মো. হাবিবুল্লাহ : পৃথিবীতে কত সুন্দর সুন্দর নামী দামী বস্তু থাকতে, কেন জানি মাটির প্রতি আমার ভালবাসা খুব বেশী জন্মে। মাটির সুন্দর শান্ত বৈশিষ্টই প্রধান কারণ মনে করি ।কবি সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, গবেষক যাঁরাই এ মাটিকে ভালবেসে গেছেন, আজ তারাই মহীয়ান, তাঁদের স্মতি চিরঅম্লান- মাটির নিজস্ব গুনগত বৈশিষ্ট নিয়ে ভেবে দেখলাম, মাটি মূল্যহীন হোক, অমূল্য হোক, মাটি সাধারণ বস্তু নয়…
এ মাটির উপরেই বাস করি, এ মাটির উপর ভর দিয়েই গর্ব করে চলি এবং আমাদের মৃত্যুর পর এ মাটিই হবে সকলের নিশ্চিত ঠিকানা। তা জেনেও একটু ভাবিনা মাটি কি? শুঁকে দেখিনা মাটির গন্ধ কেমন! কি তাঁর রূপ বৈশিষ্ট? যে দিকে তাকাই শুধু মাটি আর মাটি, আমাদের পায়ের নীচেই মাটি।
এ মাটি আমাদের এত কাছে, যখন ইচ্ছা হয় তখনি তাঁকে স্পর্শ করতে পারি। এটি এত সহজলভ্য হওয়ার কারণে এটা যে অমূল্য সম্পদ তা কখনো আমরা ভাবি না, তাই আমরা মাটিকে যখন মাটি হিসেবে দেখি তখন মাটিকে অতি সাধারণ অবহেলার বস্তু হিসেবে গণ্য করি। সেটা যদি জমি হিসেবে দেখি তখন মাটিকে মুল্যবান সম্পদ মনে করে থাকি। সেই সাথে মাটি শান্ত স্বভাব জাতের তাই কারো চরিত্রের সুন্দর উদারহণ হিসেবে মাটিমত শান্ত বলে উদারহন হিসেবে ব্যবহার করি। মাটিকে কেটে টুকরো টুকরো করে পা দিয়ে দলে দলে কর্দমা করলেও মাটির কিছুই যায় আসে না। পানির যেমন অপচয় রোধের জনসচেতনতা থাকলেও মাটির বিষয়ে কেউ বলতে শুনিনি, মাটির অপব্যবহার হয় কীনা সে সম্পর্কে আমরা জানিনা। মাটির একদিকে ক্ষয় হচ্ছে অন্য পাশে পূর্ণ হচ্ছে। পানের পানি পৃথিবী থেকে কমে গেলেও মাটি কমে যাবে কোন বৈজ্ঞানিক এমন ধারণা করেছে শুনিনি। তাই আমাদের কাছে মাটির মূল্যায়ন হয় না। কয়েক কেজি মাটি নিয়ে কেউ যদি হাটে বসে থাকে তা কেউ কিনবে তো দুরের কথা, মূল্য কত এ কথাটিও বোধ করি জিজ্ঞেস করবে না। বরং সবাই কৌতুহলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলবে লোকটি মনে হয় মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন, পাগল!
তাহলে ধরে নিতে পারি মাটির মূল্য নেই ? নিশ্চই মাটির মূল্য আছে, যখন খাল বিল মাঠসমূহ গর্ত মাটি দিয়ে ভরাট করে মানুষের চলাচলের পরিবেশ সৃষ্টিসহ বসতি স্থাপনের যোগ্য করে তোলা হয় তখন এটিকে আমরা জমি বা স্থান বলি। তাহলে আমরা জমি কেনা বেচা করি মাটি নয়। স্থান ভেদে জমির দাম কম বেশী হয়ে থাকে। কিন্তু সব জায়গার মাটি কিন্ত্ত একই রকম। উচ্চমূল্য আর নিম্ন মূল্যই হোক সেটা মাটির গুণাগুণের উপর মূল্য ধার্য্য হচ্ছে না। জমির আয়তন ও এলাকার গুরুত্বভেদে জমির মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে।
যাইহোক না কেন মাটি ছাড়া আমাদের অস্থিত্ব কল্পনা করা যায় না। তাই মাটি ছাড়া আমাদের অবস্থান কি করে আশা করি। সত্যিই মাটি শুধু অমূল্যই নয় অত্যাবশ্যকীয় বস্তু। মাটি নিয়েই কিছু বলতে চাই, তবে এ প্রসঙ্গে নয়।
সমস্ত পৃথিবীটা মনে হয় মাটি দিয়েই আটকানো। মাটি নিয়ে যতই ভাবি না কেন তার গুণ ও ক্ষমতা রহস্যের যেনো শেষ নেই ! মাটিই এ পৃথিবীর অস্থিত্ব। উপরে সীমাহীন খোলা আকাশ। তবে মাটির নির্দিষ্ট সীমানা আছে। এ মাটির উপরেই সাগর মহাসাগর। কারণ সাগরে তলায় মাটি আছে বলেই মাটির উপরেই সাগরের অবস্থান মনে করি। মাটিকে আমরা যত সাধারণ মনে করি কিন্তু এটি সাধারণ বস্তু নয়। কেননা এর ক্ষমতা ও গুণাগুন এবং মাটি সৃষ্টির রহস্য সর্ম্পকে আমরা অনেকেই জানার চেষ্টা করিনা।
