বর্তমানে গোটা বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক ঘটনা হচ্ছে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে নিধনযজ্ঞ। আধুনিক বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো সেখানকার লোমহর্ষকতা দেখে শিহরিত হয়ে উঠেছে। শান্তিপ্রিয় মুসলমান সমষ্টিগতভাবে এ বর্বরতার প্রতিবাদ জানালেও বিশ্ব বিবেকের সোচ্চার হওয়া ততটা দৃশ্যমান হয়নি।
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই তারা সেখানে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আর নির্যাতন করছে বৌদ্ধরা। যাদের ধর্মে কি-না জীবের প্রতি সবচেয়ে দয়াপরবশ হিসেবে দেখার দাবি করে থাকে। কিন্তু বর্তমান তাদের মুসলমানদের লাশের উপর বুনো উল্লাস দেখে যে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আসলেই তারা জীবের প্রতি দয়ার্ত কি-না?
বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ভাগ্য বিড়ম্বিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইতিহাস যে কাউকে তাড়িত করবে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সর্বপ্রথম যে কয়টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে, তার মধ্যে অন্যতম আরাকান। রোহিঙ্গারা সেই আরাকানী মুসলমানের বংশধর। ১৪৩০ সালে আরাকান স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দুইশ বছরেরও অধিককাল স্থায়ী হয় মুসলিম শাসনকাল। ১৬৩১ সাল থেকে ১৬৩৫ সাল পর্যন্ত আরাকানে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে অবসান ঘটে মুসলিম শাসনের। ১৬৬০ সালে আরাকান রাজা থান্দথুধম্মা নিজ রাজ্যে আশ্রিত মোঘল স¤্রাট শাহজাদা সুজাকে সপরিবারে হত্যা করার পর শুরু হয় মুসলমানের উপর তার নিষ্ঠুর অমানবিক অত্যাচার নিপীড়ন। প্রায় সাড়ে তিনশ বছর সেখানকার মুসলমানদের কাটাতে হয় এই দুর্বিষহ অবস্থার।
১৭৮০ সালে বর্মী রাজা বোধাপোয়া আরাকান দখল করে নেয়। সেও ছিল ঘোর মুসলিম বিদ্বেষী। বর্মী রাজা ঢালাওভাবে মুসলিম নিধন করতে থাকে। ১৮২৮ সালে বার্মা ইংরেজদের শাসনে চলে যায়। তবে ১৯৩৭ সালে বার্মা স্বায়ত্তশাসন লাভের পর বৌদ্ধদের পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক আকার ধারণ করে। সে দাঙ্গায় ৩০ লাখ মুসলিম নিহত হন। ১৯৪৮ সালে ইংরেজদের কাছ থেকে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। তারা থেকে যায় ভাগ্য বিড়ম্বিত। স্বাধীন দেশের সরকার তাদেরকে নাগরিকত্ব দূরে থাক মানবিক অধিকারটুকুও দেয়নি আজ পর্যন্ত।
১৯৮২ সালে মিয়ানমারের সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয় এবং সরকারিভাবে তাদেরকে সেখানে ‘বসবাসকারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাদের ভোটাধিকার নেই। নেই কোন সাংবিধানিক ও সামাজিক অধিকার। নিজ দেশে পরবাসী তারা। তারা মিয়ানমারের অন্য প্রদেশে অনুমতি ছাড়া যেতে পারে না। একসময় যেখানে রোহিঙ্গারা ছিল সংখ্যাগুরু আজ সেখানে তারা সংখ্যালঘু। রাখাইন বৌদ্ধদের সেখানে এনে মুসলিমদের সংখ্যালঘু বানানো হয়েছে।
নাসাকা বাহিনী ও বৌদ্ধদের হামলার শিকার থেকে রক্ষা পেতে রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচেছন বিশ্বের রাষ্ট্রহীন নাগরিক। মিয়ানমানের এমন অত্যাচারের বিরুদ্ধে এখন বিশ্ব জনমত তৈরি করা একান্ত অপরিহার্য। প্রয়োজন রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
রোহিঙ্গার মুসলমান; বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্রহীন নাগরিক https://corporatesangbad.com/467774/ |