ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গায় ছুটল পরীক্ষামূলক ট্রেন

Posted on September 7, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মা সেতু হয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৭ মিনিটে কমলাপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার উদ্দেশে ট্রেনটি ছেড়ে যায়। এর মধ্যদিয়ে দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হলো পদ্মাপাড়ের মানুষের। ট্রেনটি ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে।

পরীক্ষামূলক ট্রেনের যাত্রী হিসেবে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

পরীক্ষামূলক যাত্রার প্রথম এই ট্রেনটি লোকোমাস্টার হিসেবে এনামুল হক এবং সহকারী লোকোমাস্টার হিসেবে এম এ হোসেন ট্রেন চালাচ্ছেন। আর গার্ড হিসেবে ট্রেন পরিচালনা করছেন আনোয়ার হোসেন।

এ সময় আরও উপস্থিত আছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়েল মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং রেলওয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের কর্মীরা।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৭ মিনিটে লোকমোটিভসহ ৮টি কোচের পরীক্ষামূলক ট্রেন একটি লম্বা হুইসেল দিয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ে। এর মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা যুক্ত হলো রেলপথে।

ঢাকা-ভাঙ্গা পরীক্ষামূলক এ ট্রেন অটো সিগনাল পদ্ধতিতে চলাচল করায় আধুনিক রেল নেটওয়ার্কে নতুন মাইলফলক রচিত হলো। আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু দিয়ে আনুষ্ঠানিক ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে, বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে আটটি বগি নিয়ে বিশেষ এ ট্রেনটি পদ্মা সেতু অতিক্রম করে। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া এবং নিমতলা স্টেশনে করা হয় যাত্রা বিরতি। এরপর রাত পৌনে ৮টায় রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছায় শীতাতপ সুবিধা সম্বলিত ট্রেনটি।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ জানান, পদ্মা সেতু এবং দুই পাড়ের রেলপথ প্রস্তুত এখন। ১০ অক্টোবর উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ রেলপথে পদ্মা সেতু অতিক্রমের পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রুতগতির ট্রেনে চড়ে রাজধানী থেকে প্রধানমন্ত্রীর ফরিদপুরের ভাঙ্গা যাওয়ার কথা। এর পরদিনই রেলপথ উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তাই প্রকল্পজুড়ে এখন ভীষণ ব্যস্ততা। আর পদ্মা সেতুর রেলপথ চালু এবং প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে পদ্মার দুই পাড়ের মানুষ উচ্ছ্বসিত।

বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগ ফরিদপুর স্টেশন মাস্টারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) নতুন এ রেলপথ দিয়ে প্রথম ঢাকা থেকে ভাঙ্গা স্টেশনে যাচ্ছে ট্রায়াল ট্রেনটি। আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রেলপথের উদ্বোধন করবেন। পুরো প্রকল্পে নির্মাণ হতে যাওয়া ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথের দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান বলেন, ‘চীন থেকে আমদানি করা সাতটি নতুন কোচ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি নতুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন), একটি পাওয়ার কার (ডব্লিউপিসি), একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং কার এবং গার্ড ব্রেক (ডব্লিউজেডিআর), একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার (ডব্লিউজেসি), দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার (ডব্লিউজেসিসি) এবং একটি শোভন চেয়ার কোচ (ডব্লিউিইসি) বগি থাকবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাঙ্গা থেকে রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, খুলনা, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, যশোরের বেনাপোল রুটে এমনকি ভারতে যাওয়ার মৈত্রী ট্রেনেরও পদ্মা সেতু ব্যবহারেরও প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে পায়রা বন্দরসহ আরও নতুন নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে পদ্মা সেতুর রেললাইনে। এ ৮২ কিলোমিটার রেলপথে কোনো লেভেল ক্রসিং থাকছে না। ১২০ কিলোমিটার গতিতে রেল চলাচলে সবরকম দক্ষতা অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথ প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ২০টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে ১৪টি নতুন এবং ছয়টি ইতোমধ্যে রয়েছে। আগের স্টেশনগুলোও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। একবার সম্পূর্ণ হলে ট্রেনগুলো ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম হবে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হওয়ায় ঢাকা-যশোর রেললাইনের কোথাও কোনো রেল ক্রসিং থাকবে না।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গেন্ডারিয়া ও কেরানীগঞ্জ স্টেশনে রেলওয়ে টার্ন-আউটের কিছু অসমাপ্ত কাজ (একটি রেললাইন থেকে অন্য রেললাইনে স্থানান্তর) ছিল যা ২৫ আগস্টের মধ্যে শেষ হয়েছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন ধরে গেন্ডারিয়া হয়ে কমলাপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করতে পারবে। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১০০টি আধুনিক যাত্রীবাহী কোচ কেনা হয়েছে। এগুলো দিয়ে রেক সাজিয়ে নতুন ট্রেন চালু করা হবে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প শীর্ষক পুরো প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা-যশোর রুট খুলে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।’

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৩ মে অনুমোদিত হয়েছিল। তখন এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। এরপর ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করা হলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। খরচ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকার চুক্তির) ভিত্তিতে চীনের অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। চীনের ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি) প্রকল্পের কাজ করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২৬৬ দশমিক ৭৯ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। বাকি খরচের যোগান দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।