নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে তামাকের কারণে প্রতিবছর দেড় লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। তামাকের কারণে মৃত্যু ধীরে ধীরে ঘটে বলে সেটি কারো চোখে পড়ে না। অথচ এটি করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর বলে গবেষণায় উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য লুৎফুন্নেসা খান।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত আইসিটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সাথে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
লুৎফুন্নেসা খান বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু ও নারীরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। আর তামাকের কারণে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন ৪৪২ জন মানুষ। এই অকাল মৃত্যু রোধ করতে এবং পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে নারী-শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় চলতি সংসদেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া পাশের দাবি জানান।
লুৎফুন্নেসা খান বলেন, বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। তামাকের পাশাপাশি জর্দা, গুল, সাদাপাতার মতো তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে নারীরা মুখের ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া তামাকের কারণে গর্ভবতীদের গর্ভপাত হচ্ছে, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যুও হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সাথে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ‘‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের গুরুত্ব’’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি। বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মোঃ আব্দুস সালাম মিয়া, প্রোগ্রামস ম্যানেজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)।
নারী মৈত্রীর তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমম্বয়কারী নাসরিন আক্তার জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধিত খসড়াতে ধুমপানের নির্ধারিত এলাকা বিলুপ্ত, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ, খুচরা বিড়ি-সিগারেট বিক্রি বন্ধ, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ ও সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবার্তার পরিসর ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আইনটিকে আরও শক্তিশালী করবে। ফলে তামাকের কারণে একদিকে যেমন মৃত্যুহার কমবে অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটবে।
সিটিএফকে এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোঃ আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, ‘করোনায় গত ৩ বছরে বাংলাদেশে ৩০ হাজার মানুষ মারা গেছে। অথচ তামাকের কারণে প্রতিবছর মারা যাচ্ছেন ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ। তামাকের কারণে মৃত্যু ধীরে ধীরে ঘটে বলে সেটি কারো চোখে পড়ে না। তামাকের কারণে প্রতিবছর সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার দাবি, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী যাতে চলতি সংসদেই পাশ করুন, সাধারণ মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করুন।’
কাউন্সিলর শাহিন আক্তার সাথী বলেন, রেস্টুরেন্টগুলোতে ধূমপানের জন্য বিশেষ জায়গা বরাদ্দ থাকায় নারী ও শিশুরা পরোক্ষভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
শিখা চক্রবর্তী বলেন, তরুণ প্রজন্মের মাঝে বর্তমানে ই- সিগারেটের ব্যবহার বেড়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ই-সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় ই-সিগারেট বাতিলের দাবি জানাই।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, আইনটি দ্রুত পাসের মাধ্যমে শক্তিশালী করা গেলে নারী ও শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নাগরিকদের তামাক পণ্য ব্যবহারের সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া নারী কাউন্সিলররা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশের দাবি জানান।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
তামাকে বছরে দেড় লাখ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে https://corporatesangbad.com/44808/ |