রাজধানীতে শুরু হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প পণ্যের ৪টি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী

Posted on January 8, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে শুরু হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প পণ্যের চারটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। এগুলো হলো- ২০তম গার্মেন্টস টেকনোলজি শো বাংলাদেশ (জিটিবি) ২০২৩, ১২তম আন্তর্জাতিক গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং (জিএপি) ২০২৩, প্রথম ভারত টেক্সটাইল ট্রেড ফেয়ার বাংলাদেশ (আইটিটিএফ) ২০২৩ এবং আন্তর্জাতিক ইর্য়ান অ্যান্ড ফ্রেবিকস এক্সপো।

রাজধানীর বসুন্ধরায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আগামী ১১ জানুয়ারি বুধবার থেকে এই প্রদর্শনীগুলো শুরু হবে। শেষ হবে ১৪ জানুয়ারি। চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য এই চারটি প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

গার্মেন্টস শিল্পের সবচেয়ে বড় এই চারটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে গার্মেন্টস মেশিনারি, সুতা, কাপড়, গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টরের বিভিন্ন ধরনের পণ্য প্রদর্শন করা হবে।

রোববার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর এক হোটেলে (লা ভিঞ্চি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রদর্শনীর আয়োজকরা এসব তথ্য তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে আস্ক ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশনস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান ভূঁইয়া জানান, “গার্মেন্টস টেকনোলজি শো বাংলাদেশের যাত্রা যখন শুরু হয়েছিলো তখন গার্মেন্টস সেক্টরে রপ্তানি ছিল ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আরএমজি সেক্টরের উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বছরের পর বছর ধরে এই প্রদর্শনী সহায়তা করছে। দেশের আরএমজি খাতে পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে এবং নতুন বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে এই খাতকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। গার্মেন্ট টেকনোলজি বাংলাদেশ ২০২৩ এই সেক্টরের আধুনিকীকরণ এবং আপগ্রেড করার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো প্রদর্শন করবে এবং বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিকে স্থানীয় শিল্পের দোরগোড়ার নিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।”

গ্যাপ এক্সপো ২০২৩- হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং ব্যাপক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিং এক্সপোজিশন। এই মেলায় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল প্রদর্শন করা হবে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) দেশের প্রায় ১৮০০’র বেশি গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিং ফামের্র প্রতিনিধিত্ব করে। সংগঠনটি গার্মেন্টসের আনুষঙ্গিক পণ্য এবং প্যাকেজিং আরএমজি সেক্টরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসাবে কাজ করে। এই শিল্প ৫ লাখের বেশি মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছে।

ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন মতি আরএমজিসহ সকল রপ্তানিকারক এবং বায়িং হাউসগুলোর মালিকেদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমাদের সদস্যরা তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবন এবং সংগ্রহগুলো এই শোতে প্রদর্শন করবে। তিনি সকলকে এই সেক্টরের অগ্রগতির জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।

এবার ইন্ডিয়া টেক্সটাইল ট্রেড ফেয়ার বাংলাদেশ ২০২৩ ও সাউথ গুজরাট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টি (এসজিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘আইটিটিএফ বাংলাদেশ ২০২৩’ এর প্রথম মেলায় বিভিন্ন ধরণের সুতা, কাপড়ের পাশাপাশি লেইস, জরি মেটেরিয়ালস এবং অ্যাকসেসরিজের ব্যবহার করে তৈরি ব্রাইডালসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক প্রদর্শন করা হবে। গার্মেন্টস মালিক এবং রপ্তানিকাররা বুটিকস এবং দেশীয় ব্র্যান্ডের এমব্রয়ডারি করা কাপড় এবং স্পোর্টসওয়্যাগুলোর একটি বাজার তৈরি করবে।

গত ২০ বছর ধরে গার্মেন্টস টেক বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতের বৈশি^ক প্রযুক্তিগুলোকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসছে। এই প্রদর্শনীগুলোতে আরএমজি সেক্টরের কাটিং, সেলাই, ফিনিশিং, এমব্রয়ডারি মেশিনারিসহ বিভিন্ন ধরনের আনুসঙ্গকি পণ্য এক সাথে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। এবারের প্রদর্শনীতেও দেশে বিদেশের আধুনিক প্রযুক্তিগুলো প্রদর্শন করা হবে।

