ঈদে ঘরমুখো যাত্রী পরিবহণে কতটা প্রস্তুত সংশ্লিষ্টরা?

Posted on June 10, 2017

আসন্ন ঈদুল ফিতরে সড়কপথে ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলার ঘরমুখো যাত্রী পরিবহনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ৪৭৫টি বাস রাস্তায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব বাসে দৈনিক ২৫-২৭ হাজার যাত্রী ঢাকা ছাড়তে পারবেন। নৌপথে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত প্রতিদিন দুটি জাহাজে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। সংস্থা দুটির হিসাবে ঈদে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যমুখী যাত্রীদের ২ থেকে ৩ শতাংশ বহনের সক্ষমতা রয়েছে। এদিকে সড়ক ও মহাসড়কগুলোর অবস্থা বিগত বছরগুলোর তুলনায় ভালো হলেও ঢাকায় ঢোকা ও বের হওয়ার পথগুলো নানা সমস্যাজর্জরিত। মহাসড়কের কোথাও কোথাও উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে।

এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের অবস্থাও ভালো নয়। এর ফলে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যবেক্ষক প্রশ্ন তুলেছেন- আসন্ন ঈদে দৈনিক লাখ লাখ মানুষের নির্বিঘে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করতে কতটা প্রস্তুত সরকারি সংস্থাগুলো।

সব মিলিয়ে সড়ক ও নৌপথে ঘরমুখো যাত্রীদের বেসরকারি বাস ও লঞ্চ সার্ভিসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যাত্রীচাপ বেশি থাকায় এবারও টিকিট কালোবাজারি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যানবাহন সংকট, বাস-লঞ্চে ওভারলোডিং, লক্কড়ঝক্কড় বাস ও লঞ্চ সার্ভিসের ভোগান্তির আশঙ্কা করছে পর্যবেক্ষক মহল।

তবে আসন্ন ঈদে ছুটি দীর্ঘ হওয়াতে গতবারের তুলনায় এবার একই দিনে গণপরিবহনের ওপর চাপ কম হবে বলে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অন্য সময়ে ঈদের দুই-তিন দিন আগ থেকে গণপরিবহনে মানুষের নামে। এবার ২২ জুন থেকে ৪-৫ দিন ধরে বাড়ি ফিরবেন নগরবাসী।

 

 

গত বছর ঈদে এ ফেরি পারাপারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ঢাকা জোনের কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন ঈদে চন্দ্রা, বাইপাইল, নবীনগর ও কোনাবাড়ী এলাকায় আইপি ক্যামেরা বসানো হবে। ওই ক্যামেরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে কী না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তা নজরদারি করা হবে।

আসন্ন ঈদে ঢাকাসহ সারা দেশে ৯০০ বাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছে বিআরটিসি। সংস্থাটির ১ হাজার ৫৩৮টি গাড়ির মধ্যে সারা দেশে সচল রয়েছে ৮৬৯টি। এর বাইরে ১১৪টি বাস বেসরকারি পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে দীর্ঘমেয়াদে লিজ দিয়ে রেখেছে। ভারি মেরামতের জন্য রয়েছে ৩৭৫টি বাস ও ১৮০টি বাস মেরামত অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এগুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

সম্প্রতি ঈদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতিঝিলের পরিবহন ভবনে এ সংস্থাটি বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা, পুরনো দ্বিতল বাস লং রুটে পরিচালনা না করা, রিজার্ভ ও লং রুটের বাসে দৈনিক মজুরিভিত্তিক চালক দিয়ে গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যাত্রীদের সুবিধার্থে নন্দনপার্ক, চন্দ্রা মোড়, মহাখালী বাস টার্মিনালসহ ৭ স্থানে বাস স্ট্যান্ডবাই রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই সব এলাকার গার্মেন্ট কর্মীদের জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

যাত্রী পরিবহনে অব্যাহত লোকসান ও যাত্রী ধারণ ক্ষমতা কম থাকায় ফেরি সেক্টরের ওপর জোর দিয়েছে এ সংস্থাটি। ঈদে ফেরিঘাটে যানজট মোকাবিলার জন্য আরিচা, শিমুলিয়া, চাঁদপুর, ভোলা ও লাহারহাট সেক্টরে সব মিলিয়ে ৪৮টি ফেরি মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে মাওয়ার শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি এবং আরিচার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ১৯টি করে মোট ৩৮টি, চাঁদপুর সেক্টরে ৪টি, লাহারহাট সেক্টরে ৩টি ও ভোলায় ৩টি ফেরি মোতায়েন করবে।

ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ এবং বাস টার্মিনালে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভিজিলেন্স টিম গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। ওই টিম গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে পদক্ষেপ নেবে। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে দূরপাল্লার যানবাহনের স্বল্পতার সুযোগে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি যেন দূরপাল্লার রুটে চলাচল করতে না পারে সে জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে এ সংস্থাটি।