ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহের মধ্যে ২ সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা-মা

Posted on August 31, 2023

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : রাজধানীর মিরপুরের মধ্য পাইকপাড়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে। দুই সন্তানকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান তাদের মা-বাবা।

নিহতরা হলেন আরাফাত (৯) এবং রাইদা (৬)। আরাফাত একটি স্কুলে কেজি এবং রাইদা নার্সারিতে পড়ত।

মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তার দম্পতি জানান, গত ১৬ আগস্ট প্রথমে ছেলের হালকা জ্বর শুরু হয়। পরে স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডেঙ্গু পরীক্ষার কথা বলেন। ওই দিন রক্ত পরীক্ষা করা হলে পরদিন ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। এরপর ওই চিকিৎসক বাসায় চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দেন। ১৮ আগস্ট ছেলে পেটব্যথার কথা বলে। এরপর ওইদিন ফের ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়। প্রথম পরীক্ষায় প্লাটিলেট ১ লাখ ৬২ হাজার ছিল। দ্বিতীয় পরীক্ষায় ১৫ হাজারে নেমে আসে। ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় মিরপুরের ডেলটা হাসপাতালে ছেলেকে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে রাউফকে। ছেলে হাসপাতালে যাওয়ার আগে শুধু বলছিল, বাবাকে ডাক দাও, আমার পেটব্যথা করছে।

ছেলে রাউফের লাশ ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরে দাফন করা হয়। যদিও ইব্রাহিমের গ্রামের বাড়ি ভোলা। ছেলে মারা যাওয়ার রাতেই মেয়ে রাইদার গায়ে জ্বর আসে। ওই রাতে ঢাকায় ফিরে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয় রাইদার। পরদিন ডেঙ্গু পজিটিভ আসে মেয়ের। ডেল্‌টা ও ইবনে সিনা হাসপাতাল ঘুরে সিট না পেয়ে এক দালালের মাধ্যমে ১৯ আগস্ট ধানমন্ডির রেনেসাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মেয়েকে।

ইব্রাহিমের অভিযোগ, রেনেসাঁ হাসপাতালে পাঁচ দিন রাখা হলেও সঠিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়নি মেয়ে রাইদার। সুস্থ হয়েছে জানিয়ে ২৪ আগস্ট রাইদাকে বাসায় নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। বাসায় ফেরার পর আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে নানা সমস্যা ধরা পড়ে। পরে মেয়েকে ওইদিন মহাখালীর ইউনিভার্সেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পিআইইউসিতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। দামি সব ইনজেকশন দেয়া হয়। কিন্তু কোনো কিছুতেই মেয়েকে বাঁচানো যায়নি। ২৫ আগস্ট সকালে মেয়েও না ফেরার দেশে চলে গেল।

বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে ছেলে-মেয়েকে হারালাম। পুরো ঘরেই তাদের স্মৃতি। এক হাতের ওপর মেয়ে, আরেক হাতের ওপর ছেলে ঘুমাত। সন্তানদের হারিয়ে আমাদের মতো অভাবী আর দুঃখী আর কেউ নেই।

তিনি বলেন, আমার ছেলে-মেয়ের হায়াত ছিল না, সৃষ্টিকর্তা তাদের নিয়ে গেছেন। আমার সবকিছু শেষ। কিছু বুঝে উঠার আগেই রাজপুত্র আর রাজকন্যাকে আমরা হারালাম। ভাগ্যকে দোষ দেয়া ছাড়া আর কী বলব। কত স্বপ্ন ছিল। সাধ্য অনুযায়ী সন্তানদের সব শখ পূরণের চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ হাসপাতালগুলোর খুবই খারাপ অবস্থা। টাকা থাকলেও ভালো চিকিৎসা না পেয়ে আমার মেয়েটা মারা গেল, এটাই মেনে নিতে পারছি না।

বাবা ইব্রাহিম একটি তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানে পরিবহন শাখায় চাকরি করেন। পাশাপাশি রেন্ট-এ-কারের ব্যবসা রয়েছে তার। আর স্ত্রী রাবেয়া একজন গৃহিনী।

ইব্রাহিম আরও বলেন, আমি আগে মাঝে মাঝে মোটরসাইকেলে স্কুলে দিয়ে আসতাম ওদের। কখনো কখনো রিকশায় যেত। এখন এই গাড়িতে (প্রাইভেটকার) কে চড়বে। ঘরের মধ্যে ওদের স্মৃতিচিহ্ন। যে ঘরে ওদের পায়ের চিহ্ন পড়বে না, সেখানে আমাদের পক্ষে বসবাস করা সম্ভব নয়। সেপ্টেম্বর থেকে আমরা বাসা ছেড়ে দিয়েছি।

মা রাবেয়া আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মেয়েটা লম্বায় প্রায় আমার সমান হয়ে গিয়েছিল। বাসায় বেশিরভাগ সময় আমরা তিনজনই থাকতাম। কত মজা করতাম। এই ঘরে এখন আমি একা কীভাবে থাকব?