ত্যাগের বারতায় যে আনন্দ

Posted on December 6, 2016

ত্যাগ ও আনুগত্যের বার্তা বহন করে আবার এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। আমরা জানি, ঘরে ফেরা স্বজনের কোলাহলে মুখর গ্রাম-বাংলায় কোরবানির পশু যোগ করছে বাড়তি আনন্দ। আমরা চাই, এই আনন্দ অবারিত ও নির্বিঘ্ন থাকুক। একই সঙ্গে কামনা করি, বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ সবাই ঈদুল আজহার আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে সত্যিকারের ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হবে। বস্তুত কোরবানির ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সময় থেকে। তার আনুগত্য পরীক্ষার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা প্রিয়তম বস্তু কোরবানির নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে নির্দেশ পালন করতে গিয়ে তিনি পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি দিতে উদ্যত হন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আমরা জানি, ইসলামের আবির্ভাবের পর কোরবানির আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা জানিয়ে দেন- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে প্রস্তুত। তাই ঈদুল আজহা নিছক জাগতিক উৎসব নয়; আধ্যাত্মিকভাবে ত্যাগ স্বীকারের তাৎপর্যমণ্ডিত। এর মধ্য দিয়ে ভোগের জীবন থেকে সরে এসে ত্যাগ ও উৎসর্গের আদর্শ আত্মস্থ করার শিক্ষা মেলে। ধর্মীয় উৎসবাদির সঙ্গে তেজারতি সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে কোরবানি পশুর অধিকাংশ গরু এবং তা বিপুলভাবে প্রতিবেশী ভারত থেকে আমদানিনির্ভর। অতি সম্প্রতি এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপিত হলে দ্রুতই দেশে বাণিজ্যিকভাবে গরু উৎপাদন বেড়েছে; উপযুক্ত সহায়তা ও প্রণোদনা পেলে চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি দেশীয় উৎস থেকেই পূরণ সম্ভব। কোরবানির পশুর মাংস প্রতিবেশী ও অভাবীদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। এর মাধ্যমে সেবা ও সহমর্মিতার আদর্শ সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ঈদুল আজহায় অনেক সময়ই ত্যাগের চেয়ে ভোগ প্রবল হয়ে ওঠে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গরিব-দুঃখীরাও বঞ্চিত হয়। অনেক সময় দায়িত্বশীলতার ঘাটতিও দেখা যায়। শহর ও গ্রামে যত্রতত্র কোরবানি দেওয়ার কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়। পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনসহ দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল এগিয়ে এলে চলবে না; নাগরিকদেরও দায়িত্ব হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। অবশ্য গত কয়েক বছর ঈদুল আজহায় পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি ঘটেছে। এবারও সিটি করপোরেশন থেকে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির আয়োজন করা হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি, কোরবানিদাতা নাগরিকরা এই পরিচ্ছন্নতা-পরিকল্পনা মেনে চলবেন এবং এবার ঈদুল আজহা নির্বিঘ্ন ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কাটবে। ত্যাগের মহিমা সঞ্চারিত হবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও। ঈদ মোবারক।