বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেন নিবিড়ভাবে। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন তিনি।
প্রশ্ন :বাজেটে ব্যয়ের আকারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
জাহিদ হোসেন :আকার তো উচ্চাভিলাষীই। একটা অভ্যাস আগে থেকেই রয়েছে যে, বড় আকারের বাজেট দিতে হবে। এর পুরোটা যে বাস্তবায়ন হবে না, তা সবাই জানেন। বছরের পর বছর এ ধরনের রীতির কারণে বাজেটের আকার নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা কমে গেছে। আকারটাকে কেউ খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না। অনেক বড় বাজেট দিলাম এমনটা বোঝাতে আকার বড় করে দেখানো হচ্ছে।
প্রশ্ন : রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব মনে করেন?
জাহিদ হোসেন :সামগ্রিকভাবে রাজস্ব আয় এবারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২ শতাংশ বাড়বে বলা হচ্ছে। আর এনবিআরকে বাড়াতে হবে ৩৪ শতাংশের মতো। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এনবিআরের আদায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও তা অতীতের তুলনায় ভালো। আর পুরো অর্থবছরের বিবেচনায় এর আগে কখনও ২৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়নি। আগামী অর্থবছরে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ফলে রাজস্ব আয় বাড়বে। তবে আগের আইনে থাকা ভ্যাট অব্যাহতির তালিকা বহাল আছে। নতুন করে কিছু পণ্যে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে।
প্রশ্ন : বাজেটের ঘাটতি মেটাতে বিদেশি অর্থায়নের প্রাক্কলনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই বেশি প্রশ্ন উঠছে। আপনার কাছে কী মনে হয়?
জাহিদ হোসেন : আগামী অর্থবছরে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকার বিদেশি তহবিল ব্যবহারের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি। এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে না। এর আগে প্রকৃত বাস্তবায়নের হিসাব আছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের। ওই অর্থবছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যবহার করা গেছে। আগামী অর্থবছরে ভারতের ঋণে কিছু বড় প্রকল্পে এবং জাপানের অর্থে মেট্রোরেল ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে যদি ছাড় বাড়ানো যায় তাহলে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে বাজেটে যে অঙ্ক ধরা হয়েছে তা মাত্রাতিরিক্ত মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন:বাজেটের সবচেয়ে দুর্বল দিক কী?
জাহিদ হোসেন : উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের যে সমস্যা তা কাটিয়ে উঠতে আগামী অর্থবছরে কী করা হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বাজেট বক্তব্যে বলা হয়নি। এটিই আমার কাছে সবচেয়ে দুর্বল দিক মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন : নতুন ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইনের প্রভাব মূল্যস্ফীতির ওপর পড়বে মনে করেন?
জাহিদ হোসেন : ভোক্তা পর্যায়ে এ আইনের কী প্রভাব পড়বে তা নির্ভর করবে এর প্রয়োগের ওপর। নতুন আইনে ব্যবসায়ীদের রেয়াত দেওয়ার পদ্ধতি কার্যকর করা গেলে দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব পড়ার কথা নয়। কিন্তু তা না করা গেলে প্রভাব পড়তে পারে। এদিকে আগে থেকে ভ্যাট অব্যাহতির তালিকার সঙ্গে আরও কিছু সংযোজন করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্য এর মধ্যে রয়েছে। এ সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। আগের আইনে থাকা অনেক পণ্যে সম্পূরক শুল্ক নতুন আইন কার্যকরের সময় উঠিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষার কথা বলে তা রাখা হয়েছে। আমি মনে করি, এগুলো উঠিয়ে দিলে ভোক্তাদের ওপর চাপ কমত।
প্রশ্ন :ব্যাংক হিসাবে স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর পদক্ষেপকে কীভাবে দেখেন?
জাহিদ হোসেন : আমি এ সিদ্ধান্তের অর্থনৈতিক যুক্তি দেখি না। সরকার যেখানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে চাইছে সেখানে এ পদক্ষেপ ভুল বার্তা দেবে। এতে ব্যাংক ব্যবস্থার ব্যবহার নিরুৎসাহিত হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করছেন বলেই আগের চেয়ে বেশি কর দিতে হবে_ এমন একটি সিদ্ধান্ত বেশি বেশি মানুষকে ব্যাংক ব্যবস্থার আওতায় আনার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রশ্ন : সরকারি ব্যাংকে মূলধন জোগাতে বরাদ্দকে কীভাবে দেখেন?
জাহিদ হোসেন: এটা ভালো পদেক্ষপ নয়। ব্যাংকের পুনঃমূলধনিকরণে ২০০০ কোটি টাকা দিলেও পুরো বাজেট বক্তব্যে খেলাপি ঋণ নিয়ে একটা শব্দও নেই। অথচ এসব ব্যাংক খেলাপি ঋণের কারণেই এই অবস্থা। বাজেটে আর্থিক খাত সংস্কারে উদাসীনতা দেখা গেছে। একমাত্র ভ্যাট আইন ছাড়া অর্থনীতিতে কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কিছু নেই।
সমকাল
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
নিরুৎসাহিত হবে ব্যাংক ব্যবস্থা: ড. জাহিদ হোসেন, লিড ইকোনমিস্ট, বিশ্বব্যাংক, ঢাকা কার্যালয় https://corporatesangbad.com/470509/ |