প্রদর্শনী প্রোফাইল:

সুতা: পুরুষ, নারী এবং শিশুদের পোশাকের জন্য হাতে ও যান্ত্রিকভাবে বোনা, কৃত্রিম, প্রাকৃতিক এবং মিশ্রিত ফাইবার থাকবে। সূক্ষ্ম সুতা- শার্টিং, উল, পলিয়েস্টার-উল এবং পলিয়েস্টার ভিসকোস স্যুটিং, বিশুদ্ধ এবং মিশ্রিত লিনেন, ডেনিমস, সুতির টুইল এবং ড্রিল ইত্যাদি প্রদর্শন করা হবে। আরো থাকবে ফাইন হাই-এন্ড সিল্ক, সিল্ক কটন, রেয়ন, পলিয়েস্টার, নাইলন, পলিয়েস্টার নেট ফেব্রিক্স, ফ্যান্সি জ্যাকার্ড ফেব্রিক্স, এমব্রয়ডারি ফ্যাব্রিকস, জরি ফেব্রিক্স, এথনিক গার্মেন্টস এর ফেব্রিক্স, ডিজিটাল প্রিন্টেড ফেব্রিক্স, ফয়েল প্রিন্টেড ফেব্রিক্স, স্ক্রীন প্রিন্টেড ফেব্র্রিক্স, প্রিন্টেড কাপড়।

পোশাক উপকরণ: প্রিন্ট এবং সলিড, এমব্রয়ডারি, ডেনিম, কটন টুইলস এবং ড্রিলস, রঙ্গিন কাজের শাড়ি, প্রিন্ট করা শাড়ি, অভিনব কাপড়, লেহেঙ্গা, প্লেইন শাড়ি, হ্যান্ডওয়ার্ক শাড়ি।

গার্মেন্টস: এথনিক ও স্পোর্টস গার্মেন্টস, এমব্রয়ডারি গার্মেন্টস, থ্রি পিস ও কুর্তি।

নকশা ও অলঙ্করণ: ফেন্সি লেস, জরি লেস, ছাঁটাই, বিনুনি, ল্যাটকান লেস ইলাস্টিক টেপ, কভারড রাবার ইলাস্টিক থ্রেড, জুতার ইলাস্টিক টেপ, জ্যাকার্ড ইলাস্টিক টেপ, পলিয়েস্টার রিজিও টেপ, জিম রিস্ট সাপোর্ট, সার্জিক্যাল ইলাস্টিক টেপ, রাবার থ্রেড ও সরু কাপড়।

খাত অনুযায়ী উন্নয়ন: ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এক অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৩৫.৪৭ শতাংশ। জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ১২ মাসে ৫২.০৮ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে পোশাক খাতেই ছিল ৪২.৬১ বিলিয়ন ডলারের। এটি সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে মোট রপ্তানির ৮১.৮১ শতাংশ। আগের অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৩১.৪৫ বিলিয়ন ডলারের। গত অর্থবছরে বাংলাদেশে আরএমজি খাতের সাফল্যের মূল কারণ ছিল রপ্তানির বৈচিত্র্যকরণ। বাংলাদেশের আরএমজি শিল্প ১১টি দেশে বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করে। বাংলাদেশের বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি তালিকায় থাকা ১১টি দেশের মধ্যে সাতটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ রয়েছে।

২০২২ সালের জুলাই-অক্টোবর সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট ১৬.৮৫৩ বিলিয়ন রপ্তানির ৮৫.৩৬ শতাংশ ছিল বোনা পোশাক, পোশাকের আনুষঙ্গিক এবং হোম টেক্সটাইল। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩১.৪৫৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে আরএমজি রপ্তানি ৩৫.৪৭ শতাংশ বেড়ে ৪২.৬১৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২১-২২ সালে আরএমজি রপ্তানির মূল্যের দিক থেকে বাংলাদেশ সর্বকালের সর্বোচ্চ অর্জন করেছে। মোট রপ্তানিও এই সময়ের মধ্যে ১৯.৭৩ শতাংশ বেড়েছে। সেই সাথে ৪৩.৫০০ বিলিয়নের লক্ষ্যমাত্রা পার করেছে।