বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কারণ জানেনা ফু-ওয়াং ফুড

Posted on September 14, 2023

আরিফ হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের জুনেও যে কোম্পানির ক্রেতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিলো, হঠাৎ সেই কোম্পানিই টানা তিন মাস ধরে সর্বোচ্চ লেনদেন করা কোম্পানির শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে । ধারাবাহিকভাবেই থাকছে তালিকার শীর্ষে নয়ত শীর্ষ ১০ এ । আবার ৩ মাসে দর বেড়েছে ৫১ শতাংশ । বলছি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুসাঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেডের কথা ।

তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২৩ টাকা ৫০ পঁয়সা ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকে। অর্থাৎ প্রায় এক বছর ধরে সর্বনিম্ন দামে আটকে ছিল ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কিন্তু হঠাত চলতি বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে কোম্পানির শেয়ার হঠাৎ করেই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্ধুতে চলে আসে। এতে দীর্ঘদিন পর ২ জুলাই ২০২৩ তারিখে প্রায় ৪০ হাজার শেয়ার লেনদেন হয় ফু-ওয়াং ফুডের । ঠিক এর পরদিনই ৩ জুলাই কোম্পানির ২ কোটি ৩৬ লাখ ২৭ হাজার ৬৮৯ টি শেয়ার লেনদেন হয়েছিলো । এর পরেই বড় পরিসরে চলতে থাকে ফু-ওয়াং ফুডের লেনদেন ।

ডিএসইর তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পুরো আগস্ট মাস জুড়েই লেনদেনের শীর্ষে ছিলো ফু-ওয়াং ফুড । গত সপ্তাহেও লেনেদেনের শীর্ষ ছিলো কোম্পানিটি । সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৮৪ হাজার ৮১৬টি শেয়ার লেনদেন হয়েছিলো, যার বাজার মূল্য ২৩৯ কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এমনকি চলতি সপ্তাহে টানা শীর্ষে এবং আজও লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে এই কোম্পানিটি । আজ ৮ হাজার ৯৪১ বারে ৯৬ লাখ ৪২ হাজার ৫৯০ টি শেয়ার লেনদেন করে । যার বাজার মূল্য ৩৩ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার টাকা ।

এদিকে গত তিন মাসে কোন কারন ছাড়াই কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ । এক বছর ২৩ টাকা ৫০ পঁয়সা ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানির শেয়ার আজকে ৩৪ টাকা দরে লেনদেন হয়েছে । যদিও এদিন ৪ দশমিক ৪ শতাংশ দর কমেছে ।

লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে ফু ওয়াং ফুডের কোম্পানি সেক্রেটারি মো: শরিফ আল মাহমুদ কর্পোরেট সংবাদকে বলেন ‘‘কোম্পানির এই পরিমানে লেনদেন কিংবা দরবৃদ্ধির পেছনে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই । কি কারনে হঠাৎ আগ্রহ বেড়েছে তা আমাদের জানা নেই । কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দীর্ঘদিন নাজুক থাকার কারনে শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিলো । কিন্তু বর্তমানে মিনোরি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে ফু-ওয়াং ফুড । যার কারনেও লেনদেনের পরিমান কিংবা শেয়ার দর বাড়তে পারে ।’’

তিনি আরো বলেন, “মিনোরি কোনো শেয়ার কিনবে কি না তা জানতে অনেকে আমাকে ফোন করছেন। অথচ এটি পুরোনো খবর, তারা ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ শেয়ার কিনেছিল। এক বছর আগের মিনোরি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রনে যাওয়ার খবর কোন একটা চক্র এখন বাজারে ছড়িয়ে গ্যাম্বলিং করছে। কিন্তু এর সাথে কোম্পানির কোম্পানির কোন সম্পৃক্ততা নেই ।’’

এদিকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের  ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে পুনরায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেনি তাদেরকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে পরিকল্পনা জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে তালিকাতেও শীর্ষে রয়েছে ফু-ওয়াং ফুড ।

ফু-ওয়াং ফুডের উদ্যোক্তা পরিচালকদের ধারনকৃত শেয়ারের পরিমান বাড়াতেই কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বেড়েছে কিনা প্রশ্নে কোম্পানি সেক্রেটারি মো: শরিফ আল মাহমুদ কর্পোরেট সংবাদকে বলেন ‘‘না, এখন পর্যন্ত আমরা উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারনের কিছুই করতে পারিনাই। আমরা আগেই সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জের কাছে রিকুয়েস্ট করে রেখেছিলাম । আমাদের পরিচালনায় পরিবর্তন এসেছে । এ কারনেই নতুন ম্যানেজমেন্ট কোন একশন নিতে পারেনি । সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জের কাছে রিকুয়েস্ট করে আমরা এক বছর সময় নিয়েছি । এখনো সে সময় আছে । আমরা চেস্টা করছি অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ৩০ শতাংশ বাড়াতে ।”

২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাবদ্ধ হওয়া ফু ওয়াং ফুডের অনুমোদিত মূলধনের পরিমান ১৫০ কোটি টাকা । পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ১১০ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা । কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ০৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৪ টি । এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারী ০ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং বাকি ৮৮ দশমিক ৬২ শতাংশ শেয়ার সাধারন বিনিয়োগকারীদের হাতে ।

কোম্পানিটি সর্বশেষ লভ্যাংশ দিয়েছে ২০২০ সালে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ নদগ লভ্যাংশ । মুনাফায় থাকার পরেও ২০২১ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দেয়নি ফু ওয়াং ফুড । আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ইনকাম হয় ৫ পয়সা । যা তার আগের বছর ছিলো ৫০ পয়সা । আলোচ্য বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিলো ১১ টাকা ৮৫ পঁয়সা ।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) ফু-ওয়াং ফুডসের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৭ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১১ পয়সা। আর সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৯৬ পয়সায়, আগের হিসাব বছরের একই সময় শেষে যা ছিল ১১ টাকা ৭০ পয়সা। 

এদিকে আজকে কোম্পানিটির দর কমেছে ১ টাকা ৬ পঁয়সা বা ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ । আজ কোম্পানিটি সর্বশেষ ৩৪ টাকা দরে শেয়ার লেনদেন করে । এদিন কোম্পানিটি ৩৩.২০ টাকা থেকে ৩৬.৪০ টাকায় লেনদেন করে । আজ কোম্পানিটি ৮৯৪১ বারে ৯৬ লাখ ৪২ হাজার ৫৯০ টি শেয়ার লেনদেন করে । যার বাজার মূল্য ৩৩ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার টাকা । গত এক বছরে কোম্পানিটি শেয়ার লেনদেন করে সর্বনিম্ন ২৩ দশমিক ৫০ টাকা থেকে ৪৬ দশমিক ৯০ টাকায় ।

কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