সিদ্ধান্তহীনতায় নন লাইফ বীমা

Posted on November 9, 2021

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ : বীমা আইন-২০১০ পাশ হবার আগে নন-লাইফ বীমা শিল্পে গুরুতর অনিয়ম চলছিল। পরবর্তীতে ২০১২ সালে ৩২/২০১২ নং সার্কুলারের মাধ্যমে বীমা কমিশন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। সকল পক্ষ এক মত হলেও পরবর্তীতে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

নিয়ম কানুন মেনে চলার মানসিকতা বীমা শিল্পের মালিক ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে তৈরী হয়নি বা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তৈরী করতে পারেননি তার প্রধানতম কারণ হলো নন-লাইফ বীমায় যারা কাজ করেন তাঁরা অফিসার নাকি এজেন্ট এই ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বীমা এসোসিয়েশন ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেননি।

০১/০৭/২০১৯ইং তারিখে সার্কুলার নং ৬৪/২০১৯ এর মাধ্যমে ব্যাংকের হিসাব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নন-লাইফ বীমায় শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ ও উদ্দেশ্য ভালো হলেও কয়েকটি কোম্পানীর জন্য তা সফলকাম হতে পারেনি। ঐ সকল কোম্পানীগুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণেই আবার বীমা সেক্টরে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।

আবার ১০/০২/২০২০ইং তারিখের সার্কুলার নং-৭৫/২০২০ যা ১লা মার্চ ২০২০ থেকে নন-লাইফ বীমা কোম্পানীসমূহ ব্যবসা আহরণের নিমিত্তে সকল উন্নয়ন কর্মকর্তাগণকে কমিশনের ভিত্তিতে বীমা এজেন্ট হিসাবে পদায়ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়।

আমরা সকলেই জানি নন-লাইফ বীমা ব্যবসা উন্নয়ন কর্মকর্তা নির্ভর। তাই তাদের পদ-পদবী সকল কোম্পানীর জন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জিএডি সার্কুলার নং-৬/২০২১ তারিখ ২৫/০৩/২০২১ইং-এর মাধ্যমে একইরূপ সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নন-লাইফ বীমায় উন্নয়ন কর্মকর্তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তারাই দীর্ঘদিন ধরে নন-লাইফ বীমার প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই তাঁদের ডিষ্ট্রিবিউশন চ্যানেল থেকে আলাদা করে বীমা খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

পরবর্তীতে ০৪/০২/২০২১ইং তারিখে সার্কুলার নং-৮৪/২০২১ এর মাধ্যমে প্রচলিত এজেন্ট কমিশন ০% নির্ধারণ করা হলেও বীমা কর্মীদের বেতন ভাতা ও চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বীমা শিল্পে অস্থিরতার সৃষ্টি করে। তা থেকে পরিত্রাণের জন্য বিভিন্ন কোম্পানীকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবসা আহরণে সচেষ্ট হতে দেখা যায়।

সর্বশেষ আবার ২৪/১০/২০২১ইং তারিখে সার্কুলার নং ৮৪/২০২১(পুনঃ) এর মাধ্যমে জানানো হয় যে, এজেন্ট নিয়োগ প্রবিধানমালা ২০২১ চূড়ান্তকৃত কিন্তু কখন থেকে তা কার্যকর হবে তা বলা হয়নি বা প্রবিধানে কি আছে তা বীমা কোম্পানীগুলোকে জানানো হয়নি। তাই আবারো বীমা ব্যবসায় অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে।

মার্চ ২০২১ইং থেকে অনেক কোম্পানীর উন্নয়ন কর্মকর্তাগণ বেতন পাচ্ছেন না আবার বীমা পেশা ছেড়েও দিতে পারছেন না। কারণ কোম্পানীগুলো তাঁদের প্রাপ্য প্রভিডেন্ট ফান্ড ফেরত ও হিসাব নিকাশ সমন্বয়ে আগ্রহী না। তাই তাঁরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আবার যে সকল কোম্পানী অনৈতিকভাবে কমিশন ও কর্মীদের বেতন দিতে পারছে তাঁরা ভালই আছেন।

উচ্চ কমিশনের বিনিময়ে প্রিমিয়াম সংগ্রহ, কম পুনঃবীমা, দেরিতে দাবী নিষ্পত্তি ও অন্যান্য প্রভাব, দুর্বল জনশক্তি, পরিচালকদের হস্তক্ষেপ ও পরিচালনায় দুর্বলতা, ব্যাংকারদের কমিশন বাণিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন অনিয়মের কারণে নন-লাইফ বীমা খাত অগ্রসর হতে পারছে না।

এমনিতেই বীমা শিল্পে শিক্ষিত জনশক্তি কাজ করতে চায় না, তাই এজেন্ট বা বীমা কর্মী বা উন্নয়ন কর্মকর্তা যে কোন একটি প্রক্রিয়াকে নির্বাচন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কোন রকম সংশয় থাকলে চলবে না এবং সকলকে একযোগে তা বাস্তবায়নের অংগীকার করতে হবে। তবেই নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের শুভ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ।