’
হেলাল সাজওয়াল : প্রাকৃতজ শামীম রূমি টিটন রচিত অমৃত রসে মৃগতৃষ্ণা প্রেমে মহাকাব্য-উপন্যাসটিতে অনন্ত জীবনের পটভূমি বিষয় বৈচিত্রে অতি সরল ও প্রাঞ্জল করে উপস্থাপন করা হয়েছে। ছন্দোবদ্ধ বাস্তব জীবন চিত্র তুলেধরে পাঠককে মহাকাব্যিকতায় উত্তোরণ ঘটিয়ে জীবন উপলব্ধির দিকে ধাবিত করতে চেয়েছে। আত্মগত সঙ্কট ও ব্যাক্তির নিমজ্জন রোধে মানব দর্শন, জগত দর্শন জনিত যত জিজ্ঞাসার মীমাংসা খোঁজা হয়েছে। এই মহাকাব্য-উপন্যাসে বিশেষত মানুষের অনন্ত জীবনের চির সত্যকে উম্মোচন করে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে- মৃত্যুই শেষকথা নয়। স্বর্গ-বেহেশত- অমৃত- অনন্ত সবকিছুর মূলেই নিহিত মনের শান্তি-প্রশান্তি-অনন্ত-যৌবন-চির-দু:খহীন অনন্তজীবন।
মহাকাব্য-উপন্যাসের স্বরূপ, আঙ্গিক কাঠামো, শাস্ত্রীয় নিয়ম-কানুন এবং বিশেষ শৈলী, সাহিত্যের আলংকারিক উপাদান ছন্দ-ভাব-রুপ-রসে অমৃত রসে মৃগতৃষ্ণা প্রেমে মহাকাব্য-উপন্যাসটি পাঠক মনে একটি সতন্ত্রবোধ জাগাতে সচেষ্ট হয়েছে। মানাবিক বিপর্যয়ে বিপন্ন পৃথিবীর অনিয়ন্ত্রিত ভোগ তৃষ্ণা, ব্যাভিচার, ভোগদখল, খুনাখুনি, মিথ্যা আর আত্মপ্রবঞ্চনার বিষবাস্প যখন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময় তখনই মহাকাব্য- উপন্যাসের নায়ক সচেতন প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। স্বপ্ন দেখেন নতুন এক পৃথিবীর, যদিও রেষারেষিতে পৃথিবীর শিরা উপশিরায় ভোগবাদ এবং কামাগ্নি ফনা তুলে ধরেছে তবু আমৃত আনন্দের রেশটুকু খুজে পান তিনি। প্রেম ভালোবাসায় পৃথিবীকে ভরিয়ে তুলতে এক সবুজ পৃথিবীর পথে যত জরাজীর্নতা পরিষ্কার করে দিতে চান। আর এজন্যে তিনি অমৃত সন্ধানী হয়েছেন, হয়েছেন মৃত্যুর ফেরিওয়ালা, সন্ধান করেছেন একদল চির প্রেমিকের যাদের সংগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হবে চির স্বাধীনতা।
যেভাবে “চির প্রেমিকেরা অনিবার্য কারণে যুদ্ধে নামে!/ধরাদেহে আশাহীন মরানদী-দুঃস্বপ্ন!/মরে যায় প্রাণপ্রেম! জলহীন বাঁচে কি কেউ! প্রেমহীন পৃথিবীতে ভ্রƒণহীন যৌবন ছাড়া?/তাই চির প্রকৃতির প্রেমিকেরা যুদ্ধে নামে:
আমাদের পা মাটিতে ছিলো বলে মাটি সত্য!/মাটি দেহে পৃথিবীর দু মেরুতে দেহ সত্য!/দেহে- মন- প্রানে প্রেমে ত্রিসত্যে মহাবিশ্ব!। পৃথিবীকে ভালোবাসে-প্রেমিক যারা!/ চির স্বাধীনতা আসেনা প্রকৃত প্রেমিক ছাড়া!
মৃগতৃষ্ণায় চঞ্চল মহাকাব্য- উপন্যাসের নায়ক দেখতে পান সত্যের যারা প্রেমিক তারা সব ঘর হারা,অপর দিকে মানবিক চেতনাবোধ-শূন্য! সুবোধ সুমতি আজ নির্বাসনে, সকল সূচকে বাড়ছে শুধু ভোগবাদ।
“সভ্যতা ভোগ করে টাকার সে ডাইনোসর!/ লেনা-দেনা ভালোবাসা দেহপ্রেম টাকায় চলে!/চালে-জালে হরদম বিকিকিনি! কী বেদনায়/বিষের পেয়ালা চুমিয়া হেটে চলেছে সক্রেটিস!”
