স্বাস্থ্য ডেস্ক: বিশ্বজুরে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অতিবর্ষণজনিত কারণে বন্যার প্রকোপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে ডেঙ্গু। এবার ডেঙ্গু জ্বরে হঠাৎ করেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে রক্তচাপ, কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, রোগী অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে, যা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নামে পরিচিত। ডেঙ্গু হওয়ার পর বাড়িতে চিকিৎসা নিলে রোগীর দিকে একটু বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। জ্বরের সময় বেশির ভাগ মানুষেরই খাবারে অরুচি থাকে এবং এ সময় বিপাক বৃদ্ধির কারণে ক্যালরি ও পুষ্টির চাহিদাও বেড়ে যায়। রোগীর বিপাকের হার, শরীরের তাপমাত্রা, হজমশক্তি ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে পথ্য নির্বাচন করতে হবে।
ডেঙ্গু হলে খাদ্য তালিকায় যেসকল খাবার রাখবেন:
- তরল খাবার: পানি শরীরের জন্য অপরিহার্য, পানিসহ অন্যান্য তরল মিলে সারা দিনে ৩ লিটার তরল নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য তরল যেমন তাজা ফলের শরবত (অবশ্যই বাসায় তৈরি), মুরগি বা সবজির স্যুপ দিতে হবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পরপর, যা পানিশূন্যতা রোধে সাহায্য করবে।
- তরল খাবারের ক্যালরি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কম পাওয়া যায়। তাই তরল খাবারের পাশাপাশি রোগীকে নরম খাবারও দিতে হবে, যা সহজে হজম হয়। যেমন জাউ ভাত, সুজি, সাগু, নরম কাঁটা ছাড়া মাছ। অরুচির জন্য রোগী বেশি খাবার খেতে পারে না। তাই এমনভাবে খাবার নির্বাচন করতে হবে, যা অল্প খেলেও ক্যালরির চাহিদা পূরণ করতে পারে অর্থাৎ অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন নরম পাতলা মুগ ডালের খিচুড়ি, পুডিং, ফিরনি, পায়েস, দই, মিষ্টি দই, মিল্কশেক।
- ডেঙ্গু জ্বরের সময় প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যায়। শরীরের ক্ষয় পূরণ ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। দুধ, ডিম, মাছ, মুরগি, চর্বিহীন লাল মাংসে প্রোটিন আছে।
- ডেঙ্গু জ্বরের সময় প্লাটিলেটের সংখ্যা ও হিমোগ্লোবিন কমে যায়। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে এবং প্লাাটিলেট তৈরি করতে শরীরেও প্রচুর আয়রনের প্রয়োজন। কলিজা, ডিম, ডালিম, মিষ্টিকুমড়ার বিচি, বিট জুস, খেজুর, কিশমিশ, জলপাই, সবুজ শাকসবজি প্লাটিলেট ও হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে।
- অন্ত্র থেকে আয়রন শোষণের জন্য ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার প্রয়োজন। এই ভিটামিন অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে বেশি পরিচিত। তাই কমলা, জাম্বুরা, আনারস, লেবু ও অন্যান্য টকজাতীয় ফল খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- যদি জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া ও বমি হয়ে থাকে তবে শাকসবজি, ডাল, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। এ সময় জাউ ভাত, কাঁচা কলার ঝোল খুবই উপকারী। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ বা মুরগির পাতলা ঝোল দেয়া যেতে পারে। তখন তরল খাবার হিসেবে মুরগির স্যুপ, রাইস স্যুপ, আপেল জুস বা আপেল পিউরি দেয়া যেতে পারে। ডাবের পানি ও ওরাল স্যালাইন ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।
- বর্জনীয় খাবার: অতিরিক্ত তেল-মসলাজাতীয় খাবার পাকস্থলীকে অ্যাসিডিক করেও তোলে। ফাস্ট ফুড, ভাজাপোড়া খাবার, কাঁচা সবজি বা কাঁচা খাবার (যেমন সালাদ), অতিরিক্ত শক্ত খাবার ইত্যাদি পরিহার করা উচিত। কারণ ডেঙ্গু জ্বরে হেমোরেজ বা রক্তক্ষরণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- কড়া দুধ-চা, কফি, এনার্জি ড্রিংক এসব খাবার শুধু হজমেই অসুবিধা করে না, দ্রুত আরোগ্য লাভের পথেও বাধা প্রদান করে। এ ছাড়া এতে থাকা ক্যাফেইনও ডাইইউরেটিক, যা শরীরকে পানিশূন্যতা করে। তাই এ সময় এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলাই উত্তম।
কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