মাটির ভেদাভেদ আছে জানি, বেলে মাটি, এঁটেল মাটি আরো কি আছে। ভেদাভেদ যাইহোক পৃথিবীর সবমাটি স্বগোষ্ঠির মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই।মাটি মাটির সাথে একসাথে জড়িয়ে লক্ষ কোটি বছর কাটিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ মাটি, মাটি থেকে কখনও পৃথক হয় না। পৃথক তখনি হয় যখন তাঁর মৃত্যু ঘটে। প্র্শ্ন মাটির মৃত্যু কিভাবে হয়? যখন আমরা মাটিকে আগুনে পুড়ে ইট, হাড়ি পাতিল, টেরাকোটা ইত্যাদি তৈরী করি, আগ্নেয়গিরি,লাভার কঠিন তাপে মাটি পুড়ে শক্ত কঠিন প্রস্তরে পরিণত হয়।সে পুড়া মাটি কখনো মাটিতে মেশেনা। এভাবেই তাজা মাটির ক্ষয় বা মৃত্যু হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাহলে মাটিরও প্রাণ আছে, মাটিকে জীবন্ত বস্তু মনে করতে পারি।
পরিবেশ বিপর্যযের মাধ্যমে মাটির অবস্থানগত পরির্তন হচ্ছে। সাগর, নদী কূলভেঙ্গে মাটি রিসাইক্লিন করছে প্রতিদিন। কোথাও পলি জমে এঁটেল মাটি হচ্ছে, কোথাও এঁটেল মাটি বালির সাথে মিশে দোঁ আশ, বেলে দোঁআশ মাটির জন্ম হচ্ছে। মাটির ক্ষয় হচ্ছে এটা সত্যি। ক্ষয় হয়ে কোথাও জেগে উঠে চর, কোথাও গভীর খাদে পরিণত হয়। তবে মাটি ক্ষয় হয়ে যাবে কোথায় পৃথিবীর মধ্যেই আছে। পৃথিবীর বাইরে যাওয়ার সুযোগ আছে কি? নদী ও সাগরকে মাটির রূপ ও গুণাগুণ পরিবর্তনের প্রকৃতির এক আশার্য্য মেশিন বলতে পারি।
মাটির মৌলিককে কি বলবো তা আমার জানা নেই। হয়ত নিশ্চই মাটির কোন মৌলিক উপাদান দিয়ে আমাদের দেহখানা তৈরী। মাটির এত প্রকার গুণ ও ক্ষমতা অনুভব করতে পেরে হতবাক হয়ে যাই। কোটি কোটি জীব জন্তু গাছ পালার মৃত্যুর পর এ মাটিতে পচে গলে মিশে যাচ্ছে ।
একটি কঠিন লোহার খন্ড মাটিতে কয়েক বছর রেখে দিলে তারও অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়, তাহলে মাটিকে আমরা সাধারণ বস্তু হিসেবে ভাবি কি করে । অথচ এক টুকরো মাটি যদি হাজার বছর ঘরে রেখে দেয়া যায় সেটা যেভাবে রাখবো সেভাবেই থাকবে। তার রং, বর্ণের কোন পরিবর্তন হবে না মনে করি। কারণ মাটি নিজেই নিজের প্রিজারভেটিভ। যে কোন শশ্যদানা, বীজ ঘরে রাখলে ওভাবেই থাকে। সেটি যদি মাটির উপর ফেলে রাখি, বীজ ফেটে চারা গাছ বের হয়ে আসে, কি আশ্চার্য গুণ মাটির। সে অন্কুরোদ্যম ক্ষমতা দিয়ে উদ্ভিদের জন্ম দিতে পারে।
সুবাহানআল্লাহ ! অথচ আমরা মাটির সম্পর্কে সবাই জেনেও আমার মাটিকে সাধারণ ভাবেই চিন্তা করে থাকি। এ মাটিতেই লোহা থেকে শুরু করে স্বর্ণ, রৌপ্য, হীরার মত মুল্যবান ধাতুর জন্ম। বড় বড় প্রস্তরের জন্ম এ মাটিতেই হচ্ছে, মাটিই এ সমস্ত কঠিন শিলার জন্ম দিচ্ছে। খনিজ দ্রব্য হিসেবে কয়লা, গ্যাস, পেট্রোলিয়ামজাত সকল দাহ্য বস্তু এ মাটির মধ্যেই থাকে এ মাটির মধ্যেই জন্ম হচ্ছে। এমন অসাধারণ গুণাগুণ ক্ষমতা সম্পন্ন মাটিকে আমরা সাধারণ বস্তু মনে করতে পারি? সহজ লভ্য বলে আমাদের কাছে তার গুরুত্ব কি অপরিসীম নয় ?
লেখক: গীতিকার, নাট্যভিনেতা ও আবৃত্তিকার।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
নিবন্ধ: 'মাটি'র ভালোবাসা মানুষকে করে মহীয়ান https://corporatesangbad.com/444490/ |