৩৩ বছর ধরে এক টাকায় চা-পান বিক্রি করেন মহির

Posted on July 19, 2023

আহসান আলম, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: গ্রামীণ সড়কের এক পাশে ছোট দোকান। পাশেই জ্বলছে চা তৈরির চুলা। দোকানে সাজানো পানের ডালা ও কিছু শুকনো খাবার। সামনে রয়েছে কয়েকটি বাঁশের মাচা। সেখানে বসে চা পান করছেন বেশ কয়েকজন লোক। আর সেই চা ও পান বিক্রি হচ্ছে এক টাকায়। এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান? হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান বিক্রি করে আসছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বোয়ালমারি গ্রামের দোকানি মহির উদ্দিন।

বর্তমান বাজারে চা এখন পাঁচ টাকার কমে বিক্রি হয় না। পানের খিলির দামও অন্তত চার টাকা। কালক্রমে চা পাতা ও চিনির দাম বাড়লেও বাড়েনি তার চায়ের দাম। মূলত শখের বসেই মানুষকে এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান খাওয়ান তিনি। এত কম দামে চা ও পান বিক্রির কারণে তার দোকানটিও নতুন পরিচিতি পেয়েছে ‘এক টাকার মোড়’ নামে।

সেই ১৯৯০ সাল থেকে এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান বিক্রি করে আসছেন মহির উদ্দিন। শুধু তার গ্রামের মানুষ নয়, সকাল-বিকেল কম দামে সুস্বাদু চা-পান খেতে দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ ভিড় করছেন তার দোকানে। দাম কম হলেও তার দোকানের চা ও পান খুবই সুস্বাদু বলে জানান ক্রেতারা।

মহির উদ্দিনের দোকানে চা খেতে আসা মেহেরপুরের জমির উদ্দিন বলেন, ‘আমি ফেসবুকে দেখে এখানে কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে চা-পান খেতে এসেছি। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। এসে দেখি সত্যি সত্যিই এক টাকায় চা আর এক টাকায় পান বিক্রি হচ্ছে। এখানে আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন।’

হেমায়েতপুর গ্রাম থেকে বন্ধুদের নিয়ে চা খেতে আসা আনিসুর রহমান জানান, বর্তমান বাজারে চা পাতা ও চিনির যে দাম তাতে এক টাকায় চা বিক্রি করে লোকসান ছাড়া আর কিছুই হবে না। কিন্তু দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে মহির উদ্দিন যে কাজ করছেন তা অবাক করার মতো। তাই বিষয়টি যাচাই করতে ও চা-পান খেতে তার দোকানে এসেছেন বলে জানান তিনি।

তালসারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, মানুষকে বিনামূল্যে নয় বরং ১ টাকায় চা ও পান খাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন মহির উদ্দিন। তার দোকানে যারা চা ও পান খেতে আসেন তাদের অধিকাংশই নিন্ম আয়ের মানুষ, দিনমজুর, অসহায় ও দুস্থ। এভাবে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে।

সারাজীবন একই দামেই চা-পান বিক্রি করবেন বলে জানান দোকানি মহির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে দোকান খোলা হয়। সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে বেচা-বিক্রি। পরে নিজের কৃষিজমিতে কাজ করতে যাই। বিকেল হলে আবারও শুরু হয় দোকানের কার্যক্রম। রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বেচা-বিক্রি। প্রতিদিন চা-পান বিক্রি করে ৩০০ টাকার মতো আয় হয়। আর তাতেই চলে সংসার। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে মহাজনপুর কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। এখন স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়েই সংসার।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায় লাভ করা আমার উদ্দেশ্যে নয়। গ্রামের খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষ যেন সকাল-বিকেল একসঙ্গে বসে চা-পান খেতে খেতে গল্পগুজব করতে পারেন সেই কারণেই এত কম দামে চা-পান বিক্রি করি। এতে গ্রামের মানুষের মধ্যে বেড়েছে সম্প্রীতি, এতে সফল হয়েছে আমার উদ্দেশ্য।’

ইতোমধ্যে মহির উদ্দিনের দোকানের এক টাকার চা ও এক টাকার পানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে এলাকা জুড়ে।