বন্ধ জুট স্পিনার্সের ১ বছরে ২৬৫ টাকা দর বৃদ্ধি

Posted on July 17, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্ধযুগ ধরে উৎপাদন নেই, মালিকানা দ্বন্দ্বে বছরের পর বছর ব্যবসায় লোকসান, নেই কোন অতিত কিংবা বর্তমানের লভ্যাংশ প্রদানের রেকর্ড, নগদ অর্থ সংকট ও ঋণের ভারে জর্জরিত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাট শিল্প খাতের কোম্পানি জুট স্পিনার্স লিমিটেড এখন অস্তিত্ব সংকটে । অথচ তবুও কোন কারন ছাড়াই লাফিয়ে বাঁড়ছে কোম্পানিটির শেয়ার দর। এই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পেছনে কোন চক্র কিংবা কোম্পানির অভ্যন্তরীন বড় কোন কারসাজি হচ্ছে বলে ধারনা করছেন বিনিয়োগকারিরা।

পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, ঠিক এক বছর আগেও অর্থাৎ ১৭ জুলাই ২০২২ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার ক্লোজিং প্রাইস ছিলো ১৫২.৭ টাকা । হঠাৎ ১ বছরে অর্থাৎ ১৭ জুলাই ২০২৩ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৬৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১৭.৮০ টাকায় । এছাড়া শুধুমাত্র ১ মাসের ব্যবধানে (১৮ জুন ২০২৩-১৭ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত) কোম্পানির দর বেড়েছে ৫৬.৮ টাকা ।

এখন প্রশ্ন হলো জুট স্পিনার্স এক বছরে কি এমন উন্নতি করলো যার ভিত্তিতে কোম্পানির এই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ?

১৯৮৪ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় পাট খাতের কোম্পানি জুট স্পিনার্স । অথচ তালিকাভুক্তির পর থেকে বর্তমান অবদি বিনিয়োগকারীদের কোন প্রকার লভ্যাংশ প্রদান করেনি জুট স্পিনার্স । এছাড়াও আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোম্পানিটির নেই কোন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট । প্রকাশ করেনি কোন প্রকার আর্থিক প্রতিবেদন, পিএসআই, এবং কোন নোটিশ।

যদিও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ কিংবা চালুর বিষয় এবং সকল আর্থিক বিষয়বস্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মূল্যসংবেদনশীল তথ্য। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে এ ধরনের তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেয়ারহোল্ডারদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ জুট স্পিনার্স লিমিটেড এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ না করায় কয়েক বছর ধরে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছেন বিনিয়োগকারিরা।

এতসব অনিয়মের মাঝেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে যেন বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বেড়েই চলছে কোম্পানটির শেয়ার দর । সাম্প্রতি এই দর বাড়াকে অস্বাভাবিক মনে করে জুট স্পিনার্সের কাছে কারন জানতে চেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ । জবাবে দর বাড়ার পেছনে কোন অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে ডিএসই কে জানিয়েছে এই কোম্পানি ।

এসকল বিষয়ে জুট স্পিনার্সের কোম্পানি সেক্রেটারি এ.টি.এম মোস্তফাকে জিঙ্গাসাবাদ করলে, তথ্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আছে বলে কোন তথ্যই প্রকাশ করেন নি তিনি।

এসব বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চিফ অপারেটিং অফিসার সাইফুর রহমান কর্পোরেট সংবাদকে জানান, ‘জুট স্পিনার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির অস্বাভাবিকভাবে শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়টি বিএসইসির নজরে আছে। তাই কোম্পানিটির সর্বশেষ অপারেশনাল অবস্থাও পর্যালোচনা করবে প্রতিষ্ঠানটি।’

সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি তদন্ত দল গঠন করেছে কমিশন। তদন্ত কমিটি খুলনার বিসিকে অবস্থিত কোম্পানিটির কারখানাও পরিদর্শন করবে। বিএসইসির গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির মধ্যে রয়েছে বিএসইসির পরিচালক মোঃ আবুল কালাম, সহকারী পরিচালক রেজাউন নুর মেহেদী ও মোঃ আব্দুল বাতেন ।

ডিএসইর তথ্য মতে, কোম্পানিটি সর্বশেষ এজিএম করে ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট বিশ্লেষনে দেখা যায়, কোম্পানিটি দীর্ঘদিন লসের ধারাবাহিকতায় চলছে। ২০১২ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয় ২.০৬ টাকা, ২০১৩ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লস হয় ৪৮.১৪ টাকা, ২০১৪ সালে শেয়ার প্রতি লস হয় ৪৩.৬৪ টাকা, ২০১৫ সালে শেয়ার প্রতি লস হয় ১৯.৬৯ টাকা এবং ২০১৬ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লস হয় ৪২.১০ টাকা।

২০১৩ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি এনএভি কমে ৩৯.৯০ টাকা, পর্যায়ক্রমে ২০১৪ সালে কমে ৮৩.৯২ টাকা, ২০১৫ সালে কমে ১০৫.১৮ টাকা এবং ২০১৬ সালে শেয়ার প্রতি এনএভি কমে ১৪৭.৪৪ টাকা।

ডিএসইতে প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০২৩ সমাপ্ত ৩য় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩য় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয় (১০.৮৩) টাকা, একই সময় আগের বছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিলো (১০.৮৩) টাকা। ৩য় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিলো নেগেটিভ হয়েছে (৪৭৩.৪৫) টাকা ।

কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধনের পরিমান ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৭ লাখ। তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকের ৩৯.৮২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারি ২৩.২০ শতাংশ এবং বাকি ৩৬.৯৮ শতাংশ শেয়ার সাধারন বিনিয়োগকারিদের হাতে।

কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