কক্সবাজারে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

Posted on September 16, 2023

মোহাম্মদ রিদুয়ান হাফিজ, কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আক্রান্তের সংখ্যা বেশী হলেও । এখন কক্সবাজার পৌরসভাসহ সদরের চার ইউনিয়নের ভারুয়াখালী,রামু,ঝিলংজা,খুরুশকুল ও টেকনাফে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি হচ্ছে।

গত আগস্ট মাসের ৩০ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৫৬ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ৫৫৯১ জন এবং স্থানীয় বাসিন্দা ৮৬৫ জন। অথচ সেপ্টেম্বর মাসের ১৪ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২২ জন।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়া এক তথ্যবিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১৪ দিনে কক্সবাজারে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫২২ জন। যার মধ্যে ৯৮৫ জন রোহিঙ্গা এবং ৫৩৭ জন স্থানীয় বাসিন্দা।

তথ্যবিবরণী অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে মোট ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী ১২ হাজার ৯৭৮ জন। যার মধ্যে ১১ হাজার ১১৬ জন রোহিঙ্গা এবং ১ হাজার ৮৬২ জন স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছেন। শুধু রোহিঙ্গাদের আক্রান্তের হার ৮৫% এবং স্থানীয় বাসিন্দা ১৫% শতাংশ। তার রোহিঙ্গাদের আক্রান্তের হার বেশি।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ ফাহিম আহমদ ফয়সাল জানিয়েছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন স্থানীয়। বৃহস্পতিবারে এপর্যন্ত নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৪ জন।

তিনি জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত বিবেচনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও তার আশপাশের এলাকা ক্রমাগত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ৯৭৮ জন। যেখানে রোহিঙ্গা সংখ্যা ১১ হাজার ১১৬ জন এবং স্থানীয় ১ হাজার ৮৬২ জন।

পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গু রোগী কমতির দিকে থাকলেও তবে বাংলাদেশি স্থানীয়দের মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা ও টেকনাফে এখন দিন দিন ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। গত আগস্ট মাসে চকরিয়া ও মহেশখালীতে বেশি ছিল, যা এখন স্থিতিশীল আছে।

গত ১৪ দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন কেন্দ্রিক নতুন করে ১ হাজার ৫২২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে ৯৮৫ জন রোহিঙ্গা এবং ৫৩৭ জন স্থানীয় বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন।

এর বাইরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮৭ জন। যেখানে ৮৫০ জন স্থানীয় বাংলাদেশি এবং ২৩৭ জন রোহিঙ্গা।

ডা. শাহ ফাহিম আহমদ ফয়সাল জানিয়েছেন, আক্রান্তের বিবেচনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৩,৪,৯, w1,1E ও ১১ নাম্বার ক্যাম্প সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া কক্সবাজার পৌরসভা ও টেকনাফে অধিক সংখ্যক রোগী পাওয়া যাচ্ছে। বারি বৃষ্টি বন্যা-পরবর্তী গত ৩ সপ্তাহে এমন বিষয়টি দেখা যাচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর ) জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে জেলায় বৃষ্টি বেড়েছে। এর কারণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা, নালায় আবর্জনা হয়ে পানি জমে থাকার কারণে এডিস মশার প্রজনন বেড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে গত কয়েক মাসের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। জেলার সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বায়ক ডা. আবু তোহা মো. আর. হক ভূইঞা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘনবসতি, অপরিচ্ছন্ন নালা, যেখানে সেখানে পানি জমে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে মশার প্রজনন থাকে। যেখানে আগে থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। আগের চেয়ে এ মাসে একটু কমেছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে কক্সবাজারে মোট ১৭ হাজার ৩৯০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। যার মধ্যে ১৫ হাজার ৩৫২ জন রোহিঙ্গা ও ২ হাজার ৩৮ জন স্থানীয়। এই এক বছরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে ৩০ জন রোহিঙ্গা ও ৯ জন স্থানীয়।