ফ্রান্সে মেয়রের বাড়িতে ভাঙচুর-আগুন, গ্রেফতার আরও ৭১৯

Posted on July 3, 2023

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নাহেল এমেরের মৃত্যু নিয়ে ফ্রান্সে পঞ্চম দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে। এরমধ্যে শনিবার (১ জুন) রাতে রাজধানী প্যারিসের এক মেয়রের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষোভকারীরা। এদিকে, ভাঙচুর ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে একই রাতে প্যারিসসহ পুরো ফ্রান্স থেকে ৭১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিএনএন বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা শনিবার রাত দেড়টার দিকে প্যারিসের উপশহর লিলেস রোজেসের মেয়র ও রক্ষণশীল দল লেস রিপাবলিকান পার্টির নেতা ভিনসেন্ট জিনব্রানের বাসভবনে হামলা চালায়। এসময় তারা বাইরে রাখা মেয়রের গাড়ি ভাঙচুর ও বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

ভিনসেন্ট জিনব্রান সে সময় জরুরি বৈঠকের জন্য বাড়ির বাইরে অবস্থান করছিলেন। তিনি বলেন, বাড়িতে দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন আমার স্ত্রী। রাত দেড়টার দিকে একদল বিক্ষোভকারী বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে।

রোববার (২ জুলাই) এক বিবৃতিতে ভিনসেন্ট জিনব্রান বলেন, বিক্ষোভকারীরা চরম কাপুরুষতা দেখিয়েছে। গতকাল আমি জরুরি এক বৈঠকে বাড়ির বাইরে ছিলাম। এই সুযোগে রাত দেড়টার দিকে একদল লোক আমার বাড়ির গেট ভেঙে ঢুকে প্রথমে গাড়ি ভাঙচুর ও পরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আমার স্ত্রী তখন আমাদের দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন।

‘জীবন বাঁচাতে আমার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আহত হন। আমাদের এক সন্তানও আহত হয়েছে।’ বিবিসি বলছে, মেয়রের স্ত্রীর একটি পা ভেঙে গেছে।

গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) প্যারিসের উপশহর নানতেরে ট্রাফিক আইন অমান্যের অভিযোগে আলজেরীয় বংশোদ্ভুত মুসলিম কিশোর নাহেল এমেরকে (১৭) গাড়ি থামাতে বলেছিল পুলিশ। কিন্তু নির্দেশ না মানায় নাহেলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন এক পুলিশ সদস্য। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নাহেল।

নাহেলের মৃত্যুর পর থেকেই নানতেরে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। সেদিন বিকেলের দিকে নাহেলের মা মৌনিয়া এক ভিডিওতে তার ছেলেকে হত্যাকারী পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করেন, যা ফ্রান্সের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তারপর থেকেই বিক্ষোভ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

মঙ্গলবার শুরু হওয়া সেই বিক্ষোভ এরই মধ্যে দাঙ্গায় পরিণত হয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ দিনে বিক্ষোভকারীরা ফ্রান্সের অন্তত ১০টি শপিং মল, ২০০ সুপারমার্কেট, ২৫০টি তামাকজাত পণ্যের দোকান, ২৫০টি ব্যাংক ও শত শত সরকারি ভবনে হামলা-ভাঙচুর ও লুটাপাট চালিয়েছে।

শনিবার (১ জুলাই) রাতজুড়ে পুলিশের ওপর হামলা, নাশকতা ও লুটপাটের অভিযোগে রাজধানী প্যারিস ও অন্যান্য শহর থেকে মোট ৭১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগের দিন শুক্রবার প্রায় ১ হাজার ৩০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে ৪৫ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। সাঁজোয়া যান ও হেলিকপ্টার টহলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাটসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে উসকানিমূলক ভিডিও ও সংবাদ প্রকাশ না করারও আহ্বান জানানো হয়েছে। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন