মো: মিজানুর রহমান, এফসিএস : সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড কোম্পানিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাদের কেউই কর্পোরেট প্রফেশনের সাথে যুক্ত নয়। তাদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবার কেউ অবসর প্রাপ্ত সরকারী আমলা।
জানা গেছে, এই সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালকের পাশাপাশি ৫ জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক দায়িত্ব পালন করবেন। নিয়োগপ্রাপ্ত সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন- মেজবাহ উদ্দিন, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ড. মোহাম্মদ সগীর হোসেন খন্দকার, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ড. মো. ফিরোজ আলী, ইসতাক আহমেদ শিমুল ও আব্দুর রাজ্জাক। এর মধ্যে মেজবাহ উদ্দিন কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
বিদেশি মালিকানাধীন একটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরপরই সেখানে দেখা দেয় নানা ধরনের বিড়ম্বনা, আর্থিক কেলেঙ্কারি, কর্মি ছাটাই, দফায় দফায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে পরিচালকদের বিদেশে অবস্থান সহ নানা অভিযোগ আমলে নিয়ে বিএসইসি সেখানে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। যা বিএসইসি কমিশনের সামগ্রিক সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিশেষভাবে লক্ষনীয় যে, বিএসইসি বাংলাদেশের ৩টি কর্পোরেট প্রফেশন সিএ, সিএমএ ও সিএস ইনস্টিটিউটের কোন সিনিয়র সদস্যকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেননি। বাংলাদেশে এই তিনটি প্রফেশনই কর্পোরেট সেক্টরে নানাভাবে সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি পাবলিক লিমিটেড, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি তথা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পেশাদারিত্বের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে অথচ বিএসইসি এই বিষয়টিকে আমলে নেয়নি, যা কিনা গুরুত্বসহকারে আমলে নেওয়া উচিত ছিল।
এখানে উল্লেখ্য যে, আগের ১০ বছরের শেষের দিকে কমিশনের সদস্যরা বিদায় নেওয়ার আগে স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি প্যানেল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। তারা ১০ বছর বিএসইসির কমিশনে থাকার পরে বুঝলেন যে, পুঁজিবাজার স্বাভাবিক রাখতে হলে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে গুড গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি প্যানেল থাকা দরকার। কিন্তু গত প্রায় ১ বছরে লক্ষনীয় যে, বিএসইসির নতুন কমিশন আগের কমিশনের ঐ সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোন কথা বলছেন না, ফলে স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি প্যানেল গঠনের বিষয়টি এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়ে গেছে। তাই বর্তমান কমিশনের আবার কয় বছর লাগে স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি প্যানেল প্রতিষ্ঠা করতে তাই এখন দেখার বিষয়।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আগের ১০ বছরের কমিশন ২০১৮ সালে কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড (সিজিসি) ২০১৮-তে এ সকল প্রতিষ্ঠানে সিএফও, সিএস ও হেড অফ ইন্টারনাল অডিট নিয়োগে প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য বাধ্যতামুলক করে দেয়। কিন্তু সিজিসিতে ঐ তিন পজিশনের জন্য কোন পেশাদারিত্বের বা কোন প্রফেশনাল বডির সদস্য হওয়াকে বাধ্যতামুলক করে দেননি, যার ফলে অধিকাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানিতেই ঐ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে