মহান স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী

Posted on March 26, 2021

সম্পাদকীয় : আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ। সবুজ জমিনে রক্তিম সূর্যখচিত মানচিত্রের এ দেশটির স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী আজ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এদিনটি বাংলাদেশের স্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছরও। এবার তাই উদযাপনেও যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা।

বিজয় অর্জনের পর ৫০ বছরের পথচলায় দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। একাত্তরে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বতন্ত্র দেশ পেয়েছি, আর তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে তুলতে চলেছি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

এর সাথে যোগ হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জাতিসংঘের চুড়ান্ত সুপারিশ। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা যোগ্যতা নির্ধারণের তিনটি সূচকের ২০১৮ ও ২০২১ সালের মূল্যায়নে মান অর্জন করায় এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ পায় বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সম্প্রতি এ সুপারিশ করেছে।
বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের সুপারিশ করার এই ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সফল অর্থনীতি হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রাপ্তি নিয়েই এবার জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ২০২১ সালে স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। এই মহান উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে, আমরা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত এবং একটি মর্যাদা সম্পন্ন জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যাতে কেউ আমাদেরকে দরিদ্র ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ হিসেবে উল্লেখ করে অবহেলা করতে না পারে।’

বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এ অনুষ্ঠান। বিদ্যমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশী অতিথিরা অংশগ্রহণ করেছেন। ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্, ১৯ মার্চ অনুষ্ঠানে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ২২ মার্চ অনুষ্ঠানে নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী , ২৪ মার্চ অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং উপস্থিত ছিলেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতি মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালীদের উপর অতর্কিত হামলা চালালে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এদিকে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।

সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

‘বিশাল রক্তের স্রোত আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে আমারা স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করা ৩০ লাখ বীর শহীদ যারা আমাদের লাল-সবুজের পতাকা উপহার দিয়েছেন সশ্রদ্ধ সালাম সেই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। জীবনবাজী রেখে তারা লড়াই করেছেন আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম বাঙালির জীবনে এক অবিনশ্বর চেতনা। মহান স্বাধীনতা বাঙালীর শ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৯৭১ সালের গৌরবোজ্জল উত্তাল দিনগুলো আমাদের আজীবন পথ দেখাবে। মুক্তিযুদ্ধ আজীবন সুখী ও সমৃদ্ধশালী নতুন বাংলাদেশ গড়তে অনুপ্রেরণা যোগাবে।