো আমাদের বড় লক্ষ্য। আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের জন্য নতুন খাত বের করতে হবে। আমরা পুরো ব্যাংকটিকে ডিজিটালে রূপ দিতে চাই। ভবিষ্যতে আরও নতুন পণ্য-সেবা চালু করতে হবে। যারা নতুন পণ্য-সেবা দিতে পারবে, তারাই নিজেদের আলাদা করতে পারবে। এ ছাড়া পর্ষদে সুশাসন ধরে রাখতে হবে। আইএফসির মতো প্রতিষ্ঠান পর্ষদে থাকলে এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা সেদিকেই যাচ্ছি। পর্ষদ ভালো হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে। এ কারণে আমাদের ব্যাংকের বিদেশি অন্যান্য শেয়ার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অর্থাৎ আমরা দেশের বাইরেও ব্যাংকটি নিয়ে আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে দেশে তিন ধরনের ব্যাংক থাকবে। একধরনের ব্যাংক হবে যারা হবে প্রথম শ্রেণির ও প্রগতিশীল। এ ছাড়া কিছু ব্যাংক থাকবে যারা প্রচলিত ধারার হবে। বাকি ব্যাংকগুলো দুর্বল হিসেবেই চিহ্নিত হবে। আমরা প্রথমটিতেই থাকব। আমরা ইউরোমানির সঙ্গে আগামী মাসেই চীনের বেইজিংয়ে বিনিয়োগ সম্মেলন করতে যাচ্ছি। আমরা দেশি-বিদেশি উভয় দিকেই যোগাযোগ বাড়াচ্ছি।

প্রশ্ন: বিদ্যুৎ খাতে ঋণ দিতে নতুন করে পরিবর্তনের চাপ আসছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

সোহেল হুসেইন: বিদ্যুৎ খাতে ঋণ লাগবে। আমরা নিজেরাই বিদ্যুৎ খাতের জন্য দেড় বিলিয়ন ডলার তহবিল জোগাড় করে দিয়েছি। এমন আরও তহবিল আমরা জোগাড় করতে পারব। এ খাতে ঋণ দিতে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তনের যে উদ্যোগ, তা দেশের জন্য উপকারে আসবে। তবে ব্যাংকগুলোর নিজেদের মূলধন বাড়ানো উচিত।

সৌজন্যে: প্রথম আলো