যুক্তরাষ্ট্রে ২৪৭ বছরের ইতিহাসে ২ প্রেসিডেন্ট গ্রেফতার

Posted on August 27, 2023

ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭ বছরের ইতিহাসে ২ জন প্রেসিডেন্ট গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগষ্ট) ফৌজদারি অভিযোগে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টার ফুলটন কাউন্টি কারাগারে আত্মসমর্পণ করতে গেলে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ১৫১ বছর (১৮৭২ সালে) আগে ইউলিসিস এস গ্রান্ট রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় দ্রুত গতিতে তার ঘোড়া দৌঁড়ানোর অপরাধে ডিপার্টমেন্ট অফ ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া (এমপিডি) পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন প্রথম প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি যিনি ফৌজদারি অভিযোগে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ‘মগশট’ বা মুখের ছবি নেন কারা কর্তৃপক্ষ। মার্কিন ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যার মুখের ছবি নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছেন।

২০২০ সালে জর্জিয়া রাজ্যের নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের মামলায় স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তিনি ফুলটন কাউন্টি কারাগারে আত্মসমর্পণ করেন। এর পরই তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে ট্রাম্পের রেকর্ড প্রকাশ করে। সেখানে তাঁর প্রসঙ্গে লেখা ছিল, ট্রাম্পের উচ্চতা ছয় ফুট তিন ইঞ্চি; ওজন ৯৭ কেজি; স্ট্রবেরিসদৃশ চুল ও নীল চোখ; কয়েদি নম্বর পি ০১১৩৫৮০৯।
অবশ্য গ্রেপ্তারের কিছুক্ষণ পরই জামিন পেয়েছেন ট্রাম্প। জর্জিয়ার আটলান্টার কারাগার থেকে জামিন পেতে তাঁকে ২ লাখ ডলার মুচলেকা দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ আনা হয়। ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত পাঁচ মাসে ফৌজদারি মামলায় এটা ট্রাম্পের চতুর্থ গ্রেপ্তারের ঘটনা। তবে পুলিশ রেকর্ডে রাখার জন্য এবারই প্রথম তার মুখচ্ছবি নেওয়া হলো। এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের এভাবে ছবি নেওয়া হয়নি। এ তালিকায় পরিচিত মার্কিন ব্যক্তিত্বদের মধ্যে আছেন ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, আল ক্যাপৌন ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। ট্রাম্প বরাবরই তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করে আসছেন। আগামী বছর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তিনি।

জর্জিয়ার আটলান্টার ফুলটন কাউন্টি কারাগারে এবারের আত্মসমর্পণ ছিল অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। কারণ এখানে তাঁকে মুখের ছবি দিতে হয়েছে। তাঁর কয়েদি নম্বর হয়েছে। কারা ওয়েবসাইটে অপরাধীদের তালিকায় তিনি রেকর্ডভুক্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ২০ মিনিটের মতো ভবনের ভেতরে ছিলেন ট্রাম্প। এ সময় বাইরে শত শত সমর্থক তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে যা ঘটেছে, তা বিচার ব্যবস্থার জন্য অবমাননা। তিনি যে কিছুই করেননি, এটা সবাই জানেন। ট্রাম্প ছাড়াও তাঁর কয়েকজন সাবেক সহযোগী মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ‘ব্লাক বয়েস ফর ট্রাম্প’ সংগঠনের নেতা হ্যারিসন ফ্লয়েড।

ট্রাম্পের ‘মগশট’ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ‘মগশট’ অনেক রাজনীতিকের ক্যারিয়ার শেষ করে দিলেও ট্রাম্পের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। তাঁর সমর্থকদের জন্য এটা হয়ে উঠেছে প্রচারণার অস্ত্র। তারা মনে করেন, কোনো দোষ না করলেও তাদের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ‘মগশটে’র ছবি ও ‘কখনও আত্মসমর্পণ’ নয় লেখা টি-শার্ট বিক্রি শুরু হয়েছে। মগ এবং স্টিকারেও এ ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

এদিকে ১৫১ বছর আগে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় দ্রুত গতিতে তার ঘোড়া দৌঁড়ানোর অপরাধে ডিপার্টমেন্ট অফ ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া (এমপিডি) পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস গ্রান্ট।

১৮৭২ সালে দ্রুত গতিতে তার ঘোড়া দৌঁড়ানোর অপরাধে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউলিসিসকে উইলিয়াম ওয়েস্ট নামে একজন আফ্রিকান আমেরিকান পুলিশ সদস্য থামিয়ে দেন।

অফিসার ওয়েস্ট বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি কাকে থামিয়েছেন। তিনি বলেন, মিঃ প্রেসিডেন্ট, আপনি খুব দ্রুত যাচ্ছেন। ওহ, আমি জানি আমি খুব দ্রুত যাচ্ছিলাম। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে আমি আর কখনও এটা করবো না। পরের দিন অফিসার ওয়েস্ট আবার রাষ্ট্রপতিকে রাস্তায় ঘোড়া দৌড়াতে দেখেছিলেন। ওয়েস্ট তাকে আবার থামিয়ে বলে, আমি তোমাকে গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছি। তাই তাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায়। ওয়েষ্ট কিছুটা বিব্রত কারণ, সর্বোপরি, এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি। কিন্তু তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেসিডেন্ট গ্রান্ট অফিসারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

গ্রান্ট বলেন, আমি জানি আমি দ্রুত গতিতে ছিলাম। আমাকে গ্রেফতার করা উচিত। এটা নিয়ে খারাপ ভাববেন না। এটি সেই সময়কাল যখন গ্রান্ট রাষ্ট্রপতি ছিলেন (১৮৬৯-১৮৭৭)। এই সময় গ্রান্ট বলেন যে তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন তা নিশ্চিত করার জন্য যে গৃহযুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করা হয়েছিল তা সত্যিই কাজ করেছে। তাই উইলিয়াম ওয়েস্টের বিদ্রুপ, একজন আফ্রিকান আমেরিকান, তাকে থামানো আমার মনে হয় বিস্ময়কর।

আইনের শাসন। যদিও রাষ্ট্রপতি গ্রান্ট তার বিচারের জন্য উপস্থিত হননি। তিনি তার ২০ ডলারের বন্ড বাজেয়াপ্ত করেছেন। অফিসার ওয়েস্ট কয়েক দশক ধরে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি গোপন রেখেছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯০৮ সালে ওয়াশিংটনের একটি সংবাদপত্র ঘটনাটি প্রকাশ করেন। গল্পটি বলেছিলেন।