ফোবানা সম্মেলন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলিতেছে সার্কাস

Posted on July 10, 2023

ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: উত্তর আমেরিকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিলনমেলা খ্যাত ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোশিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) সম্মেলন নিয়ে সার্কাস চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব আর প্রতিহিংসার ফলে গত ৩৬ বছরে ৬ টুকরা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের জনপ্রিয় ও মিলনমেলাখ্যাত এই ফোবানা সম্মেলন। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
প্রবাসে কর্মক্লান্ত প্রবাসীরা বিনোদন পাবার জন্য এক সময় হাজার হাজার ডলার খরচ করে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যেত ফোবানা সম্মেলনে। কিন্তু এখন ফোবানের নাম শুনলেই প্রবাসীরা নাক সিটকায়। এর মুল কারণ কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের এক ঘেয়েমিতার ফলে ফোবানা সম্মেলন আজ ৬ ভাগে বিভক্ত হয়েছে। তবে সংবিধান মোতাবেক মূল ফোবানা একটিই আর বাকিগুলো নকল বা প্রশাখা বলে থাকেন প্রবাসীরা।

মূল ফোবানার সংবিধান অনুযায়ী কোন অঙ্গরাজ্যের কোন সংগঠন ফোবানা সম্মেলন করবে তা বাৎসরিক সাধারন সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২ বছর আগেই তা ঘোষনা করা হয়ে থাকে। স্বল্প সময়ে ঘোষনাকৃত ফোবানা সম্মেলনকে নকল বা ভুয়া সম্মেলন বলে মনে করা হয়। সেই মোতাবেক এ বছর (২০২৩ সালে) টেক্সাসের ডালাসে এবং আগামী ২০২৪ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হবে ৩৭ ও ৩৮তম ফোবানা সম্মেলন। যা সংবিধান অনুযায়ী ২ বছর পূর্বেই ঘোষনা করা হয়েছিল। গত ২০২১ সালে ফোবানার বাৎসরিক বছর সাধারন সভায় ২০২৩ সালের ৩৭তম ফোবানা সম্মেলনের হোষ্ট কমিটি নির্বাচিত করা হয় বাংলাদেশ অ্যাসোশিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস (বান্ট)। ঘোষনা মোতাবেক এবারের ৩৭তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে টেক্সাসের ডালাস শহরে। গত বছর ২০২২ সালের ফোবানার বাৎসরিক বছর সাধারন সভায় আগামী ২০২৪ সালে ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের হোষ্ট কমিটি নির্বাচন করা হয়। ৩৮তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ওয়াশিংটন ডিসিতে। এ সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়াশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বাগডিসি)। গত ৪ সেপ্টেম্বর শিকাগোর স্কোকি শহরের ডাবল ট্রি হিলটন হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত ফোবানার ২০২২-এর বাৎসরিক সাধারন সভায় নির্বাচনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আগামী ২০২৩ সালের ৩৭তম ডালাসে অনুষ্ঠিতব্য ফোবানা সম্মেলন সফল করতে হোষ্ট কমিটির পক্ষ থেকে আহবায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোশিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস (বান্ট) এর সভাপতি হাসমত মোবিন এবং আগামী ২০২৪ সালের ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের হোষ্ট কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত আহবায়ক রোকসানা পারভীন।

এদিকে নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক ফোবানার প্রশাখাগুলোও ভেঙ্গে ৫ টুকরা হয়েছে। অন্য একটি ফোবানা সম্মেলনের চেয়ারম্যান ছিলেন গিয়াস আহমেদ, শাহ নেওয়াজ, আলী ইমাম, এজাজ তৌফিক, মোহাম্মদ হোসেন, ফিরোজ, কাজি আজম, ডা. মাসুদুর রহমান ও শরাফত হোসেন বাবুদের নেতৃত্বাধীন অংশটি। কিন্তু তা এখন কার্যত ৩ ভাগে বিভক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। শরাফত হোসেন বাবু (গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল) ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে আসন্ন সেপ্টেম্বরে ফোবানা সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন। শাহ নেওয়াজ, আলী ইমাম শিকদার ও কাজি আজমরা নতুন একটি স্টেয়ারিং কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর গিয়াস আহমেদ ও ডা. মাসুদুর রহমানরা এক সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা কমিটি প্রকাশ করেছেন। তবে এ অংশের মেম্বার সেক্রেটারি হিসেবে তারা এখনও শাহ নেওয়াজকে উল্লেখ করলেও শিগগির তা পরিবর্তন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছেন। শাহ নেওয়াজ ও গিয়াস আহমদের নেতৃত্বাধীন উভয় অংশই পৃথক পৃথকভাবে ফোবানা সম্মেলন করবেন কানাডার টরেন্টো শহরে একই দিনে। তাদের এহেন কর্মকান্ডে উত্তর আমেরিকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা প্রবাসীরা।

