চাকরির পিছনে না ছুটে এমবিএ করা দুই বন্ধু ফুটপাতের চা বিক্রিতা

Posted on January 7, 2023

বেনাপোল প্রতিনিধি : বেনাপোলের দুই বন্ধুর একজন আশিকুজ্জামান এ্যানি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন ও অপর বন্ধু রাশেদুজ্জামান রয়েল যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজ থেকে এমবিএ করেছেন। ফুটপাতে ভিন্ন উদ্যোগ চায়ের স্টল দিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছে এলাকায়।

বেনাপোলে ‘এমবিএ চা-ওয়ালা’ নামে তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়ে সাড়া ফেলেছেন স্নাতকোত্তর (এমবিএ) করা দুই বন্ধু। বেনাপোলে এই চায়ের শুরুটা হয়েছে দুই তরুণ উদ্যোক্তার হাত ধরে। ‘এমবিএ চা ওয়ালা’ নামে তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়ে সাড়া ফেলা বিশেষ ধরনের এই চায়ের স্টলের পেছনে রয়েছে রোমাঞ্চকর গল্প। ভ্রমণপিপাসু এই দুই উদ্যোক্তা জানান, তারা ইউটিউবে ভারতে তন্দুরি চায়ের একটি ভিডিও দেখেন। কেবল সেই চায়ের স্বাদ নিতে দুই বন্ধু ভারতে চলে যান। সেখানে ক’দিন অবস্থানকালে বেশ কয়েকবার চায়ের স্বাদ নেন। এরপর নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে দু’জন মিলে পরিকল্পনা করেন তন্দুরি চায়ের স্টল করার।

আশিকুজ্জামান এ্যানি বলেন, চাকরির বাজারে নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার একদমই ইচ্ছে ছিল না। দুই বন্ধুর দীর্ঘদিনের ইচ্ছে পড়াশোনা শেষ করে নিজেরা কিছু করব। সেই ইচ্ছে থেকেই আজ ছোট পরিসরে ‘এমবিএ চা ওয়ালা’ নামে তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়েছি।

নতুন হলেও বেচাবিক্রি ভাল। বিকেল থেকে রাত অবধি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তন্দুরি চা এর স্বাদ নিতে আসছেন। প্রতি ভাড়/মটকা (কাপ) চা বিক্রি করছি ৩০ টাকা। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য দামটি কমানো যায় কিনা সেটা ভাবছি।

তিনি বলেন, মাত্র ক’দিন হলো চায়ের স্টলটি শুরু করেছি তাতে বেশ সাড়া পাচ্ছি মানুষের। ভবিষ্যতে এটি আরও বড় পরিসরে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

অপর উদ্যোক্তা রাশেদুজ্জামান রয়েল বলেন, কোন কর্মই ছোট নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নিয়েছি বলে আমাকে যে কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে এমনটা না। স্বল্প পূজি নিয়েও একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় শিক্ষিত বেকারদেরকে চাকরির পেছনে না ছুটে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার আহবান জানান। সে কথা মাথায় রেখেই বন্ধু এ্যানির পরামর্শে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠা তন্দুরী চায়ের এই আইডিয়াটা গ্রহণ করি।

“তন্দুরী চা’ এর সুস্বাদু স্বাদ অত্র এলাকার মানুষের মাঝে পৌছে দিতে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তন্দুরী চা বেনাপোলসহ অত্র এলাকায় জনপ্রিয়তা পাবে।

অনার্স পড়–য়া শিক্ষার্থী রিয়াজ মাহমুদ তন্দুরি চায়ের কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। রিয়াজ বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আমি একটা ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করতাম। তরুণ উদ্যোক্তা অ্যানি ও রয়েল আমাকে তন্দুরি চা তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দিয়ে ভারত থেকে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে। সেখান থেকে ফিরে বন্দরনগরী বেনাপোল বাজারের সোনালী ব্যাংক এর পাশে পুকুরপাড় জামে-মসজিদ সংলগ্ন এই ‘এমবিএ চা ওয়ালা’ দোকানে তন্দুরি চা তৈরির কাজ শুরু করেছি।

চা তৈরীর প্রনালী সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তন্দুরি চা’ তৈরি করতে হলে আগে থেকে গরম হওয়া তন্দুরে মাটির ভাড় গুলো রাখা হচ্ছে। এরপর সেই জলন্ত ফাঁকা মাটির ভাড়ে (কাপ) অর্ধেক তৈরি হওয়া চা ঢালা হচ্ছে। ঢালার সময় বুদবুদ উঠার পরই চা তৈরি হয়ে যায়। গরম ভাড়ের এ তন্দুরি চায়ে পাওয়া যাবে ধুম্র স্বাদ-যা আপনাকে বারবার নিয়ে আসবে আমাদের কাছে।
চা পান করতে আসা আশরাফ, আনিছুর, রাসেল, মানিকসহ কয়েক ব্যক্তি জানান, তারা লোকমুখে জানতে পেরেছেন বেনাপোলের দুই যুবক স্নাতকোত্তর পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে ‘এমবিএ চা ওয়ালা’ নামে একটি তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়েছেন। তাই তারা চলে এসেছেন সেই টি স্টলের চা পান করতে।

তারা আরও জানান, চাকরির পেছনে ছুটে সময় নষ্ট না করে এই দুই যুবক ছোট পরিসরে হলেও নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে, তা তাদের খুবই ভালো লেগেছে। এমবিএ পাস করা এই যুবকদের দেখে এলাকার অন্য যুবকরাও পড়াশোনা শেষ করে নিজেরা কিছু করার চেষ্টা করবে বলে তারা মনে করেন। এছাড়া বেনাপোলে এমবিএ পাস করা দুই যুবকের এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগে সাধারণ মানুষ সাধুবাদ জানাচ্ছেন বলে তারা জানান।

সংবাদ কর্মী বকুল মাহবুব বলেন, চাকরির পেছনে ছুটে সময় নষ্ট না করে এই দুই যুবক ছোট পরিসরে হলেও নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহন করেছে তা খুবই ভালো লেগেছে। ধৈর্য ধরে কাজ করে সফল হলে এ এলাকার যুবকদের জন্য এটা একটা উদাহরণ সৃষ্টি হবে।

তন্দুরি চায়ের এ আইডিয়া ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তন্দুরি চায়ের এ পরিকল্পনা যাদের হাত ধরে এসেছে ভারতের পুনের সেই দুই চা ওয়ালা প্রমোদ বাংকার এবং অমোল রাজদের। তাদের ঠাকুমা গ্রামের বাড়ি কয়লার ওপর দুধ দিয়ে তন্দুরি চা তৈরি করতেন। সেই একই পদ্ধতিতে চা তৈরি করছেন তারা। এরাই তন্দুরি চায়ের প্রথম কারিগর।