মো: মিজানুর রহমান, এফসিএস : সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত সকল কোস্পানির জন্য ক্রেডিট রেটিং রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করেছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে ৩৮৫টি কোম্পানি রয়েছে যাদের প্রত্যেকটিকে প্রতি বছর ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি দ্বারা রেটিং করাতে হবে এবং ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশনকে পিএসআই হিসেবে প্রকাশ করার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। যে ৮টি প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট রেটিং নিয়ে কাজ করছে সেগুলো হল- Credit Rating Information and Services Limited (CRISL), Credit Rating Agency Bangladesh (CRAB), National Credit Rating Agency (NCR), Emerging Credit Rating Limited (ECRL), Alpha Rating Agency, Waso Credit Rating, Argus Rating Agency, Bangladesh Rating Agency.
উল্লেখিত এই ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি প্রতি বছর শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত ৩৮৫টি কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন করবে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত কোম্পানি ছাড়াও আরো দুই শতাধিক প্রাইভেট, পাবলিক কোম্পানিকে রেটিং করে থাকে। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশে ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি লিস্টেড ননলিস্টেড মিলে প্রায় পাঁচ শতাধিক কোম্পানিকে প্রতি বছর রেটিং করছে। আপাতঃ দৃষ্টিতে মাত্র ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি দ্বারা পাঁচ শতাধিক কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন করা অসম্ভব মনে হলেও এটাই বাস্তবতা এবং এরাই প্রতি বছর ক্রেডিট রেটিংয়ের কাজ সম্পন্ন করছে ও করবে।
এর আগে ১০ মার্চ ২০২১ প্রতিটি তালিকাভূক্ত কোম্পানিতে এজিএম ও ইজিএমে এজেন্ডা ভিত্তিক ভোটাভুটি নিরীক্ষণের বিষয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার নিয়োগের নিদের্শনা দেয়া হয়েছে যারা এজিএম বা ইজিএম এজেন্ডা ভিত্তিক ভোটাভুটি ও পুরো এজিএম সম্পর্কে স্বাধীনভাবে রিপোর্ট করবে। প্রতিটি কোম্পানি যেন এজিএম ও ইজিএম শেষ হওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বিএসইসিকে রিপোর্ট করতে পারে যে, হাইব্রিড বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এজিএম বা ইজিএমে ভোটাভুটি আইনানুগভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে সিএ/সিএমএ/সিএস তিনটি কর্পোরেট প্রফেশনে যারা প্রাকটিসিং ফার্ম পরিচালনা করছেন তাদের সবাইকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অর্থ্যাৎ প্রায় দুই শতাধিক সিএ ফার্ম শতাধিক সিএমএ ফার্ম এবং ১১টি সিএস ফার্ম ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে কাজ করছে।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ৩ জুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কতৃর্ক ইস্যুকৃত কর্পোরেট গর্ভনেন্স কোড ২০১৮ তে কর্পোরেট গর্ভনেন্স সার্টিফিকেট ইস্যু করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে নিদের্শনা দিয়েছে। যেখানে সিএ/সিএমএ/সিএস তিনটি কর্পোরেট প্রফেশনে যারা প্রাকটিসিং ফার্ম পরিচালনা করছেন তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ বর্তমানে প্রায় দুই শতাধিক সিএ ফার্ম, শতাধিক সিএমএ ফার্ম এবং ১১টি সিএস ফার্ম কর্পোরেট গর্ভনেন্স সার্টিফিকেট ইস্যু করার কাজ করছে।
যে ১১টি সিএস প্রাকটিসিং ফার্ম কর্পোরেট গর্ভনেন্স সার্টিফিকেট দিচ্ছে তারা হল- Al Muqtadir Associates, Itrat Husain & Associates, M. Mohashin & Co., Suraiya Parveen & Associates, SARashid & Associates, Jasmin & Associates, Mohammmadullah & Associates, Mhammad Sanaullah & Associates, Haruner Rashid & Associates, Hadisul Alam & Associates, Amicus Professional Associates.
