ভয়ংকর কিশোর গ্যাং; সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি

Posted on January 12, 2017

কয়েকদিন আগে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আদনান নামের এক অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উত্তরার কিছু বিপথগামী কিশোরদের বেপরোয়ার বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়। তবে এ ব্যাপারে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য কয়েকটি গণমাধ্যমে উঠে এসেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উত্তরাতে বেশ কয়েকটি অপরাধী কিশোর গ্যাং গড়ে উঠার খবর গণমাধ্যমের প্রকাশিত হয়েছে। এসব গ্যাংয়ের রয়েছে আলাদা আলাদা নাম। রয়েছে ফেসবুক পেইজ। এরা ফেসবুকে প্রকাশ্যে একে অপরকে হুমকি, গালি দিতে দেয়। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দেখে নেবে Ñ এ ধরণের সন্ত্রাসীমূলক হুমকি প্রকাশ্যে দিচ্ছে। শোনা যাচ্ছে নিহত কিশোর আদনান এ রকম গ্রুপেরই সদস্য ছিল। উত্তরাতে বর্তমানে কিশোরদের গ্যাংগুলোর মধ্যে পাঁচটি গ্যাং ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছে। গ্যাংগুলো হল, বিগবস, ডিসকো বয়েজ উত্তরা, পাওয়ার বয়েস উত্তরা, নাইনএমএম বয়েজ উত্তরা ও নাইন স্টার। এসব গ্রুপগুলোর সবার ফেসবুক পেইজ রয়েছে। আদনান হত্যার পর এখন রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। কোন কোন কিশোরকে দেখা যায় ফেসবুকে হুমকির স্ট্যাটাস দিতে। এসব গ্রুপ ছাড়াও আরো কিছু সক্রিয় গ্রুপ রয়েছে বলে কেউ কেউ বলেছেন। এসব গ্যাংগুলোর সদস্যদের মধ্যে অনেকেই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। আদনানের হত্যাকারীদেরকেও এ রকম কিশোর গ্যাংদের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এসব কিশোর; যাদের এ বয়সে নির্মল আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে থাকার কথা তারা কেন এ রকম বিপথগামী হচ্ছে? কেনই বা লিপ্ত হচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে? বিষয়টি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। আমাদের সমাজের অনেক উচ্চবিত্ত এমন কি মধ্যবিত্ত পরিবার রয়েছে যারা হয়ত সন্তানের প্রতি যথাযথ খেয়াল রাখেন না। সন্তানদের সময় দেন না অনেক অভিভাবক। ফলে সন্তান অসৎসঙ্গে পড়ে হয়ত বিপথগামী হচ্ছে। দারিদ্রতার কারণে অনেকেই বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তানেরা অনুভব করে একাকিত্বতা। পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা খবর রাখেন না, সন্তান কার সাথে মিশে, কোথায় যায়, কি করছে? একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে, কিশোর বয়স অত্যন্ত সংবেদনশীল বয়স। এ বয়সে তারা বাস্তবতাকে অত্যন্ত আবেগ দিয়ে উপলব্ধি করতে চায়। বাস্তবতার নিরিখে তারা অপরিপক্ক ও আবেগপ্রবণ হওয়ায় অনেক কিছুই করে বসতে পারে। ফলে এ বয়সে তাদের ভুল করার সম্ভবনাও থাকে বেশি। তাই, এ সময়ে তাদের অতিরিক্ত সময় দেয়াটা অত্যন্ত জরুরি। তাদের সাথে বন্ধুসুলভ হয়ে খেয়াল রাখা উচিত তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করা। ভুল করতে গেলে তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে, যাতে তারা বুঝতে পারে এবং শিখতে পারে ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য সম্পর্কে। সুশীল সমাজও এ বিষয়ে একটি বিশেষ জনমত গড়ে তুলতে পারে। বাবা-মা তাদের সন্তানদের কিভাবে সময় দিবেন, কিভাবে ঘনিষ্ঠ হবেন Ñ এসব বিষয়ে একটি বিশেষ প্রচারণার দরকার। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ব্যাপারে সেখানে নজরদারি বাড়ানো দরকার। কোন কিশোরকে অপকর্ম করতে দেখলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র রয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে নেয়া যেতে পারে। আর আদনানের হত্যার মূল হোতাদের ধরতে হবে। তারা কোনভাবেই যেন ছাড় না পায়। তারা যদি পার পেয়ে যায় তাহলে আরো অনেক কিশোর অপরাধ করার সাহস পাবে। এ রকম গ্যাং শুধু উত্তরাতে নয়, আরো অনেক এলাকাতেই হয়ত রয়েছে। যেসব কিশোররা এসব অপকর্ম করছে তারা আমাদেরই সন্তান। দেশ ও জাতির স্বার্থে, শিশুদের সুন্দর আগামীর স্বার্থে তাদেরকে যথাযথ পরিচর্যা করে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব প্রতিটি অভিভাবক, সচেতন নাগরিক সর্বোপরি রাষ্ট্রযন্ত্রের।