বর্তমান বাস্তবতায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো কতটা যৌক্তিক?

Posted on April 17, 2017

পাইকারি ও খুচরা গ্রাহক উভয় ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পাইকারি বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ (৭২ পয়সা) বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আর বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে ৮ থেকে ১২ শতাংশ হারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

বিদ্যুতের এ রকম দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বর্তমান বিদ্যুতের উৎপাদনমূল্য বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি। ফলে, সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কিন্তু খোদ সরকারের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল অর্থাৎ ফার্নেস তেল বাজারমূল্যে সরবরাহ করলে এর উৎপাদন খরচ বিক্রয়মূল্যের চেয়ে কম আসবে। তাই দাম না বাড়িয়ে এ রকম বিকল্প ব্যবস্থা নিলে উৎপাদন খরচও যেমন কম আসবে তেমনি ভর্তুকিও দেয়ার প্রয়োজন হবে না।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেলে এর দুর্ভোগ সাধারণ মানুষকেই পোহাতে হবে বেশি। অনেক পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে গিয়ে দাম বেশি দিতে হবে অনেককেই। এদিকে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেলে শিল্প-কারখানার মালিকদেরও এক দিক দিয়ে লোকসান হবে। কারণ, শিল্প-কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমে ব্যয় হবে বেশি। এতে একদিক দিয়ে দেশের উৎপাদনমুখী কার্যক্রমেও এক ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে।

পিডিবির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, ফার্নেস তেলের দামে সমতা না থাকায় অনেক কেন্দ্রের কাছ থেকে তারা বিদ্যুৎ কেনে বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি দামে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি চালাতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে।

এ ক্ষেত্রে ফার্নেস তেল বাজামূল্যে সরবারহ করে এবং পর্যাপ্ত গ্যাস সরবারহ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমিয়ে আনা অনেকটাই সম্ভব। কিন্তু পাইকারি ও খুচরা ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যে সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়াটা নিতান্তই স্বাভাবিক। বিদ্যুতের মত অতি প্রয়োজনীয় একটি জিনিসের দাম বাড়ানোর আগে জনসাধারণের দুর্ভোগের কথাটি ভাবা বেশি শ্রেয়।