এখানে লক্ষণীয় যে, মাত্র ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি তিন শতাধিক লিস্টেড কোম্পানি ও দুই শতাধিক ননলিস্টেড কোম্পানিকে প্রতি বছর রেটিং করছে, আবার মাত্র ৩৮টি সিএ ফার্ম তিন শতাধিক লিস্টেড কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল অডিট করছে। অথচ ১১টি চার্টার্ড সেক্রেটারিজ প্রাকটিসিং ফার্ম থাকা সত্ত্বেও বিএসইসি কমপ্লায়েন্স অডিট ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে কাজ করার জন্য শুধুমাত্র চার্টার্ড সেক্রেটারিজ বা সিএস প্রাকটিসিং ফার্মকে না রেখে তিনটি কর্পোরেট প্রফেশন এর সকল প্রাকটিসিং ফার্মকেই কাজ করার সুযোগ রেখেছে। ফলে কাজ পাওয়ার জন্য কম ফি বা তুলনামূলক কম সম্মানিতে হচ্ছে যেনতেন ভাবে মানহীন কমপ্লায়েন্স অডিট বা কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশনের কাজ। আবার কিছু কিছু লিস্টেড কোম্পানিতে এখনও হচ্ছে সেই আগের দিনের ফাইন্যান্সিয়াল অডিটের মতো নামসর্বস্ব কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশন যা ফাইন্যান্সিয়াল অডিট এর সাথে নাম মাত্র ফিতে বা এমনি এমনি করে দিচ্ছে।
আইসিএসবি কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চার্টার্ড সেক্রেটারিজ এক্ট ২০১০ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন কর্পোরেট পেশা, অথ্যাৎ কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে গর্ভনেন্স প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করার জন্য যোগ্য কর্পোরেট পেশাদার তৈরি করাই সিএস ইনস্টিটিউটের মূল লক্ষ্য। মূলত সিএ, সিএমএ যেমন একাউন্টিন প্রফেশন তেমনি সিএস হল গর্ভনেন্স প্রফেশন যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রতিষ্ঠিত পেশা। বিএসইসি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কমপ্লায়েন্স অডিট ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আইসিএসবি সদস্যভূক্ত সিএস প্রাকটিসিং ফার্মকে কাজ করার নিদের্শনা দিতে পারত কিন্তু তারা তা করেনি। বিএসইসি কমিমন খুব সহজেই সিএস প্রাকটিসিং ফার্মকে দিয়ে মানসম্মত কর্পোরেট গুডগভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগকে সফল করতে পারতেন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল অডিটের জন্য যেমন ৩৮টি সিএ ফার্মের সমন্বয়ে একটি অডিট প্যানেল গঠন করা হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রেও সিএস প্রফেশনাল ফার্মকেও কমপ্লায়েন্স অডিটর ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে যদি বিএসইসি কর্তৃক চূড়ান্ত করে দেয়া হয় তাহলে কর্পোরেট সেক্টরে গুডগভর্নেন্স প্রতিষ্ঠায় এটি একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। এবং বলা যায় যে, ৮টি ক্রেডিট রের্টিং কোম্পানি যদি সকল লিস্টেড কোম্পানির ক্রেডিট রের্টিং করতে পারে তাহলে ১১টি সিএস প্রাকটিসিং ফার্মও মানসম্মত ভাবে সকল তালিকাভুক্ত কোম্পানির কমপ্লায়েন্স অডিট করতে পারবে।
বর্তমান সরকারের কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে মহৎ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আলাদা প্রফেশন এবং ইনস্টিটিউট (আইসিএসবি), শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রকারী কর্তৃপক্ষের এহেনও ভূমিকার কারণে এর সফল বাস্তবায়ন আশঙ্কাজনকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ চার্টার্ড সেক্রেটারি প্রফেশন তথা আইসিএসবি’র সদস্যদের প্রাকটিসিং চার্টার্ড সেক্রেটারি হিসেবে কর্পোরেট গভর্নেন্স কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট দেওয়া ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে কাজের ক্ষেত্রটি স্বল্প পরিসরেই থেকে যাচ্ছে।
সুতরাং বিএসইসি‘র কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড, ২০১৮ এর সেকশন ৯ এর সাব সেকশন ১ এ সিজিসি সার্টিফিকেশন দেয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সিএস প্রফেশনকে রেখে সংশোধন হওয়া দরকার। এবং একইভাবে ১০/৩/২১ তারিখে দেয়া বিএসইসি কর্তৃক দেওয়া ডাইরেক্টিভ এর সেকশন ৯ সংশোধন হওয়া দরকার যেন শুধুমাত্র সিএস প্রফেশনই এজিএম ও ইজিএমে ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে কাজ করতে পারে।
শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ফাইন্যান্সিয়াল অডিট ও ক্রেডিট রেটিং রির্পোট কর্পোরেট কমপ্লায়েন্স অডিটের তুলনায় অনেক বেশি বড় একটি ক্ষেত্র এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। বিএসইসি তালিকাভুক্ত ৮টি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি এবং ৩৮টি সিএ ফার্ম দ্বারা যদি ৩৮৫ টি লিস্টেড কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং ও ফাইন্যান্সিয়াল অডিট করা সম্ভব হয় তাহলে এই ৩৮৫ টি কোম্পানির কমপ্লায়েন্স অডিট ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজারের সার্টিফিকেশন এর কাজও ১১টি সিএস প্রাকটিসিং ফার্ম দিয়েই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
অতএব কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুধুমাত্র সিএস প্রাকটিসিং ফার্মকে দিয়ে কমপ্লায়েন্স অডিট ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার এর কাজ করার নির্দেশনা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
ভেবে দেখবেন স্যার, ৮ এ যদি হয় ১১তে কেন নয়? https://corporatesangbad.com/451769/ |