রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও অনুপ্রবেশরোধে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগই সর্বোত্তম পন্থা 

Posted on December 10, 2016

বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হওয়া মানব জাতিগোষ্ঠীর একটি রোহিঙ্গার মুসলমান। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাঁরা বহুকাল যাবত বসবাস করে আসলেও সেখানকার সরকার তাদের নাগরিকত্ব দিতে একেবারেই নারাজ। গত কয়েক দশক ধরেই চলছে তাদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন। এবারের নির্যাতনের চিত্র যেন অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সেখানকার মুসলমানদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে শিশু কিশোর যুবক বৃদ্ধ। ধর্ষিতা হচ্ছে তরুণী, গৃহবধু। এ পর্যন্ত কতজন রোহিঙ্গা নিহত ও কতজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কারণ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ত্রাণ কর্মীদের সেখানে প্রবেশ করতে না দেয়া। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা বলছে, রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় কয়েকশ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। ধর্ষিতার সংখ্যা অনেক। কয়েক হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে সেখানকার মুসলমানেরা সম্পদের মায়া ত্যাগ করে শুধুমাত্র জীবন বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় প্রতিদিন ভীড় জমাচ্ছেন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে। অনেকে আবার রাতের আঁধারে ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে।  দিনের পর দিন রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। 

এ পর্যন্ত কতজন রোহিঙ্গা দেশে অনুপ্রবেশ করেছে এবং কতজনকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে তার নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলবও করেছেন। বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। মিয়ানমারের এ রকম সংখ্যালঘু মুসলমান নিধনের কারণে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। বাংলাদেশ উন্নত কোন দেশ নয়। তার নিজেরও আছে সম্পদের সীমাবদ্ধতা। ক্রমবর্ধমান হারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হতে থাকলে সমস্যার মাত্রা আরো বাড়বে। 
রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের বিষয়টি অবশ্যই মানবিক একটি বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশ তার নিজস্ব সীমাবদ্ধতার কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সকলকে জায়গা দেয়া সম্ভব নয়। এর জন্য মিয়ানমার সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার জন্য বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোকে আহ্বান জানানো যেতে পারে, যাতে করে সে চাপের কারণে রোহিঙ্গাদের উপর চলমান নির্যাতন বন্ধ হয়। সেই সাথে মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের সাথে এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধানে আলোচনা করতে হবে। বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে অতি দ্রুতই মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা জরুরি। এতে করে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনও যেমন বন্ধ হবে তেমনি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশও বন্ধ হবে। ইতিমধ্যে, সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হলেও খেয়াল রাখতে হবে রোহিঙ্গাদের দিয়ে কোন অপরাধ চক্র যেন লাভবান না হতে পারে। অনেক অপরাধ চক্র আছে যারা রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগে তাদের বিভিন্ন অপকর্মে ব্যবহার করতে পারে।  

আমরা চাই, রোহিঙ্গাদের উপর নির্মম নির্যাতন ধর্ষণ সর্বোপরি মুসলিম নিধনযজ্ঞ বন্ধ হোক। এর আন্তর্জাতিকভাবে নিতে হবে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা।