ডিজিটাল ব্যাংকে সিটির বিনিয়োগে কিছু পরিবর্তন

Posted on August 13, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক : একটি কনসোর্টিয়ামের অংশ হিসেবে ডিজি১০ ব্যাংক পিএলসি নামের ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে কিছু পরিবর্তন এনেছে সিটি ব্যাংক লিমিটেড। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, ডিজি১০ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ যোগান দেবে সিটি ব্যাংক। এর আগে ১১.১১ শতাংশ মূলধন যোগান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

সিটি ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র অনুসারে, শুরুর দিকে ৯টি ব্যাংক নিয়ে কনসোর্টিয়াম গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আর এই কনসোর্টিয়ামের আওতায় ডিজি১০ ব্যাংক পিএলসি (Digi10 Bank Plc) নামে যে ডিজিটাল ব্যাংক গঠন করা হবে, তার পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২৫ কোটি টাকা। কনসোর্টিয়ামে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যাংক সমপরিমাণ শেয়ার থাকবে। তাতে সিটিসহ প্রতিটি ব্যাংকের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ শেয়ার থাকার কথা। আর বিনিয়োগ করার কথা ছিল প্রায় ১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

কিন্তু আলোচিত কনসোর্টিয়ামের ভিত্তি আরও মজবুত করা এবং প্রস্তাবিত ব্যাংকটির নামের যৌক্তিকতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কনসোর্টিয়ামের সদস্য সংখ্যা একটি বাড়িয়ে ১০টিতে উন্নীত করা হয়। কিন্তু আগের মতোই কনসোর্টিয়ামের সব সদস্যের সমসংখ্যক শেয়ার ধারণের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। এ কারণে প্রতিটি সদস্য ব্যাংকের শেয়ার সংখ্যা কিছুটা কমে যায়।

উল্লেখ, গত সোমবার (৭ আগস্ট) বিকেলে অনুষ্ঠিত সিটি ব্যাংকের ৬৪০তম পর্ষদ সভায় ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত কনসোর্টিয়ামে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন পর্যন্ত ওই কনসোর্টিয়ামের সদস্য সংখ্যা ছিল ৯টি। পরে আরও একটি ব্যাংককে এতে যুক্ত করা হয়।

প্রস্তাবিত ডিজি১০ ব্যাংক পিএলসি (Digi10 Bank Plc) এর স্পন্সর বা উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছে- সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), পূবালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি), মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।

আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমতি সাপেক্ষে ব্যাংকগুলোর কনসোর্টিয়াম গঠনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্তি সাপেক্ষে ডিজি১০ ব্যাংক পিএলসি (Digi10 Bank Plc) তার কার্যক্রম শুরু করবে।

ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহীদের কাছ থেকে আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনে করা যাচ্ছে। অনলাইনে আবেদন জমা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আলাদা একটা পাতা খুলেছে। সেখানে গিয়ে আগ্রহীরা আবেদন জমা দিতে পারবেন। আবেদন ফি বাবদ বাংলাদেশ ব্যাংককে অফেরতযোগ্য পাঁচ লাখ টাকা জমা দিতে হবে।

একেকটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা। প্রচলিত ধারার ব্যাংক করতে প্রয়োজন হয় ৫০০ কোটি টাকা। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা মূলধন জোগান দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স বা সনদ দেয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে এই ব্যাংককে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার ছাড়তে হবে। আইপিওর পরিমাণ হতে হবে উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক অবদানের ন্যূনতম পরিমাণের সমান।

এই ব্যাংক স্থাপনে উদ্যোক্তাদের অর্ধেককে হতে হবে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। বাকি অর্ধেককে হতে হবে ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ডিজিটাল ব্যাংককে কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রচলিত ব্যাংকের মতো সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ন্যূনতম নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) বজায় রাখতে হবে।

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ কতজন পরিচালক হতে পারবেন, তা ঠিক করা হবে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে- যার মধ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, রেগুলেশন, গাইডলাইন, সার্কুলার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

গ্রাহকদের লেনদেনের সুবিধার্থে ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য দিতে পারবে। লেনদেনের জন্য কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। অবশ্য এই ব্যাংকের সেবা নিতে গ্রাহকরা অন্য ব্যাংকের এটিএম, এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবে না। বড় ও মাঝারি শিল্পেও কোনো ঋণ দেয়া যাবে না। শুধু ছোট ঋণ দিতে পারবে।