১৮ অক্টোবর ‘শেখ রাসেল দিবস’

Posted on October 18, 2021

সম্পাদকীয় : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন আজ সোমবার (১৮ অক্টোবর)। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে পালিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকদের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা পাননি শিশু শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধুর সাথে নরপিশাচরা নির্মমভাবে তাকেও হত্যা করেছিল। মাত্র ১০ বছর ৯ মাস ২৭ দিনের স্বল্পায়ু জীবন ছিল তার।তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। আজ বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৫৮ বছর।

নির্মম রাজনীতির ষড়যন্ত্রে শেখ রাসেল তার পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভাবিসহ কী নিষ্ঠুর, অমানবিক ও পৈশাচিক হত্যাকান্ডে পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিল। পৃথিবীর জঘন্যতম ষড়যন্ত্রের ইতিহাসে এ রকম উদাহরণ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যায়। তার ৫২তম জন্মদিনে বেদনাভরা মন নিয়ে আমরা তাকে শ্রদ্ধা, আদর ও ভালোবাসায় একান্তভাবে স্মরণ করি। একটি দেশকে স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধু কী চরমভাবে তার নিজের জীবন, পরিবারবর্গের ১৮টি জীবন এবং সঙ্গে নিষ্পাপ, নিরপরাধ ও নিষ্কলঙ্ক ১০ বছরের কিশোর-শিশু শেখ রাসেলের জীবন দিয়ে চূড়ান্ত মূল্য দিয়েছেন তা পৃথিবীর চলমান ঘটনায় বিরল ও  এক নিষ্ঠুর রক্তাক্ত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

এর আগে শেখ রাসেল চিৎকার করে বলেছিলেন, আল্লাহর দোহাই আমাকে জানে মেরে ফেলবেন না। আমি আপনাদের পায়ে পড়ি, দয়া করে আপনারা আমাকে জার্মানিতে আমার হাসু আপা দুলাভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিন। কিন্তু সেদিন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র রাসেলের সেই আর্তচিৎকারে স্রষ্টার আরশ কেঁপে উঠলেও টলাতে পারেনি খুনি পাষাণদের মন।

কী প্রাণবন্ত ও হাসিখুশি ছিল রাসেল। সবার আদরের মধ্যমণি। বঙ্গবন্ধু দার্শনিক বার্টান্ড রাসেলের খুব অনুরাগী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রায়ই বঙ্গমাতাকে দার্শনিক রাসেলের লেখা থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ পড়ে শোনাতেন। তাই তাঁর ছোট ছেলের জন্ম হলে রাসেলের নামে শেখ রাসেলের নাম রাখেন। রাসেলের জন্মের পর পরই তিনি গ্রেফতার হন এবং সদ্যজাত সন্তান রেখে জেলে যান। তার বয়স যখন দেড় বছর তখন ১৯৬৬ সালের ৬ দফা প্রস্তাব দেয়ার জন্য পাকিস্তানিরা আবার শেখ মুজিবকে কারাবন্দি করে। তখন ছোট্ট রাসেল তার বাবাকে আকুল হয়ে সারা বাড়ি খুঁজতে থাকে।

রাসেলকে নিয়ে অনেক মজার ঘটনা আছে।  ছোট্ট রাসেলের ছোটবেলায় বেজায় সাহস আর সব কিছু জানার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। তাদের বাসার বুয়াকে সে খুব ভালোবাসত আর মানত। তার কোলে চড়েই রাসেল ঘুরত, খেত আর বিভিন্ন আবদার করত। তার বড় বোন হাসু আপা (শেখ হাসিনা) মাঝে-মধ্যে তার কান্নাকাটি টেপ রেকর্ডে ধরে রাখতেন। একবার কান্নার আওয়াজ টেপে বাজিয়ে দিলে তাদের মা বঙ্গমাতা দৌড়ে রান্না ফেলে রাসেলের কি হলো ও কাঁদছে কেন বলে কাছে এসে দেখেন কী কান্ড টেপে কান্নার শব্দ রাসেলের। সবাই হেসে ওঠেন খুব মজা পেয়ে।

রাসেল কবুতর ও কুকুর পুষত। টমি নামে রাসেলদের এক পোষা কুকুর ছিল। রাসেল তাকে নিয়ে খেলত। খেলতে খেলতে একদিন হঠাৎ টমি ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠলে কাঁদতে কাঁদতে রাসেল বলে, টমি আমাকে বকা দিয়েছে। এ কথা শুনে সবাই হেসে ওঠেন।

১৯৭৫ সালে জার্মানিতে অনুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়ার কাছে শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানার সাথে রাসেলেরও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাসেলের আশ্চর্য বেদনার ভাগ্যলিপি। সে সময় রাসেলের জন্ডিস হয় তাই তার আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। সে যদি তখন যেতে পারত বাংলাদেশের ইতিহাস আজ এক ৫৮ বছর বয়সী সাহসী বাঙালি আর নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্বকে পেয়ে অবশ্যই মহিমান্বিত ও উজ্জ্বল হতে পারত।

সেদিন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা শেখ রাসেলকে হত্যার মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তাদের সেই অপচেষ্টা শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। শহীদ শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভবুদ্ধিবোধ সম্পন্ন মানুষদের কাছে ভালোবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকারবঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রাম-গঞ্জ-শহর তথা বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদ-লোকালয়ে শেখ রাসেল আজ এক মানবিক সত্তায় পরিণত হয়েছে। মানবিক চেতনা সম্পন্ন সকল মানুষ শেখ রাসেলের মর্মান্তিক বিয়োগ বেদনাকে হূদয়ে ধারণ করে বাংলার প্রতিটি শিশু-কিশোর তরুণের মুখে হাসি ফোটাতে আজ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।