বিশ্বের ৩৩০ কোটি মানুষ জাতীয় ঋণের সুদের বোঝায় পিষ্ট

Posted on July 14, 2023

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটি। তাদের মধ্যে আনুমানিক ৩৩০ কোটি মানুষ এমন ২২টি দেশে বসবাস করে, যেখানে শিক্ষা বা স্বাস্থ্যখাতের চেয়ে জাতীয় ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। বুধবার (১২ জুলাই) জাতিসংঘের নতুন এক রিপোর্টে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বৈশ্বিক ঋণের অবস্থা নিয়ে তৈরি ওই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভয়ংকর ঋণের বোঝার কারণে অধিকাংশ দেশ একটি উন্নয়ন বিপর্যয়ের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ প্রধান আরও বলেন, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী জাতীয় ঋণ রেকর্ড ৯ হাজার ২০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এ ঋণের সিংহভাগ নিজেদের কাঁধে নিয়েছে।

‘যেহেতু এ ধরনের ঋণ সংকট বেশিরভাগ দরিদ্র উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদ্যমান, সেহেতু বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থা একটি পদ্ধতিগত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এটি একটি মরীচিকা। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক বাজার সমস্যায় পড়ছে ও কোটি কোটি মানুষ জাতীয় ঋণের চাপে পিষ্ট হচ্ছে।’

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে বিশ্বে উচ্চ ঋণগ্রস্ত দেশের সংখ্যা ছিল ২২টি। অথচ ১০ বছরের ব্যবধানে, অর্থাৎ ২০২২ সালে এ ধরনের দেশের সংখ্যা বেড়ে ৫৯ হয়েছে। গুতেরেস বলেন, ৫২টি দেশ (উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ) বর্তমানে গুরুতর ঋণসংক্রান্ত সমস্যায় জর্জরিত।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে জাতীয় ঋণের সুদ পরিশোধে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তা সেসব দেশের শিক্ষা বা স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ের চেয়ে বেশি। চীন ছাড়া এশিয়া ও ওশেনিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো স্বাস্থ্যখাতের চেয়ে সুদের অর্থ ফেরত দিতে বেশি তহবিল বরাদ্দ দেয়।

একইভাবে, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়া অঞ্চলে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিনিয়োগের পরিবর্তে সুদের অর্থ দিতে বেশি অর্থ ব্যয় করছে। বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান জাতীয় ঋণের বোঝা দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে বাধা দিচ্ছে।

বলা হচ্ছে, এ ঋণের সিংহভাগই আসে বেসরকারি ঋণদাতাদের কাছ থেকে। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আকাশছোঁয়া সুদ হারে তা পরিশোধ করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে গুতেরেস বলেন, আফ্রিকান দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় গড়ে চারগুণ বেশি ও ধনী ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় আট গুণ বেশি হারে সুদ পরিশোধ করতে হয়।

প্রতিবেদন বলছে, জনসাধারণের ঋণ মূলত দুটি কারণের বিশাল স্তরে পৌঁছেছে। প্রথমত, করোনা পরবর্তী সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আর্থিক চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাপী যে আর্থিক কাঠামো রয়েছে, তা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অধিকতর অর্থায়নে প্রবেশাধিকার অপর্যাপ্ত ও ব্যয়বহুল করে তোলে।

জাতিসংঘের বাণিজ্য প্রধান রেবেকা গ্রিনস্প্যান ‘সরকারি ঋণ বৃদ্ধির তীব্রতা ও গতিতে’ জোর দিয়েছিলেন, যা ২০০০ সাল থেকে পাঁচগুণেরও বেশি বৃদ্ধ পেয়েছে। সরকারি ঋণ বৃদ্ধির মাত্রা ও গতি বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে।

আঞ্চলিকভাবে, ২০১০ সালে থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সরকারি ঋণের পরিমাণ প্রায় চার গুণ বেড়েছে। আফ্রিকায় তিন গুণ, ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় ২ দশমিক ৫ গুণ ও লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ১ দশমিক ৬ গুণ বেড়েছে। সূত্র: আল জাজিরা