১৩ রাষ্ট্রদূত ও মিশন প্রধানকে সতর্ক করল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

Posted on July 26, 2023

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূত ও মিশন প্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

বুধবার (২৬ জুলাই) রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিকেল ৪টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এ কথা জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেয়া ১৩ রাষ্ট্রদূত ও মিশন প্রধানকে ডাকা হয়েছিল। তাদের আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা না বলতে আহ্বান জানিয়েছি। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সচেতন থাকতেও তাদের সতর্ক করা হয়েছে।

এছাড়া ১৩ রাষ্ট্রদূতের দেওয়া বিবৃতিকে ‘অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি তলব নয়, আমন্ত্রণ ছিল। আমরা তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এর আগে জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে আমরা তলব করেছিলাম। এটাকে আমরা তলব বলছি না। আমরা ওই দেশগুলোতেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানাব। সে দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, হিরো আলম ইস্যুতে ১৩ মিশনের বিবৃতি বস্তুনিষ্ঠ ছিল না। এ ধরনের কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা তাদেরকে (কূটনৈতিকদের) বলেছি যে, এটি একটি ঘটনা যা দিয়ে সারাদিনের শান্তিপূর্ণ, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। এই নির্বাচনে কোনো সহিংসতা হয়নি। একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রতিফলন করে না। দ্রুত প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তারা মূল্যায়নের বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেননি।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই, তারা বিবৃতি দেওয়ার আগেই এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবু তারা পরদিন বিবৃতিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যা অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়। তাদের বিবৃতির বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বিবৃতিটি তড়িঘড়ি করে অপরিণতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করি, আমাদের আজকের আলোচনার পর তারা সেটি উপলব্ধি করবেন। ভবিষ্যতে এমন অকূটনৈতিক আচরণ থেকে বিরত থাকবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা তাদের কূটনৈতিক আচরণবিধি সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন স্মরণ করিয়ে দিয়ে গঠনমূলক হবার পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি আরও সতর্ক করা হয়েছে যে, সরকারকে পাশ কাটিয়ে বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাতহীনতা বর্জিত আচরণ কেবলই পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে।

নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা বিদেশি কূটনৈতিকরা বলে যাচ্ছেন, গত ২০ বছর ধরে আমরা দেখছি। নতুন করে সরকার কেন এমন অবস্থানে গেল?- এমন প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ না, এটা নতুন না। এই ধরনের প্রেক্ষাপটে আমি দুই-একটা উদাহরণ দিলাম, আমরা ইনডিভিজ্যুয়াল লেভেলে, একসঙ্গে বেশ কয়েটি রাষ্ট্র এর আগে করেনি। এখানে তাদের ফান্ডামেন্টাল কিছু ফলস আছে, মিডিয়া স্টেটমেন্টে। সেগুলো তুলে ধরেছি। যখনই এ ধরনের ঘটনা আসবে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেটা তখনই করব, এর আগেও করেছি আমরা। এর ধারাবাহিকতা আছে, র‌্যানডম কিছু নয়।’

এর আগে, গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও হাইকমিশন বিবৃতি দিয়েছিল।

যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছিলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা এ ঘটনার পূর্ণ তদন্ত এবং জবাবদিহিতার আহ্বান জানাই। আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে।’

এ ছাড়াও এই উপনির্বাচনের পরদিন এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করেছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। পরে জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে তলব করা হয়।

আরও পড়ুন:

‘জনভোগান্তি হলে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে’

রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদূতদের সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আর সংলাপ নয়: ইসি