টরেন্টো ফোবানা অনুষ্ঠানের (শাহ নেওয়াজ) জন্য আবুল আজাদ আহবায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া চেয়াম্যান ও নজরুল ইসলাম মিন্টু প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৮ জুলাই রোববার কানাডার টরেন্টো শহরের ড্যানফোর্থস্থ আলমানী রেষ্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশি কানাডিয়ান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক আবুল আজাদের পরিচালনায় এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির এক্সিকিউটিভ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, সহ-সভাপতি কাজি আজম, সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন খান ও সদস্য নিশান রহিম। সভায় স্টিয়ারিং কমিটি টরেন্টো শহরে ৩৭তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য আহবায়ক আবুল আজাদাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি হস্তান্তর করেন এক্সিকিউটিভ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ।

মত বিনিময় সভায় আরও অংশ নেন ১৪তম ফোবানার আহবায়ক মাহবুব রব চৌধুরী, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.জসিম উদ্দীন আহমেদ, বাবুল চৌধুরী, এডভোকেট অদিয়া বেগম,মার্জিয়া হক ও শহিদুল হক। উল্লেখ্য আগামী ১-৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ টরোন্টো শহরে ৩৭ ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

ফোবানা অপর অংশের সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ ব্যাড এলিমেন্টদের ফোবানা থেকে বের করে দেবার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদের মধ্যে আলী ইমাম শিকদার ও কাজি আজম রয়েছেন। সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি ফোবানা নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের বিভিন্ন ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরেন।

এক প্রশ্নের জবাবে গিয়াস আহমেদ বলেন, স্টিয়ারিং কমিটির এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি শাহ নেওয়াজ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেন। তিনি মোহাম্মদ হোসেন, কাজি আজম ও আলী ইমামদের হাতে বন্দি, তাদের পরামর্শ ছাড়া এক পা ফেলারও সাধ্য নেই তার। এ ৩ জনের কারনেই ফোবানা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। শাহ ওেয়াজ গাডর্স নিয়ে কাজ করতে পারেন না। ১-৩ সেপ্টেম্বর কানাডার টরেন্টো শহরের শেরাটন হোটেলে আরেকটি ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এটির সাথে শাহ নেওয়াজদের সম্মেলনের কোন সম্পর্ক নেই।

গত শনিবার (৮ জুলাই) জ্যাকসন হাইটস্থ নবান্ন পার্টি সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডা. মাসুদুর রহমান, তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দ এনায়েত আলী, এলিন রহমান, মফিজ ভূইয়া ও শাহাদত হোসেন রাজু।

সংবাদ সম্মেলনে গিয়াস আহমেদ বলেন, শাহ নেওয়াজদের সাথে মিলে যাওয়ার এখনও সম্ভাবনা রয়েছে। সবশেষে টরেন্টোতে একটি ফোবানা হলেও হতে পারে।

এদিকে আতিকুর রহমান, জাকারিয়া চৌধুরী, বেদারুল ইসলাম বাবলা ও শাহেদা শিকদার হাই এর নেতৃত্বাধীন অংশের ফোবানা হবে কানাডার মনিট্রয়লে। টেক্সাসের ডালাসে অনুষ্ঠিত হবে আহসান চৌধুরী, নাহিদ খান, হাসমত মোবিন ও শামসুদ্দোহা সাগরদের নেতৃত্বাধীন অংশের। সবগুলো ফোবানা সম্মেলনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১-৩ সেপ্টেম্বর লেবার ডে সপ্তাহান্তে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশিদের মিলনমেলাকে উদ্দেশ্য করেই ১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিলো ফোবানা সম্মেলনের। বিভিন্ন শহরে থাকা বন্ধুদের সাথে বছরে একটিবার দেখা হবে নতুন কোন শহরে, যেখানে থাকবে বিভিন্ন শহরের সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোর সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন, বন্ধুত্বের সম্মিলন। এরপর কখনো কোনো সম্মেলনে এলে (অবশ্যই মূল ফোবানা সম্মেলন, নকল বা ভুয়া সম্মেলন নয়) সম্মেলনের ৩দিনেই মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান ছাড়াও সারাদিন ব্যাপী চলে আরো ৩০টি বেশি নানা আয়োজন।