সিএ, সিএমএ ও সিএস ইনস্টিটিউটের কোন পেশাদার তালিকাভুক্ত সদস্য নিয়োগ পাচ্ছেন না। অধিকাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানিতেই প্রফেশনের বাইরের লোক বা পার্ট কোয়ালিফাইড সিএ, সিএমএ ও সিএস স্টুডেন্টদের ঐ সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে কম বেতনে নিয়োগ দিচ্ছেন। যার ফলে আগের কমিশনের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি সঠিক না হওয়ার কারণে সকল পর্যায়ে পেশাজীবি সংগঠনের সদস্যদের কাজের সুযোগ তৈরী হচ্ছে না ফলে কাজের কোয়ালিটিও মানসম্মত হচ্ছে না। সুতরাং নতুন কমিশন যদি সিজিসি ২০১৮ সংশোধনের মাধ্যমে সিএফও, সিএস ও হেড অফ ইন্টারনাল অডিট পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সিএ, সিএমএ ও সিএস প্রফেশনের জন্য নিদির্ষ্ট করে দেন তাহলে প্রত্যেক তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে পেশাদারিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারে।
অন্যদিকে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ফাইনান্সিয়াল অডিট করার জন্য বিএসইসির একটি স্বতন্ত্র প্যানেল থাকলেও কমপ্লায়েন্স অডিটের ক্ষেত্রে কোন স্বতন্ত্র প্যানেল নেই। ফলে ফাইনান্সিয়াল অডিটে যেমন জবাবদিহিতার জায়গা তৈরী হয়েছে তেমনটি লিস্টেড কোম্পানির কমপ্লায়েন্স অডিটের ক্ষেত্রে নেই। সুতরাং বিএসইসির আগের কমিশন এ বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেও নতুন কমিশনকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কমপ্লায়েন্স অডিটের জন্য স্বতন্ত্র কমপ্লায়েন্স অডিটরস প্যানেল করে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।কারন কমপ্লায়েন্স অডিটরস প্যানেল না থাকায় একই প্রফেশনাল বা আর্টিসান সিএ ফার্মের মত একই ফার্ম ফাইনান্সিয়াল অডিট ও কমপ্লায়েন্স অডিট করে প্রফেশনকে এবং প্রফেশনালদেরকে লজ্জায় ফেলছেন। সুতরাং ভবিষ্যতে যেন আর কখনও আর্টিসান সিএ ফার্মের মত অন্য কোন সিএ ফার্মকে বিএসইসি থেকে নোটিশ ও জরিমানার সম্মুখীন হতে না হয়। সে জন্যই কমপ্লায়েন্স অডিটের জন্য সিএস প্রফেশনের পেশাদার ফার্ম দ্বারা কমপ্লায়েন্স অডিটের জন্য একটি স্বতন্ত্র কমপ্লায়েন্স অডিটরস প্যানেল হওয়া খুবই জরুরি এবং অত্যাবশ্যক।এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে আইসিএসবির বর্তমান কাউন্সিলেরও উচিত বিএসইসির নতুন কমিশনের সাথে আলোচনায় বসে বিএসইসিকে তার গুরুত্ব বুঝানো। এবং বিএসইসিকেও বিষয়টি আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। কমপ্লায়েন্স অডিটের স্বতন্ত্র প্যানেল হলে বা ৩ প্রফেশনের একটি প্রফেশনকে নির্দিষ্ট করে দিলে সিএস প্রফেশনেও প্রেকটিসিং ফার্মের সংখ্যা বেড়ে যাবে।
শেষ কথা হলো কোম্পানি আইনে আলোচ্য বিষয়ে কোন কিছু পরিষ্কার বলা না থাকলেও বিএসইসির বর্তমান কমিশন ও কমিশনের ডায়নামিক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইডিআরএ কেও কাজের মান ও কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে মান সম্পন্ন কাজের জন্য সিএ, সিএমএ ও সিএস প্রফেশনের লোকদেরকে কোম্পানিগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। একইভাবে ডিএসই এবং সিএসইও কমপ্লায়েন্স অডিটের জন্য স্বতন্ত্র প্যানেল বা সিএস প্রফেশনকে বাধ্যতামূলক করে দিতে পারে। পাশাপাশি সিএফও, সিএস ও হেড অফ ইন্টারনাল অডিট নিয়োগের ক্ষেত্রেও ৩টি প্রফেশনাল বডিকে আলাদা করে দিতে পারেন যা আমাদের পাশের দেশ ভারতে বিদ্যমান রয়েছে।
লেখক : কর্পোরেট গভর্নেন্স প্রফেশনাল ও সম্পাদক কর্পোরেট সংবাদ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
রিং শাইনে স্বতন্ত্র পরিচালকদের কেউ সিএ, সিএমএ ও সিএস প্রফেশনের নয়, কেন ? https://corporatesangbad.com/339094/ |