আমি সে প্রেমিক ভাঙ্গিনি বিশ্বাস, ঠকাইনি কোনোদিন” নায়কের সচেতন চিত্ত অনুভূতি প্রখর হয়ে ওঠে। তার দরদী মন পরম মমতায় অন্তর্জলে ভরে ওঠে। প্রানের আকুতি ব্যাথা বেদনা, বাঁচার আকুলতা, ব্যাকুলতা নিয়তির কাছে কীভাবে অসহায় প্রান নীরবে কাঁদে- এমনসব ঘটনার ব্যঞ্জনায় দুমড়ে মুচড়ে ওঠে তার হৃদয় মন”হায় কি লজ্জা! মানুষ হারে তার বিবেকের কাছে!/ কী ভোগের লালসায় লেলিহান ক্রোধের শিখা?/ সব পুড়ে ছাড়খার! নিষ্পাপ অবুঝ শিশু!/ মায়াহীন তৃষ্ণায় পড়ে থাকে সাগরতীরে!/ অবলার বিবস্ত্র লাশ শব বেওয়ারিশ!/ বিপন্ন মানবতা! ক্ষুধার্ত দুধের শিশু। কেঁদে খুন! আহারে ‘মা’! কে করেছে হত্যা খুন?/ মানবিক ভিখ মাগে-দুঃখিনীর বুদ্ধ রাজা, ওহে জীব; ত্যাগী হও! কখনো কি সকাল হবে?/ ধরাময় বাজে কি সুমধুর আজানের ধ্বনি!।
তিনি দেখেন সর্বত্রই যেন বিষময় মৌন বিষাদময় ছায়া, দেহ মন প্রাণে বোধ জ্ঞানে টানাটানি, দিক মত পথে মতভেদের ধ্বস্তাধ্বস্তি জবরদস্তি যত বাড়াবাড়ি বন্ধ করে আদর্শিক বিশ্বাসের সঙ্গ সাম্প্রতিক জীবনতৃষ্ণার সংযোগ ঘটানোর নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় জীবনের অর্থ খুজে পেতে চেয়েছেন উজ্জীবিত হতে চেয়েছেন নতুন আলোকে-
“আলোকিত হও মন-পৃথিবীতে প্রেমের আলো!/ প্রাণলোকে প্রসারিত হও প্রাণ জোতির্লোকে, ছায়াপথে বিভূষিত মনপ্রাণ অনন্তরে। সম্যক ঋদ্ধতা অনন্ত চিরজীবন!/ কমর্জীবনে- ধর্মপ্রাণে নেই জবরদস্তি”
অমৃত রসে মৃগতৃষ্ণা প্রেমে মহাকাব্য-উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্যে অনন্য নজির, অতুলনীয় অমিত অশেষ জ্ঞানের আকর, নিশ্চিত অফুরন্ত সম্ভাবনায় সৃষ্টির সঙ্গে ¯্রষ্টার সম্পর্ককে নগ্নভাবে প্রকাশ করা হয়েছে! এ বিশাল কাহিনীর সত্য পাঠ নিশ্চয়ই জীবনকে বদলে দিবে। অমৃত রসে শান্তি প্রশান্তিতে অন্তর ভরে উঠবে এত আর সন্দেহ সংশয় কী? অনন্ত জীবনে পবিত্র শান্তিই তো শেষ কথা। মানুষের সরল অন্তর! সেখানেও আছে নৈশব্দের অন্ধকার- যেখানে আলোর কনা পড়লে জ্যোতিত হয়! জলের বুদ্বুদে সমুদ্র তলদেশের স্নিগ্ধ আলোয় জাগ্রত জীবনের স্বরূপ ও অনন্ত জীবনের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে পাথর পাথার ভেঙ্গে খুঁড়েখুঁড়ে এগিয়ে যেতে হয়! জীবনকে যেভাবে সংসার কর্মজীবনে খুঁড়তে হয় অস্থি সন্ধিতে সে ভাবে দেহ কোষ কলার প্রতি রক্ত কনিকায় খুঁড়ে জীবন মৃত্যুর শৃংঙ্খল বেড়ি ভেঙ্গে অমৃত রসের সন্ধান করতে হয়।“
সুমতি- সুবোধ! প্রজ্ঞাপ্রেমে ফিরে এসো অন্তরে! জ্যোতির্জ্ঞানে ফিরে এসো নিশিভোর! কী মোহঘোরে? না জেনেও জীবনের গতিতেই জীবন চলে!/ যে জানে না গরলের পেয়ালায় চুমুক দেয়; যে জানে সে অমৃতের পেয়ালায় চুমুক দেয়! অন্ধরা চোখ রাখে অন্তরে! শ্রবন- বোধে জেগে থাকে ইন্দ্রিয়, যারা- মূক-পঙ্গু-বধির। দৃষ্টিতে চোখ কান পুতেঁ রাখে অন্তরালে! অন্ধ বধির বোবা জীবনকে স্পর্ষ করে!/ অন্তর বোধে প্রসারিত যতদূর বিশ্ব জগত! আহা কীযে মহিমায় মহাময় গহন গহে!/ অথৈ-অপার সম্ভাবনা নুরজ্যোতি অন্তরে!’
