বাবুগঞ্জে মাল্টা চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন সিঙ্গাপুর ফেরত তারিকুল

Posted on September 12, 2023

মোঃ আল-আমিন, বরিশাল প্রতিনিধি: বরিশালের বাবুগঞ্জে মাল্টা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন সিঙ্গাপুর ফেরত যুবক তারিকুল ইসলাম মাসুম। তবে পরিচর্যায় ঘাটতি থাকায় গত বছরের তুলনায় ভালো ফলন হয়নি তার। তবুও চলতি মৌসুমে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি। মাল্টা চাষ শুরু করার পর সফল হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের পরিকল্পনা করলেও উঁচু জমির অভাবে পিছিয়ে রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মকবুল হোসেন হাওলাদারের ছেলে এই উদ্যোক্তা। এজন্য তিনি সরকারি সহযোগিতা চাইছেন। পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আমের মতোই মাল্টা সংগ্রহের দিনক্ষণ ঘোষণা এবং অন্যান্য চাষীদের আগাম ফল সংগ্রহ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন তিনি। এদিকে তারিকুলের দেখাদেখি অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

অপরদিকে কৃষি কর্মকর্তারা তারিকুলসহ অন্যান্য উদ্যোক্তাদেরও মাল্টা বাগানের নিয়মিত খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন।

সরেজমিনে বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের দক্ষিণ রাকুদিয়া গ্রামে তারিকুলের মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ১৪ শতাংশ জমির উপর (বারি-১) মাল্টা গাছের সাথে ঝুলছে অসংখ্য ফল। পাশাপাশি ভিয়েতনামী (১২ মাস) মাল্টা, চাইনিজ কমলা ও থাই জাম্বুরাও রয়েছে। তবে তিনি অসুস্থ থাকায় সময়মতো পর্যাপ্ত পরিচর্যা করতে না পারায় এবার ফলন অনেক কম হয়েছে।

তারিকুল বলেন, দেশের বাজারে প্রায় সব ধরণের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও তিনি গত বছরের মতো এবারও প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি করছেন ১০০ টাকা দরে। তার বাগানে উৎপাদিত মাল্টা রসালো এবং সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয়রাই তার ক্রেতা। তবে অধিকাংশ মাল্টা কিনে নেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। এখনো বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা বিক্রি করছেন তিনি। তবে আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ ও বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

তারিকুল ইসলাম মাসুম জানান, ২০১০ সালের শুরুতে কাজের সন্ধানে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। সেখানে দীর্ঘ ৮ বছর থেকে ২০১৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। তবে দেশে ফিরে তিনি বসে থাকেননি, ইউটিউবে মাল্টা চাষ ও ফলন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে নিজেই উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন শখের মাল্টা চাষ। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজস্ব ১৪ শতক জমিতে মাটি ভরাট করে স্বরূপকাঠী থেকে (বারি-১) মাল্টা চারা সংগ্রহ করেন। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে প্রস্তুতকৃত জমিতে সংগৃহীত বারি-১ জাতের মাল্টা চারা রোপণ করেন। শখের বশে করা মাল্টা বাগান থেকে গত ৩ বছর ধরে ৩০-৪০ মণ মাল্টা বিক্রি করে আসছেন। প্রতিবছর এই বাগান থেকে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা মাল্টা বিক্রি করে থাকেন। তারিকুলের মাল্টা বাগান ঘুরে দেখা গেছে তার সফলতার চিত্র। চলতি বছর তিনি কেজিপ্রতি ১০০ টাকা দরে ৭ মণেরও বেশি মাল্টা বিক্রি করেছেন। ৩২টি মাল্টা গাছ থেকে আরো ২০-২৫ মণ মাল্টা সংগ্রহ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।

এ ব্যাপারে তারিকুল ইসলাম মাসুম বলেন সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ প্রতি বছর তার মোট ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। চলতি বছর যদি তিনি ৩০ মণ মাল্টা বিক্রি করতে পারেন তবে সব মিটিয়ে ১ লাখ টাকার বেশি লাভ করতে পারবেন। তার বাগান ও ফলন দেখে এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রায় প্রতিদিনই বাগানটি দেখতে মানুষ আসছেন। অনেকেই বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমিও তাদের উৎসাহিত করছি। ভালোভাবে বাগান করতে পারলে ব্যাপক লাভবান হওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি। শখের বশে বাগান করতে গিয়ে তারিকুল এখন বাণিজ্যিকভাবে চিন্তা করছেন। তিনি মাল্টা বাগান সম্প্রসারণের জন্য পার্শ্ববর্তী আরো ৩৫ শতক জমি মাটি ভরাট করে মাল্টা চাষের আওতায় আনার জন্য পরিকল্পনা করলেও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তা আর করা হয়নি। তবে তিনি এখনো এ ব্যাপারে আশাবাদী। অবশ্য এক্ষেত্রে তিনি সরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শাহ মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, নীচু জমি ভরাট করার জন্য কৃষি অফিসের কোন প্রকল্প নেই। তবে মাল্টা গাছের পরিচর্যাসহ অন্যান্য বিষয়ে মাল্টা চাষীদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাবুগঞ্জসহ বরিশালের মাটি বারি-১ মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তারিকুলের দেখাদেখি এ এলাকায় অন্তত আরো ১০ থেকে ১২ জন উদ্যোক্তা স্বল্প পরিসরে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। তবে তারিকুলের মাল্টা বাগানটির ফল অনেক সুস্বাদু। আমরা ওখান থেকে পরিবারের জন্য মাল্টা সংগ্রহ করে থাকি। তারিকুলের আগ্রহ ও প্রচেষ্টা এবং আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি এ সবকিছুর সমন্বয়ে তিনি শতভাগ সফলতা অর্জন করেছেন। তাছাড়া আমাদের দপ্তর থেকে সকল উদ্যোক্তাদের মাল্টা বাগানের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।