আমাদের কি প্রকৃত ধর্মজ্ঞান ও দেশপ্রেম আছে?

Posted on October 19, 2021

মোশাররফ হোসেন : এই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রত্যক নাগরিক তার ধর্মীয় নিয়ম নীতি অনুযায়ী স্বাধীন ভাবে ধর্ম পালন করবে, এটি তার নাগরিক অধিকার। কারণ এই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সকল মানুষের সমান অবদান রয়েছে।

এই স্বাধীন দেশে কোনো ধর্মের মানুষকে ধর্মীয় সংখ্যায় গণনা করে, সংখ্যালঘু না বানিয়ে বাংলাদেশী হিসেবে গণনা করা উচিৎ। এতে করে, সকল ধর্মের মান-মর্যাদা রক্ষা এবং সমান অধিকারসহ জাতীয় ঐক্য বজায় থাকবে।

আমি মনে করি, সংখ্যালঘু শব্দটি নিউক্লিয়ার বোমার চেয়েও মারাত্মক ক্ষতিকারক। এই শব্দ ব্যবহার করে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও এক শ্রেণীর দুষ্কৃতকারীরা সংখ্যালঘু তকমা দিয়ে, জাতিগত বৈষম্য সৃষ্টি করে, দেশের ঐতিহ্যবাহী অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। এখনই এই অপশক্তির মূল উৎপাটন করা জরুরি।

আমরা বাংলাদেশী, আমাদের মাঝে ঐতিহ্যগতভাবে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। বর্তমানে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে যেভাবে বাড়াবাড়ি চলছে। এতে করে, বহির্বিশ্বের কাছে আমাদের জাতিগত মান মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে।

কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, ঘটনায় জড়িত সুনির্দিষ্ট অপরাধীকে চিহ্নিত করে শাস্তি না দিয়ে তথা শাস্তির কথা না বলে, নির্বোধের মতো সারা দেশে যেভাবে প্রতিহিংসার আগুন ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটি কি আমাদের ধর্মীয় এবং জাতিগত শিক্ষা? মোটেই না! দালিলিক কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবেন না। তাই এই ধর্মীয় মান-মর্যাদা, মানবতাসহ জাতীয় মুল্যবোধ ক্ষুন্নের দায় আমাদেরকেই নিতে হবে। এই ভাবে যতোদিন আমরা নির্বোধ থাকবো, ততোদিন আমাদেরকে দিয়ে দেশী এবং বিদেশি শত্রুরা এই অপকর্ম করাবে।

অতএব, আমরা এখন থেকে কাউকে সংখ্যালঘু বলে জাতীয় ঐক্য নষ্ট করবো না। ধর্ম যার যার উৎসব সবার, এই কথা বলে ধর্মীয় সীমা লঙ্ঘন করবো না। 'ধর্ম যার যার জাতীয় উৎসব সবার'- এই বাক্যটিকে আমি যথার্থ বলে মনে করি। এটিই হোক আমাদের জাতীয় স্লোগান। আমরা জাতি হিসেবে প্রতিটি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম এবং থাকবো। এছাড়াও মানবতা, সভ্যতা, একতা, শৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদেরকে আমরা একযোগে ঘৃণা করবো। আমরা ধর্মীয় প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে মানবিক হবো।

উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যখন চিকিৎসা বা শিক্ষা নিতে যাই বা কঠিন কোনো বিপদে পড়ি, আর পাশে যদি অন্য ধর্মের একজন মানুষ থাকে, তখন কি তার সহযোগিতা চাই না? নাকি কখনোই চাইনি? হ্যাঁ, অবশ্যই চাই, অবশ্যই পেয়েছি, অবশ্যই চাইবো। কারণ এটি মানবিক অধিকার।

ধর্ম নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি কোরো না। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে, তোমাদের আগে যারা পথভ্রষ্ট হয়ে ও অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করে, সহজ সরল পথচ্যুত হয়েছে। তাদের পথ অবলম্বন কোরো না। ' (সুরা মায়িদা : আয়াত ৭৭) ।

লেখক : কলামিস্ট