“শব্দ চয়নে ব্যাঞ্জনাকে পাধান্য দেয়া হয়েছে আসলেই শব্দের অর্থের যে শক্তি তা মাদকীয়, উত্তেজক। প্রমিত বাংলাভাষার গাথুনীতে নতুন অনেক শব্দ পাওয়া যায়। এছাড়া বিদেশী শব্দের ব্যাবহার নেহায়েত কম নয়। তবে প্রয়োগ বহুলতা নেই, দেশজ সংস্কৃতির মজবুত সূত্র এর নান্দনিকঐতিহ্য, ধর্মাধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা- অমৃত রসে মৃগতৃষ্ণা প্রেমের কাব্যভাবনাকে করেছে বিস্ফোরণমূখী দেশকাল সীমানার উর্দ্ধে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে অনন্ত জ্যোতির্লোকে। অনন্ত কে? কি তার স্বরূপ এমন সব গূঢ় রহস্যের চিরায়ত সংস্কৃতির ধারায় ঋদ্ধ এক মহাকাব্যিক পটভুমিতে বিধৃত! “দেহের জমিনে মানুষ তার নিজ জীবনেরক্রীতদাস” জীবনের এমন জটিলতর বিষয়ের জবাব যখন খুঁজে পায় তখন সংসার ধর্মকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাধনা হিসেবে গন্য করা হয়েছে মহাকাব্য-উপন্যাসটিতে।
সংসারকে সাজাতে সুন্দর করে অনন্ত প্রেমের পথে সংসারই মানুষের জন্য সবচে পবিত্র সাধনালয় অনন্ত জগতের আর কোথাও এমন সাধনালয় খুজে পাওয়া যাবে না এরপর চির জরামৃত্যুহীন শান্তির জীবন। অমৃত রসে মৃগতৃষ্ণা প্রেমের রহস্য উম্মোচন এখানেই শেষ নয়। বিশ্বব্যাপি অসত্য, অন্যায় অত্যাচারকে পরাজিত করে এই রক্তপঙ্কিল, বিদ্বেষ- বিচ্ছেদ-কলুষিত পৃথিবীকে অমৃত ধারায় স্নাত করে এক স্বর্গ সুন্দর শান্তিময় পৃথিবী রচনার স্বপ্নে বিভোর মহাকাব্য-উপন্যাসের নায়ক, তার নিজ জীবনের নিদারুন ব্যর্থতা- গ্লানি মুছে ফেলে সত্যের আনন্দরূপ- অমৃতের লহরা স্রোতে কল্লোলিত।
“যত ভেক মৃত্যুতে! এ দেহের দু:খ ব্যথা।/ দেহের ধর্ম নাই! ধর্ম সে অন্তরের!/ অন্তরে দয়াময়ছাড়া আর কেহ নাই!তো-/সবাই মৃত্যু বরণ করে!/ আমি মৃত্যুরে খাই।
মহাকাব্য প্রাচীন ধারার কাব্য ভাবনা। কিন্তু মহাকাব্য- উপন্যাসের ধারনা একেবারেই নতুন। বাংলা সাহিত্যে অমৃত রসে মৃগতৃষ্ণা প্রেমে মহাকাব্য উপন্যাসটি পাঠে অনেক শিক্ষনীয় উপাদান খুজে পাওয়া যায়। বর্তমান প্রজন্ম এবং অনাগত সময়ের জ্ঞান সাধনায় যারা ব্রতী হবে তাদের জন্য অমৃত রসে মৃগতৃষ্ণা প্রেমে জগত জীবন ও বিজ্ঞানের এক মহাসমন্বয় তৈরি করবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায়।
মহাকাব্যের রচয়িতা শামিম রুমি টিটন এ যাবত প্রায় দেড় শতাধিক বই রচনা করেছেন। তার রচিত অনেক বই জাতীয় টেক্সট বই হিসেবে স্কুল কলেজে পড়ানো হচ্ছে। যুগ সন্ধিক্ষণের এবং অনাগত সময়ের বিশ্ব-শান্তির চিন্তক শামিমরুমি টিটন একজন অনন্য জীবন শিল্পী; তার তুলির আচরে জীবন জগতের অনেক গূঢ় তত্ব ও তথ্য বেড়িয়ে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
সকল সূচকে বাড়ছে শুধু ভোগবাদ; মহাকাব্য-উপন্যাস ‘অমৃত রসে মৃগতৃৃষ্ণা প্রেমে https://corporatesangbad.com/401986/ |